নওয়াজউদ্দিনকে নির্দোষ বলছেন স্ত্রী!
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি নওয়াজ মামলা করছেন না। গতকাল রোববার সকালে মুজাফ্ফরনগরে নওয়াজউদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয় তা। এবার জানা গেছে, স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন অঞ্জলি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘কিছুদিন ধরে আমার আর নওয়াজ সম্পর্কে নানা কথা সংবাদমাধ্যমে দেখছি। তাতে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ থেকে শুরু করে পারিবারিক বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসছে। আরও শুনছি, আমরা নাকি একসঙ্গে থাকছি না। তবে এবার যে খবরটি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে নওয়াজ আর আমি দুজনই হতবাক! বাধ্য হয়ে এবার আমাকে মুখ খুলতে হচ্ছে। আমার ফোনকলসের ওপর নওয়াজের নজরদারি চালানোর যে খবর এসেছে, শিগগিরই এর সত্যতা জানা যাবে। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, নওয়াজের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি সেলিব্রিটি, তাই তাঁকে টার্গেট করা হচ্ছে।’
স্ত্রী অঞ্জলি নওয়াজের পেছনে নাকি গোয়েন্দা নিয়োগ করেছিলেন বলিউডের অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। স্ত্রীর ফোনকলের বিস্তারিত চেয়েছিলেন সেই গোয়েন্দার কাছ থেকে। এ ছাড়া এই গোয়েন্দার মাধ্যমে স্ত্রীর ওপর নজরদারি চালান। স্ত্রী কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে দেখা করছেন—এসব তথ্য রেকর্ড-প্রমাণসহ নিয়েছেন ব্যক্তিগতভাবে নিযুক্ত সেই গোয়েন্দার কাছ থেকে। আর এসব তথ্য পুলিশ জানতে পেরেছে গোয়েন্দাদের কাছ থেকে। সম্প্রতি থানে পুলিশের অপরাধ দমন শাখা ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ব্যক্তিগতভাবে নিযুক্ত গোয়েন্দা। গ্রেপ্তার হওয়া আইনজীবী রিজওয়ান সিদ্দিকি, প্রাইভেট ডিটেকটিভ প্রশান্ত কালেকর আর নারী গোয়েন্দা রজনী পণ্ডিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি তাঁদের এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম লিখেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করার জন্য নওয়াজউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নেয় মুম্বাই পুলিশের অপরাধ দমন বিভাগ। এর আগে তিনবার তাঁকে অপরাধ দমন বিভাগে যোগাযোগ করার জন্য ডাকা হয়। কিন্তু নওয়াজউদ্দিন সেখানে যাননি। গত শুক্রবার থানে পুলিশ জানিয়েছে, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির বিরুদ্ধে সমন পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, বেআইনিভাবে ফোনকলের তথ্য বিক্রির জন্য গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন ৩০ থেকে ৫০ হাজার রুপি পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। আর এই চক্র ব্যক্তিগতভাবে নিযুক্ত গোয়েন্দাদের কথামতো কাজ করে।
এদিকে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি তাঁর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেছেন। গত শনিবার বিকেলে টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘শুক্রবার রাতে আমি আমার মেয়ে স্কুলের হাইড্রোলিক পাওয়ার জেনারেটরের প্রজেক্ট তৈরিতে সাহায্য করছিলাম। আজ সকালে মেয়ের প্রোজেক্ট প্রেজেন্টেশন দেখতে ওর স্কুলে গিয়েছি। তারপর এই ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যম আমাকে প্রশ্ন করেছে। সব শুনে আমি অবাক! বিরক্তিকর।’
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির ভাই ফয়েজউদ্দিন সিদ্দিকি জানিয়েছেন, গতকাল সকাল পর্যন্ত থানে পুলিশের কাছ থেকে তাঁরা কোনো সমন পাননি। নওয়াজউদ্দিন আর তাঁর স্ত্রী একসঙ্গে আছেন।
সংবাদমাধ্যম থেকে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে কল দেওয়া হলেও তাঁর ব্যবস্থাপক অনুপ পান্ডে তা রিসিভ করেন। তিনি জানান, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি এখানে নেই। মেয়ের স্কুলের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর তিনি জয়সালমির চলে গেছেন।
এর আগে গত বছর অক্টোবরে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির আত্মজীবনী ‘অ্যান অর্ডিনারি লাইফ: এ মেমোয়ার’ অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার ছয় দিনের মাথায় তা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন লেখক নিজেই। লেখকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আত্মজীবনীতে মিথ্যাচার করেছেন। আর এই অভিযোগ করেছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির সাবেক দুই প্রেমিকা নীহারিকা সিং ও সুনিতা রাজওয়ার। তাঁদের অভিযোগ, বইয়ের কাটতি বাড়ানোর জন্য জীবনের গল্পগুলোয় রং-মসলা মাখিয়েছেন নওয়াজউদ্দিন। নীহারিকা সিংয়ের পক্ষে আইনজীবী গৌতম গুলাটি ভারতের জাতীয় নারী কমিশনে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
এরপর ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে নওয়াজউদ্দিন লেখেন, ‘আমার স্মৃতিকথা ঘিরে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে এবং এই বইয়ের বিভিন্ন তথ্য যাঁদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, আমি তাঁদের সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আর এ কারণে আমি আত্মজীবনীটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’