ট্রলিং নিয়ে বিরক্ত অজয়
ক্যারিয়ারের চলতি সফরটা দারুণ উপভোগ করছেন বলিউড সুপারস্টার অজয় দেবগন। নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। গত কয়েক বছরে তাঁকে নানান ভূমিকায় দেখা গেছে। আগামী দিনে এই বলিউড তারকাকে ‘ময়দান’, ‘মেডে’, ‘আরআরআর’, ‘দৃশ্যম টু’, ‘সন্স অব সরদার’সহ আরও অনেক ছবিতে নতুন আন্দাজে দেখা যাবে। সম্প্রতি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারের শুরুতেই অজয় নিজের অভিনয়জীবনের চলতি সফর নিয়ে কথা বললেন। তাঁর মতে, এখন মধ্যবয়সী অভিনয়শিল্পীদের সামনে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সুযোগের হাতছানি।
সাক্ষাৎকারে মধ্যবয়সী অভিনেতারা নিজেদের প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করার সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানান অজয়। তাই তো বায়ান্নতে দাঁড়িয়ে আজও পর্দা কাঁপাচ্ছেন অজয়। টাইগার শ্রফ, বরুণ ধাওয়ান, রণবীর সিংসহ আরও সব তরুণ অভিনেতাকে জোর টক্কর দিচ্ছেন। বলিউডের ‘সিংঘম’ জানান, এখন সিনেমার ধারা অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছে। শুধু বলিউডে নয়, হলিউডেও একই ধারা দেখতে পাবেন। বেশ কয়েক বছর ধরে সিনেমার কাহিনি মধ্যবয়সী অভিনেতাদের কথা ভেবে লেখা হচ্ছে। তাই মধ্যবয়সী অভিনয়শিল্পীরা এখন নিজেদের নিত্যনতুন চরিত্রে আবিষ্কারের সুযোগ পাচ্ছেন। আর দর্শক এ ধরনের কাহিনি দারুণ উপভোগ করছেন।
হেসে হেসে অজয় বলেন, ‘জানেন, যত বয়স বাড়ছে, তত কাজ করতে মজা আসছে। এই বয়সে দাঁড়িয়ে আমি আমার ক্র্যাফটকে ভালোবেসে ফেলেছি।’ এই বলিউড তারকা বিশ্বাস করেন যে প্রতিটি মানুষের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘আমরা মেশিনের মতো। যত দিন কাজ করে যাব, তত দিন সুস্থ থাকব। মেশিন যত দিন চলে, ঠিকঠাক থাকে। মেশিন বন্ধ পড়ে থাকলে মরচে ধরে যায়।’
ওটিটিতে সম্প্রতি মুক্তি পেল অজয় দেবগন অভিনীত ‘ভুজ: দ্য প্রাইড অব ইন্ডিয়া’। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ওপর নির্মিত অভিষেক দুধৈয়া পরিচালিত এ ছবি চাপা পড়ে যাওয়া এক ইতিহাসকে পর্দায় জীবন্ত করেছে। আগে অজয় ‘তানাজি: দ্য অনসং ওয়ারিয়র’ ছবিতে তানাজির মতো পরাক্রমশালী যোদ্ধাকে পর্দায় নিয়ে এসেছিলেন। এই বলিউড তারকার মতে, ভারতের প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়ে আসছে। তাই আসল সত্যকে সামনে আনা জরুরি।
পরপর দুটি ঐতিহাসিক ছবি প্রসঙ্গে অজয় দেবগন বলেন, ‘আজকের যুব সম্প্রদায় নিজের দেশের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে অবগত নয়। শত শত মানুষের নিঃস্বার্থ ত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের স্বাধীনতা। আজকের তরুণদের তা জানা প্রয়োজন। তানাজির মতো যোদ্ধার সম্পর্কে এই প্রজন্ম জানে না। কারণ, তাদের পাঠ্যপুস্তকে এই মহান যোদ্ধার কথা উল্লেখ নেই।’
ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকে নিজের দেশের থেকে বিদেশের ইতিহাস বেশি। আর এটাই স্বাভাবিক, যখন যে ক্ষমতায় থাকে, ইতিহাস তারই কথা বলে। প্রথমে মোগল, তারপর ইংরেজরা আমাদের আসল ইতিহাসকে চাপা দিয়েছে।’
সামনে এই বলিউড নায়ককে ‘রুদ্র: দ্য এজ অব ডার্কনেস’ ওয়েব সিরিজে দেখা যাবে। এ বছর এপ্রিলে তাঁর ডিজিটাল অভিষেকের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন। অজয়কে এই ক্রাইম-ড্রামাধর্মী সিরিজের মূল চরিত্রে দেখা যাবে। এই বলিউড তারকার মতে, ওটিটির মঞ্চ অভিনেতাদের নতুন নতুন পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার সুযোগ দিচ্ছে। আর তিনি বলেন যে ওটিটির মাধ্যমে অনেক বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে তাঁর অভিনীত ছবি ‘ভুজ’ পৌঁছে গেছে।
তবে ডিজিটাল দুনিয়ায় ট্রলিং নিয়ে রীতিমতো বিরক্ত অজয়। ট্রলিংয়ের কারণে অনেক অভিনয়শিল্পীর মানসিক স্বাস্থ্য দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তবে অজয় এই ট্রলারদের একদম পাত্তা দেন না। বরং সুযোগ পেলেই তাদের সমুচিত জবাব দেন। একরাশ বিরক্তি নিয়ে অজয় বলেন, ‘দেখুন, সোশ্যাল মিডিয়াকে সম্পূর্ণভাবে বিদায় জানাতে পারিনি। কিন্তু আমি এই দুনিয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করি। আমার মোবাইলে ইনস্টাগ্রাম, টুইটার কিছুই পাবেন না। কাজল আর আমার মেয়েও এর থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমি ট্রলিংয়ে অভ্যস্ত। আর সত্যি বলতে আমি এখন এদের পাত্তা দিই না। কখনো ইচ্ছা হলে মুখের মতো জবাব দিয়ে দিই।’
৩০ বছর আগের অজয়ের সঙ্গে আজকের অজয়ের তফাত কী, জানতে চাইলে আলতো হেসে বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন আমি অনেক পরিণত। আগে ছোট ছোট বিষয়ে রেগে যেতাম, অভিমান করতাম। এখন নিজেকে শান্ত রাখি।’