তারকাদের ঘরে করোনার হানা
>সুরক্ষিত জীবন যাপন করেন অভিনয়জগতের তারকারা। তাঁরা সচেতনতার বার্তা দেন, সাধারণ জনগণকে নিরাপদে থাকার অনুরোধ করেন। কিন্তু আজ তাঁদের ঘরেই ঢুকে পড়েছে করোনাভাইরাস। টলিউড ও বলিউডের বেশ কিছু তারকা বা তাঁদের বাসার কর্মীরা আজ করোনায় আক্রান্ত। লিখেছেন দেবারতি ভট্টাচার্য।
বচ্চন পরিবার
বলিউডের ‘শাহেনশাহ’ অমিতাভ বচ্চনের করোনায় আক্রান্তের খবর শুরুতে কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না। পরে বিগ বি নিজে টুইট করে খবরটি নিশ্চিত করেন। ভারতে লকডাউনের শুরু থেকে নিজেকে পুরোপুরি গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন অমিতাভ। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সবাইকে ক্ষণে ক্ষণে দিয়েছেন লকডাউন পালনের বার্তা। ‘করোনা’ মহামারি নিয়ে কবিতাও লিখেছিলেন তিনি। করোনাকালে নানাভাবে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এসব কাজই করেছেন বাড়িতে বসে। এরপরও করোনা থেকে রেহাই পেলেন না বিগ বি।
অমিতাভের পরপরই ছেলে অভিষেকের সংক্রমণের খবর প্রকাশ পায়। মুম্বাইয়ের নানাবতী হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি করা হয়।
করোনার গ্রাস থেকে রেহাই পায়নি বচ্চন পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য আরাধ্য। সেই সঙ্গে আক্রান্ত ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনও। এখনো সুরক্ষিত আছেন জয়া বচ্চন, বচ্চনকন্যা শ্বেতা নন্দা ও তাঁর ছেলে অগস্ত্য। জানা গেছে, কিছুদিন আগে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের ডাবিং করার জন্য পারিবারিক ডাবিং স্টুডিওতে গিয়েছিলেন অভিষেক বচ্চন। স্টুডিওটি তাঁদের বাংলো জলসার কাছেই ছিল। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেখান থেকেই সংক্রমিত হন অভিষেক। আর এভাবেই বচ্চন পরিবারে ছড়িয়েছে সংক্রমণ। জলসা, প্রতীক্ষা, জনক—বচ্চন পরিবারের তিনটি বাংলোতেই এখন চলাচল নিষিদ্ধ। বচ্চন পরিবারের ২৬ জন কর্মীর করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। গত কদিনে অমিতাভ ও অভিষেকের সংস্পর্শে এসেছিলেন ৫৪ জন। তাঁদের প্রত্যেকের রিপোর্টও নেগেটিভ এসেছে।
মল্লিক পরিবার
টলিউডের মল্লিক পরিবারেও হানা দিয়েছে করোনা। একসঙ্গে অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক ও তাঁর স্ত্রী দীপা মল্লিক, মেয়ে অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক, তাঁর স্বামী নিশপাল রানে করোনায় আক্রান্ত। মাত্র দুই মাস আগে শিশুপুত্রের জন্ম দিয়েছেন কোয়েল। তাই সবার চিন্তা ছিল পরিবারের সবচেয়ে খুদে সদস্যকে নিয়ে। তবে কোয়েল নিজে টুইট করে জানিয়েছেন, তাঁর মা–বাবা ও স্বামী নিশপাল রানের কোভিড-১৯ পজিটিভ। তাঁরা নিজ বাসায় কোয়ারেন্টিনে আছেন।
খের পরিবার
অনুপম খের টুইটার অ্যাকাউন্টে এক ভিডিও দিয়ে জানান, তাঁর মা দুলারি খের, ভাই রাজু খের, ভাইয়ের স্ত্রী ও ভাইজি করোনায় আক্রান্ত। তবে অনুপম খেরের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। অনুপম খেরের মা ছোট ছেলে রাজু খেরের বাড়িতে ছিলেন। অনুপম ভিডিওতে জানিয়েছেন যে তাঁর মায়ের বেশ কদিন ধরে খাবারের প্রতি অনীহা হয়েছিল। তিনি কিছু মুখেই তুলছিলেন না। তাই মায়ের করোনা পরীক্ষা করান অনুপম।
পুরব কোহলি
লন্ডনে সপরিবারের থাকেন বলিউডের অভিনেতা পুরব কোহলি। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে পুরব, তাঁর স্ত্রী লুসি, মেয়ে ইনায়া ও ওশিয়ান করোনায় আক্রান্ত হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরব নিজে করোনায় সংক্রমণের খবরটি প্রকাশ করেছিলেন। পুরব এ–ও জানিয়েছিলেন যে ঘরোয়া এবং ভেষজ চিকিৎসার সাহায্যে তিনি এবং তাঁর পরিবার সম্পূর্ণ করোনামুক্ত হয়েছেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে নিজের করোনামুক্তির খবর সবাইকে জানান এই ‘রক–অন’ তারকা।
আমির খান
আমির খানের বান্দ্রার বাসাতে করোনা থাবা বসিয়েছিল। কিন্তু তাঁর পরিবার অবশ্য করোনার গ্রাসে পড়েনি। আমির জানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়ির কয়েকজন কর্মচারীর শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া গেছে। তাঁরা প্রত্যেকে কোয়ারেন্টিনে আছেন। এই বলিউড সুপারস্টার জানান, তাঁর এবং পরিবারের সবার কোভিড-১৯ টেস্ট করা হলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
বনি কাপুর
চিত্রনির্মাতা বনি কাপুরের আন্ধেরির ফ্ল্যাটেও ঢুকে পড়েছিল করোনা। এই ফ্ল্যাটে তিনি তাঁর দুই মেয়ে খুশি ও জাহ্নবীকে নিয়ে থাকেন। বনি জানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়ির তিন কর্মী করোনায় সংক্রমিত। তাই শুরুতে মেয়েদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন এই ভারতীয় প্রযোজক। সবাই করোনার পরীক্ষা করান এবং রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। ১৪ দিন পর বনি কাপুর কোয়ারেন্টিনে থাকা ৩ কর্মচারীর করোনামুক্তির খবরও সবাইকে জানিয়েছিলেন।
রেখা
মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকার সি স্প্রিংসে বাংলোতে থাকেন বলিউডের প্রভাবশালী অভিনেত্রী রেখা। তাঁর সঙ্গে থাকেন ম্যানেজার ফারজানা ও আরও কয়েকজন কর্মী। রেখার বাসাতেও করোনার ছায়া পড়েছে। তাঁর বাংলোর নিরাপত্তারক্ষীর করোনায় আক্রান্তের খবর উঠে এসেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ রেখার বাংলোকে আইসোলেটেড করে দেয়। তবে এখন পর্যন্ত তাঁর করোনা পরীক্ষা–সংক্রান্ত কোনো রিপোর্ট আসেনি। ম্যানেজার ফারজানা জানিয়েছেন, রেখা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। আর তাঁরা কেউ বাইরের কারও সংস্পর্শে আসেননি।
ওয়াজিদ খান
বলিউডে করোনার সবচেয়ে বড় থাবা বসিয়েছে সংগীত পরিচালক জুটি সাজিদ-ওয়াজিদ জুটির ওপর। এই ভাইরাসের সংক্রমণে প্রাণ হারান বলিউডের জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক, তথা গায়ক ওয়াজিদ খান। যদিও তাঁর মৃত্যুর কারণ বলা হচ্ছে হৃদ্রোগ, কিন্তু ওয়াজিদের শরীরে ছিল করোনাভাইরাস। ওয়াজিদের মা–ও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।