নাসিরউদ্দিন শাহের পাশে কলকাতা
ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলে সমালোচনার শিকার বলিউড অভিনেতা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন শাহের পাশে দাঁড়িয়েছে কলকাতার বুদ্ধিজীবী সমাজ। গতকাল শনিবার বিবৃতি দিয়ে এসব বুদ্ধিজীবী নাসিরের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন।
কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও বিভেদের রাজনীতি যেভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে, তাতে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন নাসিরউদ্দিন শাহ। তিনি বলেছিলেন, সন্তানদের তিনি বিশেষ কোনো ধর্মাচরণের শিক্ষা দেননি। তাঁর বক্তব্য দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে উত্তর প্রদেশের বুলন্দ শহরের ঘটনা, সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ৬৮ বছরের অভিনেতাকে কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর সমালোচনা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রবল আক্রমণ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তিনি দেশদ্রোহী। পোড়ানো হচ্ছে তাঁর কুশপুতুল। বিজেপির এক বিধায়ক মনে করিয়ে দিয়েছেন, নব্বইয়ের দশকে ‘সরফরাশ’ ছবিতে নাসির অভিনয় করেছিলেন পাকিস্তানের গুপ্তচরের চরিত্রে। এখন আবার সেই চরিত্রেই ঢুকে পড়েছেন তিনি। এমনকি নাসিরের ছেলে ইমদাদউদ্দিনের নামের অর্থ (‘পিলার অব ফেইথ’) খুঁজে বের করে সেই নামকরণকে ‘ইসলামের প্রতি বিশ্বাস’ বলে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বলিউডে নাসিরের সহকর্মীরা কেউই তাঁর সমর্থনে মুখ খোলেননি। বরং অনুপম খেরের মতো অভিনেতা নাসিরউদ্দিনকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলিউড নাসিরউদ্দিনের পাশে না দাঁড়ালেও কলকাতা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। নাসিরউদ্দিনের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে দাঁড়িয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়সহ কলকাতার নাট্যব্যক্তিত্বরা।
গতকাল এক বিবৃতিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, চন্দন সেন, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক মুখোপাধ্যায়, দিলীপ চক্রবর্তী, কৌশিক সেন প্রমুখ বলেছেন, বিভেদ ও অশান্তির বিরুদ্ধে নাসিরউদ্দিনের বলিষ্ঠ কণ্ঠ বারবার দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছে। আজ যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসিত ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন, তাঁদের লক্ষ্য ধর্মের নামে রাজনীতি করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি। দেশকে বিভেদ আর দাঙ্গার অশান্তিতে জ্বালিয়ে–পুড়িয়ে তাঁরা দেশের শত্রুদের হাত শক্ত করতে চান। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রিয় সুহৃদের অবমাননার ধিক্কার জানান তাঁরা।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি অবশ্য বলেছেন, নাসিরের ভাবাবেগ প্রকাশে দোষ নেই। শব্দচয়নে ত্রুটি হওয়ায় তাঁকে ভুল বোঝা হচ্ছে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। ভারতের ডিএনএতে সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতি আছে। পরিস্থিতি যা–ই হোক, কেউ সেই ঐতিহ্য ধ্বংস করতে পারেনি।