জয়ার কাছে ইলিশ খেতে চেয়েছিলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি
প্রশংসা শুনলে লজ্জায় মাথা নুইয়ে আসে তাঁর। সামনাসামনি প্রশংসা করলে চেষ্টা করেন প্রসঙ্গ বদলানোর। এই হচ্ছেন জয়া আহসান। এবার পড়েছিলেন ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠির সামনে। গুণী অভিনেতার মুখে সামনাসামনি প্রশংসা শুনে সেদিন আর আলাপ দীর্ঘ করেননি। জয়ার ভাষায়, ‘পঙ্কজ ত্রিপাঠি খুবই সাধারণ, স্বাভাবিক একজন মানুষ। স্টারডম জিনিসটি তার মধ্যে নেই। তিনি ভীষণ সহযোগী একজন অভিনেতা। তিনি প্রায় সময়ই আমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসতেন।’
প্রথমবার জয়াকে দেখা যাবে হিন্দি সিনেমায়। যার প্রাথমিক নাম ‘কড়ক সিং’। সিনেমায় তার সহশিল্পী হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠি, মালায়লাম অভিনেত্রী পার্বতী থিরুভোথু ও বলিউড অভিনেত্রী সানজানা সাঙ্ঘি প্রমুখ। সিনেমাটি পরিচালনা করছেন অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী। গত শনিবার শেষ হয়েছে সিনেমাটির শুটিং। প্রথম আলোর সঙ্গে সেই সিনেমার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করলেন জয়া। ঘুরে ফিরে উঠে এলো পঙ্কজ ত্রিপাঠির কথা। তিনি সিনেমার প্রধান অভিনেতা।
জয়াকে ফেসবুক অনুসরণ করেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি। তার কাজগুলো দেখেছেন ‘নিউটন’খ্যাত অভিনেতা। জয়া বলেন, ‘উনি নিখুঁতভাবে বলছিলেন আমার কাজ নিয়ে। আমি জিজ্ঞেস করিনি কোন কাজ দেখেছেন। একজন সহঅভিনেতাকে জানার চেষ্টা দেখে ভালো লেগেছে। শুটিংয়ের ফাঁকে আমাদের দেশ বিদেশের কাজ নিয়ে কথা হতো। সব মিলিয়ে তার সঙ্গে শুটিং কিংবা আড্ডায় অনেক কিছু শিখেছি। এত সব গুণী অভিনেতা সবার কাছ থেকেই অনেক কিছু শেখার ছিল।’
এক সময় তাদের শুটিং হয়ে যায় পরিবারের মতো। একসঙ্গে চিত্রনাট্য নিয়ে বসা, শুটিং শেষে উৎসবমুখর পরিবেশে খাওয়া, সব মিলিয়ে মেতে উঠে ছিলেন আড্ডায়। সেই আড্ডা শেষের দিকে মন খারাপ হতে থাকে জয়ার। তিনি বলেন, ‘একটা টিম ইউনিটের সবার মধ্যে বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া না থাকলে কিন্তু কাজটা ঠিক ভাবে হয় না। কারণ আমাদের অনেক দিন একটি পরিবার হয়ে থাকতে হয়। একে একে আমাদের কাজগুলো কমতে থাকে। আমার ও পঙ্কজ ত্রিপাঠির দৃশ্য দিয়ে শুটিং শেষ হয়েছে। যার যার মতো কেউ মুম্বাই, কেউ দিল্লি, কেউ গুজরাট, কেউ দক্ষিণ ভারত, আমি বাংলাদেশে ফিরব—এভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় পর থেকেই মন খারাপ হয়েছে।’
বাংলাদেশের আসতে চাননি পঙ্কজ ত্রিপাঠি? এমন প্রশ্নে জয়া বলেন, ‘পঙ্কজ এবং তার স্ত্রী বাংলাদেশে আসার জন্য খুব আগ্রহ দেখিয়েছেন। এক পায়ে খাড়া। সুযোগ পেলেই আসবেন। শুটিংয়ের সময় ত্রিপাঠি ইলিশ মাছ খেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তো বাংলাদেশের ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। তাকে বলেছি বাংলাদেশে আসতে। এলে তো সবার আগে অবশ্যই ইলিশ মাছ খাওয়াব। এই মানুষটা এত খাবার পছন্দ করেন, এমন ভোজন রসিক মানুষকে বাঙালিয়ানা খাবার খাওয়াতেও ভালো লাগবে।
বাংলাদেশ পেরিয়ে কলকতার সিনেমায় জয়ার অভিনয়, এরপর প্রশংসা, পুরস্কার পাওয়ার কথা সবারই জানা। এবার নতুন এক অভিজ্ঞতা নিয়ে শেষ করলেন বলিউডের সিনেমা। জয়া আহসানের ছুটে চলার পেছনে অনুপ্রেরণা কী? ‘জানেন আমার কোনো অনুপ্রেরণা নাই। আমি কাজটাই করে যেতে চাই। নতুন কিছু শিল্পীর সঙ্গে কাজ করাটাও এক ধরনের রোমাঞ্চকর অনুভূতি। কলকাতার অনেক কাজ করেছি। বলিউডের বেশ কিছু কাজের প্রস্তাব পেয়েছি। আমার কাছে যেখানেই যাই অভিনয়ের ক্ষেত্রটা একই রকম মনে হয়। এবার বলিউডেও সব একই শুধু হিন্দি ভাষাটাই আলাদা একটি অভিজ্ঞতা ছিল। নিজস্ব কালচারের বাইরে গিয়ে কাজ করাটা আমাদের কাছে দারুণ লাগে,’ বলেন জয়া।
এ সময় বলিউডে কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বলিউডে কাজগুলো আরও বড় পরিসরে কাজগুলো হয়। আমরা সচরাচর যেভাবে শুটিং করি তার চেয়ে পরিসরটা বড় থাকে। খুব বেশি পেশাদার লোকদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। পঙ্কজ ত্রিপাঠি, পার্বতী আরও যারা ছিলেন সবাই অনেক গুণী অভিনয়শিল্পী।’
এদিকে আজ জয়া আহসান অভিনীত জীবনানন্দ দাশের বায়োপিক নিয়ে সিনেমা ‘ঝরাপালক’ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। সিনেমাটি দেশের দর্শকদের সঙ্গে দেখার ইচ্ছা ছিল জয়ার। কিন্তু ভারতে ব্যস্ততা থাকায় ঢাকায় থাকতে পারেননি। মন খারাপ করে জয় বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) শুটিং শেষ করেছি। শেষ মুহূর্তে আসতে পারিনি। বাংলাদেশ ও জীবনানন্দ দাশ অতপ্রেত ভাবে জড়িত। সেখানে জীবনানন্দ দাশের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। চরিত্র নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। দেশের দর্শক দর্শক সিনেমাটি কীভাবে নেন সেটা সামনে থেকে দেখতে পারলে ভালো লাগত।’