'এখানে কারও গার্লফ্রেন্ড বলে কাজ পাওয়া যায় না’
উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন টালিউড তারকা সায়নী দত্ত। ১৯ মার্চ একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর অভিনীত ভৌতিক ছবি ‘দ্য ওয়াইফ’। এই ছবির মাধ্যমে টালিউডের আঙিনা ছেড়ে হিন্দি ছবির দুনিয়ায় পা রাখতে চলেছেন এই বাঙালি অভিনেত্রী। তাই সবকিছু নিয়ে খানিকটা চাপে আছেন তিনি। মুঠোফোনের অপর প্রান্ত থেকে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধিকে এক সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘প্রচণ্ড টেনশনে কাটছে দিন, রাত। অনেকটা পরীক্ষার রেজাল্ট বের হওয়ার মতো চাপ অনুভব করছি। মা বলছেন, মনে করো এটাও একটা পরীক্ষা।’
‘বলিউডে সবকিছু অডিশনের মাধ্যমে হয়। বলিউড টালিউড নয়। টালিউডের মতো এখানে মুখের কথায় কাজ পাওয়া যায় না। বা কারও গার্লফ্রেন্ড বলে কাজের সুযোগ পাওয়া যায় না।’
টালিউডের পরিচিত মুখ সায়নী দত্ত। একাধিক সফল ছবির নায়িকা তিনি। তবে বলিউডই তাঁর স্বপ্ন। ধীরে ধীরে সেখানেও প্রতিষ্ঠা পেতে চান তিনি। বলিউডে প্রথম সুযোগ পেতে অনেক ঘাম ঝরাতে হয়েছে তাঁকে। হিন্দি ছবির দুনিয়ায় অভিষেক নিয়ে সায়নী বলেন, ‘অডিশন দিতে দিতেই “দ্য ওয়াইফ”-এ সুযোগ পেয়েছি। বলিউডে সবকিছু অডিশনের মাধ্যমে হয়। বলিউড টালিউড নয়। টালিউডের মতো এখানে মুখের কথায় কাজ পাওয়া যায় না। বা কারও গার্লফ্রেন্ড বলে কাজের সুযোগ পাওয়া যায় না।’ টালিউডে সায়নীর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। আর বলিউডে তাঁর যাত্রা সবে শুরু।
এই দুই ইন্ডাস্ট্রির তফাত কোথায়, এর জবাবে এই নায়িকা বলেন, ‘দুই ইন্ডাস্ট্রির ভেতর আমি একটুও মিল খুঁজে পাই না। টালিউড অনেক ছোট ইন্ডাস্ট্রি। এখানে মুখের কথায় কাজ পাওয়া যায়। হিন্দি ছবির জগতে অডিশন ছাড়া কাজের সুযোগ পাওয়া যায় না। আর অনেক সংগ্রামের পর একটা সুযোগ হয়তো কপালে জোটে। সত্যি বলতে এখানে অডিশন মানে একটা বিভীষিকা। এক মুহূর্তের মধ্যে ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়। আর সবার আগে ভালো হিন্দি বলতে হবে। বলিউড ইন্ডাস্ট্রির মানুষ অত্যন্ত পেশাদার। তাই এখানে কাজ করতে সুবিধা।’
বলিউডের সঙ্গে অনেক দুর্নাম জড়িয়ে আছে। বিশেষত যাঁরা ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে আসেন, তাঁদের নানান অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় বলে নানান অভিযোগ শোনা যায়। তবে এ বিষয়ে একমত নন সায়নী। এ প্রসঙ্গ উঠতেই বিরক্তির সঙ্গে তিনি বললেন, ‘এ বিষয়ে আমি কখনোই সহমত পোষণ করতে পারব না। বলিউডের নামে মিথ্যে রটানো হয়। অহেতুক কুৎসা রটানো হয়। আর কারা যে এসব উল্টোপাল্টা ছড়ায়, কে জানে। আমার মনে হয় যারা কাজ পায় না, তারাই এসব রটায়। একটা অডিশন রুমে একাধিক মানুষ থাকে। আর এটা অত্যন্ত পেশাদার জগৎ। তাদের এসব করার মতো সময় নেই। টালিউডের অনেক সিনিয়র অভিনেত্রী এখানে কাজ করেছেন, তাদের মুখেও কখনো কিছু শুনিনি।’
‘দ্য ওয়াইফ’ ছবিতে সায়নীর বিপরীতে আছেন বলিউড অভিনেতা গুরমীত চৌধুরী। গুরমীতের স্ত্রী বাঙালি। তাই এই ছবির শুটিংয়ের সময় গুরমীতের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়া গড়ে উঠেছিল সায়নীর। গুরমীতের প্রসঙ্গ উঠতেই উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বললেন, ‘গুরমীতের স্ত্রী অভিনেত্রী দেবিনা বাঙালি বলে বেশ সুবিধাই হয়েছিল। গুরমীত খুব ভালো বাংলা বোঝে। আমি গুরমীতকে মজা করে বলতাম যে কী কপাল তোমার! কারণ, তোমার অফস্ক্রিন আর অনস্ক্রিন দুটো স্ত্রী বাঙালি। শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, তিনি সবার ক্ষেত্রেই খুব সাপোর্টিভ।’
‘আমি কখনোই পর্দায় “বেশি সাহসী” হয়ে উঠতে পারব না। অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে পারব না। আমি যে পরিবার থেকে এসেছি, এসব করতে আমার রুচিতে বাধে। মা-বাবার পাশে বসে যেটা দেখতে পারব না, সেই ধরনের সিরিজে আমি কাজ করতে পারব না। এই মূল্যবোধের জন্য আমার অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। আর সে জন্য আমি এতটুকুও অনুতপ্ত নই।’
কলকাতার আধুনিক পরিবারের মেয়ে সায়নী। তবু ‘রক্ষণশীল’ মানসিকতার তিনি। নিজের রুচির বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করতে চান না এই অভিনেত্রী। তাই অনেক বড় বড় হিন্দি সিরিজ হাতছাড়া হয়েছে তাঁর। আর তা নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই সায়নীর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে অনেক সিরিজের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ, আমি কখনোই পর্দায় “বেশি সাহসী” হয়ে উঠতে পারব না। অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে পারব না। আমি যে পরিবার থেকে এসেছি, এসব করতে আমার রুচিতে বাধে। মা-বাবার পাশে বসে যেটা দেখতে পারব না, সেই ধরনের সিরিজে আমি কাজ করতে পারব না। এই মূল্যবোধের জন্য আমার অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। আর সে জন্য আমি এতটুকুও অনুতপ্ত নই। কারণ, একটা সুযোগ গেলে আর একটা আসবে। ছোটবেলা থেকেই আমি এই নীতিতে চলে এসেছি।’
আড্ডার শেষ বেলায় উঠে এল সায়নীর পরিবারের কথা। অভিনয়জগতে কীভাবে আসা, তার জবাবে সায়নী বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করতাম। ক্যাথলিক স্কুলে পড়তাম। ওখানে অনেক নাটক হতো। আর পড়াশোনার চেয়ে অভিনয় বেশি উপভোগ করতাম। একসময় বাবা-মাকে জানাই যে আমি অভিনয় করতে চাই। আর আমার পরিবার এসব দিক থেকে অত্যন্ত আধুনিক। তাঁরা শুরু থেকে আমায় সমর্থন দিয়েছেন। তবে আমার পরিবারে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কেউ নেই বলে অনেক বেশি সংগ্রাম করতে হয়েছে। আস্তে আস্তে পরিচিতি বেড়েছে। তবে এখন অনেক কাজ পাচ্ছি। আর বাবা-মা পাশে ছিলেন বলে আমার এই সংগ্রামটা অনেক সহজ হয়ে গেছে।’
ছোটবেলা থেকে বলিউড অভিনেত্রী রানী মুখার্জির ভক্ত সায়নী। এই বাঙালি অভিনেত্রী সায়নীকে সব সময় অনুপ্রাণিত করেন।