বার্তা নয়, এবার বিনোদন দিতে চান খুরানা
আয়ুষ্মান খুরানার ছবি মানেই সামাজিক বার্তা। সমাজের বর্জিত বিষয় তাঁর ছবিতে সচরাচর প্রাধান্য পায়। সোজা কথায় বলা যায়, সমাজের এক বিশেষ শ্রেণির তিনি অভিনেতা। তাঁর ছবির দর্শক মাল্টিপ্লেক্সে বেশি। তবে এসব তকমা এখন ঘোচাতে মরিয়া আয়ুষ্মান। তিনিও হয়ে উঠতে চান সব মানুষের তারকা। তাই এবার নিজের চিরাচরিত ইমেজ ভেঙেচুরে আদ্যোপান্ত বিনোদনমূলক এক ছবি নিয়ে হাজির এই বলিউড তারকা। গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে অভিনেতার নতুন সিনেমা ‘অ্যান অ্যাকশন হিরো’। ছবিতে ভরপুর অ্যাকশন করেছেন তিনি। নতুন ছবি মুক্তি উপলক্ষে টি-সিরিজের অফিসে আয়ুষ্মানের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি
আলাপচারিতার শুরুতেই উঠে আসে তাঁর নতুন ছবির কথা। এ ছবিতে নিজের অভিনীত চরিত্রের প্রসঙ্গে আয়ুষ্মান বলেন, ‘এক দশক পার হয়ে গেল অ্যাকশন হিরো হতে। তবে সে জন্য সবচেয়ে জরুরি ছিল সঠিক চিত্রনাট্য। সেই হিসেবে এই চিত্রনাট্যটা একদম যথাযথ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এই ছবির চিত্রনাট্য পুরোপুরি আজকের প্রজন্মের জন্য। আজকাল আশপাশে যা ঘটছে, তা ছবিতে দেখানো হয়েছে। আমি সব সময় অন্য রকম চিত্রনাট্যের সন্ধানে থাকি। তবে এখন দর্শকের রুচিকে মাথায় রাখছি। বিশেষ করে মহামারির দুই বছরে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তাই এখন বিনোদনমূলক ছবির দিকে বেশি করে ঝুঁকছি। মহামারির পর আমার পছন্দ করা প্রথম ছবি এটা। আশা করি দর্শকের পছন্দ হবে।’
অভিনেতার কথা শুনে মনে হচ্ছে, ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছেন তিনি। প্রশ্নটি করতেই আয়ুষ্মান বলেন, ‘ঠিক তা নয়। ঝুঁকি নেওয়া আমি বন্ধ করব না। তবে আমার ছবিতে এখন বিনোদনও থাকবে। সাধারণ মানুষ যাতে বুঝতে পারে, এমন ছবি করার প্রবণতা থাকবে।’
অ্যাকশন ছবি মানেই রোহিত শেঠি। রোহিতের ছবিতে কাজ করার প্রসঙ্গে হেসে বলেন, ‘আমি তো প্রস্তুত। এখন তার প্রস্তুত হওয়ার প্রয়োজন। আশা করছি, এ ছবির পর তিনি আমাকে অ্যাকশন হিরো হিসেবে দেখবেন।’
এই আড্ডায় উঠে আসে আয়ুষ্মানের পছন্দের অ্যাকশন হিরোর নাম। তিনি বলেন, ‘আমার মতে বলিউডের প্রথম অ্যাকশন হিরো অক্ষয় কুমার। আজকের প্রজন্মের টাইগার শ্রফ ও বিদ্যুৎ জামাল আমার পছন্দের। আমার সবচেয়ে প্রিয় অ্যাকশন হিরো হলেন জ্যাকি চান।’
কোভিডের পর থেকে চিত্রনাট্য নির্বাচনে বেশ কিছু বদল এনেছেন আয়ুষ্মান।
তিনি বলেন, ‘এই ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময় শুধু মাথায় ছিল, সামাজিক বার্তা থাকবে—এমন ছবি থেকে নিজেকে দূরে রাখব, আমাকে শুধু পপকর্ন বিনোদন দিতে হবে। একটা ছবিতে ভারী সংলাপ, অ্যাকশন, কমেডি, থ্রিলারসহ বিনোদনের সবকিছু থাকা প্রয়োজন। আমি শুধু একটা ভালো বাণিজ্যিক ছবি দিতে চেয়েছিলাম। এখন এই ছবিটা আসছে। এরপর আসবে ‘ড্রিম গার্ল টু’। এ ছবিটা তো পুরোপুরি সিঙ্গেল স্ক্রিনের জন্য। আমার আগামী তিন ছবিতে কোনো বার্তা নেই, শুধু বিনোদন আছে।’
বলিউডে এখন রিমেক ছবির জোয়ার। রিমেক ছবির প্রসঙ্গ উঠতে আয়ুষ্মান বলেন, ‘আমি মৌলিক বিষয় নিয়ে নির্মিত ছবিতে কাজ করি। রিমেকের ওপর ভরসা নেই। আমার ছবির রিমেক দক্ষিণে বেশি হয়। ‘বধাই হো’, ‘অন্ধাধুন’, ‘আর্টিকেল ফিফটিন’ দক্ষিণে রিমেক হয়েছে। আমি চাই দর্শকের কাছে অরিজিনাল কাহিনি পৌঁছে দিতে। আমাদের দর্শক এখন সারা দুনিয়াজুড়ে। যেকোনো ভাষার ছবি এখন যেকোনো ভাষার মানুষ উপভোগ করেন। সিনেমা বুঝতে হলে ভাষা আর বাধা নয়। তাই রিমেকের কোনো অর্থ নেই।’
এই সাক্ষাৎকারে অবধারিতভাবে হিন্দি বনাম দক্ষিণি ছবির রেষারেষির কথা উঠে আসে। কয়েক মাস ধরে হিন্দিভাষী রাজ্যের বুকে দক্ষিণি ছবির দাপট দেখা যাচ্ছে।
এই রেষারেষির প্রসঙ্গে আয়ুষ্মান বলেন, ‘দক্ষিণের ছবিতে মাটির গন্ধ আছে, ওখানকার নির্মাতারা জানেন দর্শক কী চান। দর্শকের রুচি অনুযায়ী ছবি নির্মাণ করেন তাঁরা। এ ছাড়া দক্ষিণে উত্তর ভারতের তুলনায় টিকিটের দাম কম। আমাদের এখানে ব্যাপ্তি অনেক বেশি। আর দর্শক এখানে বিভাজিত। ওটিটির কারণে বিভাজন আরও বেড়ে গেছে। এখানে মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গেল স্ক্রিনের দর্শক আলাদা। এই যেমন ধরুন আমার দর্শক মূলত মাল্টিপ্লেক্সের। আর মাল্টিপ্লেক্সের দর্শক এখন ওটিটিতে ঝুঁকেছেন। কোনো ছবি হলে না চললেও ওটিটিতে দারুণ চলছে।’