অভিনেতা হিসেবে পরিচিত, বানিয়েছিলেন ‘তেরে নামে’র মতো সিনেমাও
‘ঘুম ভাঙল এই ভয়াবহ খবর দিয়ে। আপনি আমার সব থেকে বড় চিয়ার লিডার ছিলেন। “ইমার্জেন্সি” ছবিতে আপনার পরিচালনা আমার মন জয় করে নিয়েছে। সতীশ কৌশিক অত্যন্ত ভালো মনের জেনুইন মানুষ ছিল। ওকে মিস করব।’ টুইটারে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত। আজ বৃহস্পতিবার সকালে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বলিউডের সুপরিচিত পরিচালক ও অভিনেতা সতীশ কৌশিক আর নেই। মাত্র ৬৭ বছর বয়সেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এ তারকা। টুইটারে এ খবর জানান প্রবীণ বলিউড অভিনেতা অনুপম খের।
এ কথা হয়তো অনেকে জানেন না, অভিনেতা কিংবা কৌতুকশিল্পী হিসেবেই নয়, পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত ছিলেন সতীশ। যাঁর জীবনযাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫৬ সালের ১৩ এপ্রিল, হরিয়ানার মহেন্দ্রগড়ে। হরিয়ানাতেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন। সেখান থেকে লেখাপড়ার সূত্রে চলে যান ভারতের দিল্লিতে।
১৯৭২ সালে দিল্লির কিরোরি মাল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ভর্তি হন বিখ্যাত ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা এবং ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে। ১৯৮০ সালে তিনি মঞ্চে কাজ শুরু করেন।
মঞ্চে হিন্দি নাটক ‘উইলি লোম্যান’–এ উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সতীশ। এ ছাড়া কাজ করেছেন আর্থার মিলারের ডেথ অব আ সেলসম্যানের রূপান্তর ‘সেলসম্যান রামলাল’ নাটকে। কাজ করেছেন চিত্রনাট্যকার হিসেবেও। ১৯৮৩ সালে কুন্দন শাহের কমেডি ক্ল্যাসিক ‘জানে ভি দো ইয়ারো’–এর জন্য সংলাপ লিখেছিলেন সতীশ কৌশিক। একসময় পর্দার সামনে কাজ শুরু করেন। ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবিতে ক্যালেন্ডারের চরিত্রে দর্শকের নজর কাড়েন প্রতিভাবান এ অভিনেতা। ‘দিওয়ানা’ ছবিতে পাপ্পু পেজার এবং ব্রিটিশ ছবি ‘ব্রিক লেন’-এ চানু আহমেদের চরিত্রটি উল্লেখযোগ্য। ১৯৯০ সালে ‘রাম লক্ষণ’এবং ১৯৯৭ সালে ‘সাজান চলে শ্বশুরাল’-এর জন্য দুবার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন সতীশ কৌশিক। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে তাঁর পরিচিত পায় অল্প সময়ে। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
একসময় অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালক হিসেবে কাজ করেন সতীশ কৌশিক। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি শ্রীদেবী অভিনীত ‘রূপ কি রানি চোরো কা রাজা’।
ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৩ সালে। মোটামুটি হিট হয়েছিল ছবিটি। পরিচালক হিসেবে সতীশ কৌশিকের কদর বাড়ে। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘প্রেম’ মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। এ ছবিতে অভিনয় করে বলিউডে পরিচিতি পান অভিনেত্রী টাবু। যদিও এটি ছিল ফল্প ছবি, তবে সতীশ হাল ছাড়েননি। ১৯৯৯ সালে মুক্তি দেন ‘হাম আপকে দিল মে রাহতে হ্যায়’। এবার সুপারহিট হয়। ২০০৫ সালে অর্জুন রামপাল, আমিশা প্যাটেল ও জায়েদ খানকে নিয়ে ‘বাদা’ ছবির পরিচালক ছিলেন তিনি। ফাঁকে ফাঁকে ছোট পর্দায়ও তিনি অনুষ্ঠান বানিয়েছিলেন। ‘ফিলিপস টপ টেন’শোটি লেখক এবং সঞ্চালক ছিলেন সতীশ কৌশিক। ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ড্রামা’-তে নবাব জং বাহাদুরের ভূমিকায় তাঁকে অভিনয় করা হয়েছিল সতীশ। সালমান খানের সুপারডুপার হিট ছবি ‘তেরে নাম’ পরিচালনা করেছেন তিনি।
সব ছেড়ে আজ ভোরে না–ফেরার দেশে পাড়ি জমান সতীশ। পিটিআইকে দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে অভিনেতা অনুপম খের জানান, সতীশ দিল্লিতে তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে ছিলেন। সেখানেই তাঁর অস্বস্তি লাগছিল। হাসপাতালে নিতে নিতে রাস্তায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সতীশ। দিবাগত রাত একটার দিকে ঘটনাটি ঘটে। ভারতীয় সংবাদসংস্থা এএনআইয় জানিয়েছে, দিল্লির দীন দয়াল হাসপাতালে তাঁর ময়নাতদন্ত হবে। এরপর তাঁর মরদেহ মুম্বাইতে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে।