অনু মালিক নিষিদ্ধ!
যত দোষ নন্দ ঘোষ! নন্দ ঘোষেরা আর কত দোষের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে নেবে? দিন কি বদলাবে না? কোনো নারী যৌন হেনস্তার শিকার হলেই চারপাশ থেকে একসঙ্গে তিরের মতো প্রশ্ন আসে, ‘কী জামা পরেছিলে? কেন গিয়েছিলে? সন্ধ্যার পর বাইরে থাকা কেন? তোমারই–বা কেমন স্বভাব? নিশ্চয়ই তুমি এমন কিছু করেছিলে, যা লোকটাকে উসকে দিয়েছিল। এমনিতে তো সে দিব্যি ভালো মানুষ। তোমারই দোষ।’ দোষ সীতার, দোষ দ্রোপদীর। কিন্তু আর কত?
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে জ্যোতি সিং দিল্লির রাস্তায় গায়ে ধর্ষণের দগদগে ঘা নিয়ে পৃথিবীকে বিদায় বলে ‘নির্ভয়া’ হয়ে গেলেন। তখনো কেউ ধর্ষিত হলে সব লজ্জা, অপমান আর দায়ভার নিয়ে বাকি জীবন বয়ে বেড়াতেন দণ্ডিত সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর মতো। কিন্তু নির্ভয়ার মৃত্যুর তিন বছর পর যখন তাঁর বাবা–মা তাঁর পরিচয় সামনে এনে বললেন, ‘যে ধর্ষক, লজ্জা তার’, সেদিন থেকে নারীরা দেয়াল থেকে পিঠ সরিয়ে নিজেদের যৌন নির্যাতনের কথা অস্ফুটে হলেও বলা শুরু করল। তারপর একদিন হাঁটি হাঁটি পা পা করে হলিউডের পরে বলিউডেও যাত্রা শুরু করল ‘হ্যাশট্যাগ মিটু’।
নির্ভয়াদের নবজন্ম হলো। বলিউডেও নির্ভয়ারা মুখ খুলতে শুরু করলেন নির্ভয়ে। একপাশে আলিশা চিনয়, সোনা মহাপাত্র, শ্বেতা পণ্ডিতরা যখন নির্ভয়ার ভূমিকায়, তখন রাবণের ভূমিকায় অনু মালিক। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্মফেয়ারসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পাওয়া সুরকার, সংগীত পরিচালক ও সংগীতশিল্পী। কিন্তু তাঁর এক জীবনের সব অর্জন কবরস্থ হয়, যখন একে একে নারীরা তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মুখ খোলেন। এ ছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত ছয়জন শিল্পী তাঁদের ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। কাউকে ঘরে নিয়ে গিয়ে, কাউকে স্টুডিওর ভেতরে দরজা বন্ধ করে আবার কারও সঙ্গে গাড়ির ভেতরেই জোর করে যৌনসম্পর্ক করেন অনু মালিক।
সেসব অভিযোগের পাল্লা এতটাই ভারী হয়ে গিয়েছিল যে যাঁকে ছাড়া ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ ভাবা হতো না, তাঁকে এর দশম আসরে বিচারকের আসন থেকে অব্যাহতি দেয় অনুষ্ঠানটির আয়োজক সনি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। আর এবার জানা গেল, যশ রাজ স্টুডিওর ভেতরে প্রবেশাধিকার হারিয়েছেন এই গুণী শিল্পী। ডেকান ক্রনিকলের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, যশ রাজ ফিল্মসের কাছের এক সূত্র জানায়, ‘অনু মালিক যশ রাজের গেট অতিক্রম করতে পারবেন না। যাঁদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিষয়ে যশ রাজ স্টুডিও কঠোর এবং অটল।’ এ সময় গত বছর যশ রাজ ফিল্মসের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী আশীষ পাটেলকে একই অভিযোগে চাকরি থেকে বিদায় করা হয়েছে বলেও যোগ করে ওই সূত্র।
ভারতে ‘হ্যাশট্যাগ মিটু’ মুভমেন্ট কিছুতেই সফল হবে না বলে যাঁরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তাঁদের সেই দৈববাণী সময়ের সঙ্গে ক্রমেই ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। ‘#মিটু’র ফলে আরও এক বছর আগে অলোক নাথ এবং সাজিদ খানের নাম যশ রাজ স্টুডিওর কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাঁরাও যশ রাজের গেট পার করার যোগ্যতা হারিয়েছেন।