ঐশ্বরিয়া, মাধুরীদের গুরু সরোজ খানের সেরা ১০
চার দশকের সুদীর্ঘ, আলোকিত ক্যারিয়ার শেষে সরোজ খান ২০২০ সালে মারা যান। বলিউডের অসংখ্য জনপ্রিয় তারকার জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠার মই ছিল সরোজ খানের কোরিওগ্রাফি। ৭১ বছরের জীবনকালে হিন্দি সিনেমার বেশ কয়েকটি আইকনিক নাচের কোরিওগ্রাফি করেছেন তিনবার জাতীয় পুরস্কারজয়ী এই নৃত্যনির্দেশক। আজ এই গুণী শিল্পীর জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ২২ নভেম্বর মুম্বাই শহরে জন্ম তাঁর। তাঁর আসল নাম ছিল নির্মলা নাগপাল। মাত্র তিন বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু।
আজ জন্মদিনে দেখে দেওয়া যাক সরোজের নির্দেশনা ও পরিকল্পনার সেরা ১০ নাচ, বলিউডের ইতিহাসে যেগুলো চিরকাল একজন সফল, গুণী কোরিওগ্রাফার সরোজ খানের সাক্ষ্য বহন করবে।
এক দো তিন
মাধুরী নামটা নিতেই যে গান মাথার ভেতর চলতে থাকে, সেটি ‘এক দো তিন’। আর এই গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচেন ‘মোহিনী’রূপী মাধুরী। যখন ‘তেজাব’ সিনেমাটি মুক্তি পায়, তখন নাকি এই গানে হলের ভেতরেই দর্শক টাকা ওড়াতেন। দর্শকদের অনুরোধে সিনেমা শেষ হওয়ার পর এই গান চালানো হতো। কেবল গানটি দেখার জন্যই অসংখ্য দর্শক অসংখ্যবার বড় পর্দায় সিনেমাটি দেখেছেন। মাধুরী দীর্ঘদিন এই নাচের মুদ্রায় দর্শককে ভুলিয়ে ‘মোহিনী’ হয়ে ছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে মাধুরী নিজেই বলেছেন, মোহিনী থেকে আবার নিজের আসল নাম মাধুরীতে ফিরতে তাঁর সময় লেগেছিল। এই গান মুক্তির পর মাধুরী যেখানেই যেতেন, সবাই ‘মোহিনী’, ‘মোহিনী’ বলে চিৎকার করত।
ধক, ধক
মাধুরী আর অনিল কাপুরের ‘ধক, ধক করনে লাগা’ সেই সময়ে মাইলফলক সৃষ্টি করা একটা মিউজিক ভিডিও। এর আগে খুব কম তারকাকেই এ রকম সাহসী নাচে অংশ নিতে দেখা গেছে। এভাবেই সরোজ মাধুরীকে সাহসী, আবেদনময়ী ও দুর্দান্ত অভিব্যক্তির অধিকারী একজন নায়িকা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। মাধুরীকেই আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
নাচের ক্ষেত্রে নিজেকে বলিউডের আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতেও সময় লাগেনি। মাধুরী অকপটে স্বীকার করেন, তিনি আজ যা, তার পেছনে বলিউডের যে মানুষগুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি, সরোজ খান তাঁদেরই একজন। অন্যদিকে বলিউডের আইকনিক কোরিওগ্রাফার সরোজ খানের কাছে মাধুরী তাঁর সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষার্থী।
হাওয়া হাওয়াই
‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র শ্রীদেবী মানেই ‘হাওয়া হাওয়াই’। এই গান সরোজকে বলিউডের নৃত্যনির্দেশক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। আর শ্রীদেবীকে ‘আইকনিক’ বানানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। এমনকি মাদাম তুসোর জাদুঘরে শ্রীদেবীর যে মোমের মূর্তি রয়েছে, সেখানেও তাঁকে বানানো হয়েছে ‘হাওয়া হাওয়াই’ গানের সাজ, পোশাকে।
চোলি কে পিছে
এখনো মাধুরীর সেরা হিট গানগুলোর ভেতর অন্যতম ‘খলনায়ক’ ছবির ‘চোলি কে পিছে’। শুধু মাধুরী নন, নীনা গুপ্তাও এই গানের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পান।
চানে কে খেত মে
এটিও মাধুরীর অংশ নেওয়া আরেকটা হিট গান। সরোজ আর মাধুরী দুজনই দুজনের সঙ্গে কাজ করতে চাইতেন। মাধুরী সম্পর্কে সরোজ বলেছিলেন, ‘মাধুরী অবিশ্বাস্য দক্ষতায় যে কারও চেয়ে দ্রুত নাচের স্টেপ রপ্ত করে নেয়। সে ১২ বছর ধরে কত্থক নাচ শিখেছে। ওর শুরুতে একটা সমস্যা ছিল, ও কোমর দোলাতে পারত না। আমরা প্রথম একসঙ্গে সুভাস ঘাই পরিচালিত “উত্তর দক্ষিণ” সিনেমাটা করলাম। আর সেখান থেকেই আমাদের শুরু হলো।’ ‘চানে কে খেত মে’ গানে স্কুলের অনুষ্ঠানে বাচ্চারা নেচেছে। বিয়েতেও এই গানে নাচার প্রচলন আছে।
হামকো আজ কাল হ্যায়
‘সাইলাব’ সিনেমায় সরোজ খান আর মাধুরী দীক্ষিত মিলে আরেকবার জাদু দেখালেন ‘হামকো আজ কাল হ্যায়’ গানে। এই গানে সরোজ ১৯৯০ সালে সেরা কোরিওগ্রাফারের ফিল্মফেয়ার জেতেন। সর্বমোট আটটি ফিল্মফেয়ার–জয়ী এই কোরিওগ্রাফারের অন্য পুরস্কারগুলো এসেছে ‘গুরু’, ‘দেবদাস’, ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’, ‘খলনায়ক’, ‘বেটা’, ‘চালবাজ’ ও ‘তেজাব’ ছবির জন্য।
তাম্মা তাম্মা
আবারও মাধুরী আর সরোজ খান মিলে ‘তাম্মা তাম্মা’ গানটিকে বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম ‘ড্যান্স আইটেম’ বানালেন। সরোজ খানকে নাকি একবার তাঁর এক বান্ধবী এসে বলেছিলেন, ‘তাম্মা তাম্মা’ গানে নাকি তাঁর সঞ্জয় দত্তকে খুবই ভালো লেগেছে। সরোজ বললেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারি না, মাধুরী থাকা সত্ত্বেও যে তোমার অন্য কাউকে ভালো লাগতে পারে। তুমি নিশ্চয়ই সঞ্জয় দত্তর অন্ধ ভক্ত।’
দোলা রে দোলা
দেবদাসের ‘দোলা রে দোলা’ গানে সরোজ খানের নির্দেশনায় ঐশ্বরিয়া রাই আর মাধুরী দীক্ষিত যা করেছেন, তা ভোলা কঠিন। দর্শকও এই গানকে অবিশ্বাস্য ভালোবাসা দিয়েছে। দশকের বেশি সময় ধরে গানটি জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।
নিমুরা নিমুরা
ঐশ্বরিয়া রাইয়ের হিট গানের তালিকায় ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ সিনেমার ‘নিমুরা নিমুরা’ গানটি ওপরের দিকেই থাকবে।
ইয়ে ইশক হ্যায় এ
‘জাব উই মেট’ সিনেমার ‘ইয়ে ইশক হ্যায় এ’ গানটিও বলিউডের আইকনিক গানগুলোর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আর কারিনার আগে সেই কৃতিত্বের ভাগ সরোজ খানকে দিতেই হবে।