ফেসবুকের রিলসে আলোচিত এই দক্ষিণি ছবিতে কী আছে
পরশুরাম পরিচালিত এই তেলেগু ছবিটির আইএমডিবির রেটিং আশাব্যঞ্জক নয়। ১০–এ মোটে ৫ দশমিক ৪। বক্স অফিস কালেকশনের দিক থেকেও তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি চলচ্চিত্রটি। তবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে সিনেমাটি আলোচিত হয়েছে। ফেসবুক রিলস বা ইউটিউব শর্টসে প্রায়ই আসে ছবিটির বিভিন্ন দৃশ্য। কিন্তু সিনেমাটি নিয়ে এত হইচই কেন? কেনই–বা সিনেমাটি বাংলাদেশি দর্শকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল?
গোবর্ধন সিনেমাটির নায়ক। বয়সে তরুণ, মেধাবী, অবিবাহিত; পেশায় স্থপতি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। তার বড় দুই ভাইয়ের একজন মাতাল, আরেকজন পরিকল্পনায় ব্যর্থ হয়ে কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অবসাদগ্রস্ত জীবন যাপন করে। তাদের স্ত্রী, সন্তান, মা—সবাই গোবর্ধনের ওপর নির্ভরশীল। বেতনের গোনা টাকায় অনেক হিসাব করে সংসার চালায় গোবর্ধন। কিন্তু এর জন্য তার মধ্যে কোনো বিরক্তি নেই, নেই আক্ষেপও। এমনকি দায়িত্ববোধ থেকে পালিয়েও বাঁচতে চায় না সে। উপরন্তু কীভাবে পরিবারের মানুষদের আরও ভালো রাখা যায়, সেই চেষ্টাতেই সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখে।
মধ্যবিত্ত জীবনের গল্প মনে হচ্ছে না? চারপাশে চোখ মেললেই এ ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্পগুলো এমনই। কেবল বাস্তব গল্পের ছবি হওয়ার জন্যই কি সিনেমাটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের ভালো লেগেছে? নাকি গোবর্ধন চরিত্রটিতে বাস্তবতার একেবারে বিপরীত বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে বলে ছবির দৃশ্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই হচ্ছে?
বাস্তবে আসলে কী দেখা যায়, গোবর্ধন চরিত্রটি বাস্তবতার বিপরীত কেন? একসময় যৌথ পরিবারের জৌলুশ ছিল। কিন্তু কালের ধারাবাহিকতায় যৌথ পরিবার ভাঙতে ভাঙতে ছোট পরিবারে এসে ঠেকেছে। কিন্তু যৌথ পরিবারের গল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেনি। অপর দিকে বাস্তবে গোবর্ধনের মতো মানুষকে খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য। বাস্তবে বড় দুই ভাই থাকতে তাদের এবং তাদের স্ত্রী-সন্তানদের জন্য ছোট ভাই নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন; এ দৃশ্য বর্তমানে খুব বেশি পাওয়া যায় না। সে কারণেই কি সিনেমাটি দেশি দর্শকের মন কাড়ল?
সিনেমার গল্প থেকে আরও একটু বিস্তৃত করা যাক। পরিবারের মানুষদের ভালো রাখার চেষ্টায় গোবর্ধন যে শুধু মরিয়া তা–ই নয়, পরিবারের জন্য বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলেও সে এড়িয়ে যায়। তার মনে ভয় হয়, বিয়ের পর যদি তাকে আলাদা হয়ে যেতে হয়। তখন পরিবারের কী হবে?
সিনেমাটির গল্প এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। পরিবারের প্রতি আন্তঃপ্রাণ গোবর্ধনের জীবনেও প্রেম আসে। তাদের বাড়িতে কিছুদিনের জন্য ভাড়ায় ওঠে ইন্দু। নিজের পরিচয় লুকিয়ে ভাড়া নেয় সে। উদ্দেশ মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর একটা থিসিস লেখা। আদতে একটা বড় কোম্পানির মালিকের মেয়ে ইন্দু। কিন্তু থাকতে থাকতে গোবর্ধনের দায়িত্বশীলতা, সততা দেখে মুগ্ধ হয় সে। ভালোবেসে ফেলে গোবর্ধনকে। ইন্দুও গোবর্ধনকে ভালোবাসে। ভালোই চলছিল সবকিছু। কিন্তু থিসিস পেপারটা বের হওয়ার পর, (ইন্দু যেটার নাম রাখে ‘দ্য ম্যান গোবর্ধন’) গোবর্ধনের হাতে পড়লে সে রেগে যায়।
দুজনের মধ্যে বিচ্ছেদের সুর বেজে ওঠে। ক্রমশ গল্প এগোতে এগোতে নানা নাটকীয়তার পর গোবর্ধন জানতে পারে, থিসিস লেখার জন্য অভিনয় নয়, ইন্দু সত্যিই তাকে ভালোবাসে। গল্প তখন পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।
পরিবার, ভালো লাগা, ভালোবাসা, প্রেম, বিরহ নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের আলাদা আবেগ আছে। আর সিনেমাটিতে বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে। সে কারণেই গোবর্ধন-ইন্দুর রোমান্স ও খুনসুটি থেকে বিরহসহ পরিবারের জন্য গোবর্ধনের নিবেদনের দৃশ্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এত হইচই?
‘দ্য ফ্যামিলি স্টার’ শিরোনামের এই ছবিতে গোবর্ধন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিজয় দেবারকোন্ডা এবং ইন্দু চরিত্রে অভিনয় করেছেন ম্রুণাল ঠাকুর।