সমালোচনা, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন দীপিকা
গেল বছরটা দারুণ কেটেছে দীপিকা পাড়ুকোনের। তাঁর অভিনীত পাঠান, জওয়ান ব্লকবাস্টার হয়েছে। নতুন বছরের শুরুটাও দারুণ হয়েছে এই বলিউড তারকার। গত ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়া ফাইটার ছবিটি দিয়েও সবার মন জয় করেছেন। সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ফাইটার ছবিতে স্কোয়াড্রন লিডার মিনি রাঠোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন দীপিকা। রুপালি পর্দায় তাঁকে অনেক সময় ‘যোদ্ধা’ হয়ে উঠতে দেখা গেছে। পর্দার বাইরেও দীপিকাকে অনেক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে এমনটাই জানালেন তিনি।
সম্প্রতি মুম্বাইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে বলিউড তারকা দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে কথা হয়। সেখান বাংলাদেশের প্রথম আলো ছাড়াও ভারতের আরও তিন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। শীতের বিকেলে আড্ডার শুরুতে উঠে এসেছিল তাঁর বাস্তব জীবনে যোদ্ধা হয়ে ওঠার গল্প।
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে দীপিকা বলেন, ‘আমার আশপাশে অনেক “ফাইটার” আছে। আমি নিজেও একজন ফাইটার। মাত্র ১৬ বছর বয়সে অন্য এক শহর থেকে মুম্বাইয়ে এসেছিলাম। এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার চেনাজানা কেউ ছিল না। মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু, এরপর আসি অভিনয়ে। শূন্য থেকে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। কঠোর পরিশ্রম, অনেক লড়াই-সংগ্রামের পর আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছেছি। সমালোচনা, ব্যর্থতা, ভুল—এসব থেকে অনেক শিক্ষা নিয়েছি।’
কথায়–কথায় জানা গেল, মুম্বাইয়ের জীবনে একসময় চরম মানসিক অবসাদের মধ্য দিয়ে যেতে হয় দীপিকাকে। সেই কঠিন সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকের জীবনেই কঠিন সময় আসে। আর সেই সময় তাঁকে “যোদ্ধা” হয়ে উঠতে হয়। ২০১৪ সালে আমাকে প্রকৃত “ফাইটার” হয়ে উঠতে হয়েছিল। নিজের মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে আমাকে লড়াই করতে হয়েছিল। আমার জন্য তখন প্রতিটা দিন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসত। জীবনের সেই কঠিন সময়, আমার আজকের জীবনটা বদলে দিয়েছে বলে মনে করি।’
ফাইটার ছবির শুটিংয়ের আগে অনেক প্রস্তুতি নিয়েছেন দীপিকা। খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানতে ভারতীয় বিমানসেনাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন বলে জানালেন। দীপিকার ভাষায়, ‘প্রথম বিমানসেনার পোশাক পরে গর্ব বোধ করেছিলাম। আসামে ছবির শুটিংয়ের সময় আমরা ২০ দিনের মতো পাইলটদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া, ওঠা–বসা করেছি। আমরা তাঁদের কোয়ার্টারে থাকতাম। কয়েকজন পাইলট শুধু আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিযুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে একজন পাইলটের কাছ থেকে হাঁটাচলা, শারীরিক ভাষা, আদবকায়দাসহ আরও নানা কিছু শিখেছি।’
দীপিকা অভিনীত পাঠান, জওয়ান–এর পর এবার ফাইটার বক্স অফিসে সফলতা পেয়েছে। পরপর তিনটি ছবি এই পর্যায়ে হিট, এমন নজির সমসাময়িক কারও নেই। তাই তো কথার ফাঁকে প্রশ্ন ছিল, ছবি নির্বাচনের সময় কি অভিনেত্রী বক্স অফিসের কথা মাথায় রাখেন? উত্তরে দীপিকা জানান, ছবি নির্বাচনের সময় তিনি মোটেও আর্থিক সফলতার কথা মাথায় আনেন না। বললেন, ‘ছবির ক্ষেত্রে বক্স অফিসের বিষয়টা নিয়ে অনেক পরে ভাবি। একটা ছবি বাছাইয়ের সময় আমি প্রথমেই দেখি যে দর্শককে আমি নতুন কী দিতে চলছি। অবশ্য এটাও দেখি, ছবিটা দর্শককে কতটা প্রভাবিত করতে পারবে। এই ছবির মাধ্যমে আমি নতুন কী শিখছি।’
দীপিকা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, বক্স অফিসের কথা মাথায় রেখে কোনো ছবি নির্মাণ না করাই ভালো। বক্স অফিসের কথা ভাবলে একটা ছবির সৃজনশীল দিকের সঙ্গে অনেক বেশি সমঝোতা করতে হয়। সততা আর পরিশ্রমের সঙ্গে ছবি নির্মাণ করলে আর্থিক সফলতা আপনা–আপনি আসবে।’
নানামাত্রিক চরিত্রে অভিনয়ের কারণে দীপিকার ভক্ত-অনুরাগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আলোচনায় স্টারডম উঠতেই আবেগজড়ানো কণ্ঠে তিনি জানালেন, স্টারডম তিনি উপভোগ করেন। বললেন, ‘স্টারডম আমাকে রোমাঞ্চিত করে। আমি মনে করি, এটা ঈশ্বরের দেওয়া উপহার। তবে সবচেয়ে কঠিন এই স্টারডম ধরে রাখা, এটাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলা।’