চরিত্রই তন্নিষ্ঠাকে খুঁজে নেয়

তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
পর্দায় তাঁর উপস্থিতি সব সময় অন্য মাত্রা এনে দেয়। অভিনয় দিয়ে বরাবরই নজর কাড়েন তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি মুম্বাইয়ে এই বাঙালি অভিনেত্রীর মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি

কিছুদিন আগে তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ছবি ‘ইয়েলো বাস’ দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। এ ছাড়া স্কুপ ওয়েব সিরিজে লীনা প্রধানের চরিত্রে দাপট দেখিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি মনোজ বাজপেয়ী অভিনীত ‘জোরাম’ ছবিতে স্বল্প উপস্থিতিতেই তন্নিষ্ঠা মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। সব সময় শক্তিশালী চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে। আড্ডার শুরুতে চরিত্র নির্বাচনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি এমন চরিত্র নির্বাচন করি, যেন অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারি। সত্যি বলতে, আমি এ রকম চরিত্রের খোঁজে থাকি না, এ রকম চরিত্রই আমার কাছে আসে।’

আরও পড়ুন

প্রায় সব ধরনের সিনেমা ও সিরিজে দেখা যায় তাঁকে। তন্নিষ্ঠা নিজে কোন ঘরানার ছবিতে স্বচ্ছন্দ? হালকা হেসে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না সিনেমার নির্দিষ্ট কোনো ঘরানা হতে পারে। মানুষের জীবনকে এক ঘরানায় বেঁধে রাখা যায় না। তাই আমি নির্দিষ্ট কোনো ঘরানায় বিশ্বাসী নই।’

আড্ডায় উঠে আসে তন্নিষ্ঠার বহুল প্রশংসিত ছবি ‘ইয়েলো বাস’-এর কথা। অস্কারজয়ী প্রযোজক গুণীত মোঙ্গা কাপুর প্রযোজিত এই ছবির প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, ‘এ ছবিটা করা আমার জন্য খুব কষ্টের ছিল।

তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

কারণ, শুটিংয়ের সময় আমার দত্তক কন্যা রাধিকা আর সিনেমায় আমার মেয়ের চরিত্রে যে ছিল, ওর বয়সও প্রায় সমান। একজন সন্তানহারা মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা সত্যি কষ্টের। ছবির শুটিং চলাকালে আমি আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করিনি। এ ছবি করতে গিয়ে আমি মানসিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।’

ভারতীয় ছবির পাশাপাশি একাধিক আন্তর্জাতিক ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তন্নিষ্ঠার। ২০০৫ সালে তাঁর অভিনীত প্রথম বিদেশি ছবি ছিল ‘শ্যাডোজ অব টাইম’। ভারত ও ভারতের বাইরের সিনেমার মধ্যে পার্থক্য প্রসঙ্গে তন্নিষ্ঠা বলেন, ‘আগে অনেক তফাত ছিল, এখন অনেকটা কম। হিন্দি ছবির দুনিয়ায় অনেক বদল এসেছে। এখন পরিচালক, অভিনেতাসহ অনেকেই বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এখানে আসছেন।’

তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

১৮ বছরের ফিল্মি–ভ্রমণ নিয়ে তন্নিষ্ঠা কতটা সন্তুষ্ট? দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তিনি বলেন, একবার সন্তুষ্ট হয়ে গেলে তো এই ভ্রমণ শেষ হয়ে যাবে। পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধারার সিনেমায় তন্নিষ্ঠাকে কম দেখা যায়। এর কারণ জানতে চাইলে অভিনেত্রী হেসে বলেন, ‘আমি তো করতে চাই। কিন্তু নির্মাতারা আমাকে বাণিজ্যিক ছবি থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে হয়।’

একসময় তন্নিষ্ঠাকে বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। বর্ণ ও লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে অনেক সময় সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে এখন বৈষম্যের কথা শোনা যায় না। সত্যি বলতে, এ বিষয়ে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’

আড্ডার শেষে উঠে আসে তন্নিষ্ঠার দত্তক কন্যা রাধিকার কথা। অভিনেত্রী বলেন, ‘আমার বরাবরই ইচ্ছা ছিল কোনো শিশুকে দত্তক নেওয়ার। নিজের গর্ভজাত সন্তান কখনো চাইনি। কারণ, নতুন প্রাণকে পৃথিবীতে এনে আর বোঝা বাড়ানোর ইচ্ছা ছিল না আমার। সমাজের প্রতি এটুকুই আমার অবদান।’