হেমার সৌন্দর্যের রহস্য এবং লেখাপড়ার দৌড়

বলিউডের ড্রিম গার্ল হেমা মালিনীর জন্মদিনছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

তিনি বলিউডের ড্রিম গার্ল। বিখ্যাত ছবি ‘শোলে’র বাসন্তী! শুধু সিনেমার পর্দাতেই নয়, ক্যামেরার পেছনে পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েও নিজেকে অন্যভাবে তুলে ধরেছিলেন হেমা। আর তারপর বড় পর্দা থেকে সোজা রাজনীতির আঙিনায়। সেখানেও উজ্জ্বল হেমা মালিনী। আজ ১৬ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের আজকের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
হেমার এই জীবনযাত্রা মোটেই সহজ ছিল না। তিনি এমন এক অভিনেত্রী, যিনি পুরুষশাসিত বা নায়কশাসিত বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন। নায়কদের পাশাপাশি হেমাও ছিলেন বক্স অফিসের তুরুপের তাস। তিলে তিলে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন তিনি। সংসার সামলিয়েছেন। ভারতের রাজনীতিতেও হেমা নিজেকে প্রমাণ করেছেন। নাচ, অভিনয়, সংসার কিংবা রাজনীতি—যখন যে অঙ্গনে মন দিয়েছেন, সেখানেই সফল হয়েছেন এই চিরসবুজ তারকা।
তামিল ছবি দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও বলিউডে ‘শোলে’, ‘সীতা অউর গীতা’, ‘মিরা’, ‘কিনারা’, ‘সন্ন্যাসী’, ‘মেহবুবা’, ‘ড্রিম গার্ল’, ‘প্রেম নগর’, ‘খুশবু’র মতো ছবি দিয়েই প্রমাণ করেন, তিনি ‘স্টার ম্যাটেরিয়াল’ কি না। অল্প সময়েই হয়ে ওঠেন সবার ড্রিম গার্ল। মোট ১১ বার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান। ২০০০ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মাননা লাভ করেন।

ছোট্ট চরিত্র দিয়ে শুরু
ক্যারিয়ারের শুরুতে ‘তারকাসুলভ’ চেহারা নেই বলে তামিল পরিচালক সিভি শ্রীধরের সিনেমা থেকে বাদ পড়েছিলেন হেমা। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করেন জয়ললিতা। ১৯৬৫ সালে ‘পাণ্ডব বনবাসাম’ ছবির একটি ছোট্ট চরিত্রের মাধ্যমে প্রথম বলিউডে প্রবেশ। ১৯৬৮ সালে ‘স্বপ্নো কা সওদাগর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মূল চরিত্রে রুপালি পর্দায় অভিষিক্ত হন। অবশ্য অনেক বাধা পেরোতে হয়েছে তাঁকে।

হেমা মালিনী

সর্বাধিক উপার্জনকারী
তখন বলিউডে পুরুষ শাসন চলছে। একের পর এক তারকার জয়জয়কার। এরই মধ্যে পাল্লা দিয়ে শীর্ষ ১০ উপার্জনকারী শিল্পীর তালিকায় চলে আসেন হেমা মালিনী। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে বলিউডের চতুর্থ সর্বাধিক উপার্জনকারী শিল্পী ছিলেন তিনি।
লেখাপড়ায় গোল্লা
পর্দায় যথেষ্ট নামডাক ও উপার্জনে এগিয়ে থাকলেও লেখাপড়ায় খুব একটা মনোযোগী ছিলেন না হেমা মালিনী। তাঁর দৌড় দশম শ্রেণি পর্যন্ত। দশম শ্রেণিতে উঠেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন হেমা। ছোট থেকেই তিনি নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, এটাই হয়তো কারণ।

যখন জিতেন্দ্রর সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যায়, তখন দুজনই পরিচিত মুখ। জিতেন্দ্র উচ্চবংশের ছেলে। পাত্র হিসেবে জিতেন্দ্রকে পছন্দ ছিল হেমার মা-বাবারও। জিতেন্দ্রর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর একদম শেষ মুহূর্তে নাকি তা ভেঙে দেন হেমা।

বাড়ি থেকে বহু চেষ্টা করা হয় হেমা মালিনীর বিয়ে জিতেন্দ্রর সঙ্গে দিতে, যাতে ধর্মেন্দ্রর কাছ থেকে সরিয়ে আনা যায় হেমাকে। শোনা যায়, সঞ্জীব কুমারও হেমা মালিনীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। হেমা প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সঞ্জীব মদের নেশায় ডুবে যান। নিজের আত্মজীবনীতে হেমা লিখেছেন, বলিউডের প্রয়াত অভিনেতা সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব ছিল তাঁর। মা-বাবার অমতে ধর্মেন্দ্রকে বিয়ে করেন।

‘শোলে’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনী জুটির ছবি তুলছেন অমিতাভ বচ্চন। ছবি: ফেসবুক

ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনীর প্রথমবার পর্দা ভাগাভাগি ১৯৭০ সালে, ‘তুম হাসিন ম্যায় জওয়ান’ সিনেমায়। দুজনে একসঙ্গে অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। সেই সূত্রে প্রেম। হেমার পরিবার কিছুতেই মেনে নেবে না। ওদিকে ধর্মেন্দ্রর সংসার আছে। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে স্বপ্নসুন্দরীকে জিতে নেন ধর্ম সিংহ দেওল, বিবাহিত তারকা ধর্মেন্দ্র। ১৯৭৯ সালে বীরু-বাসন্তীর চার হাত এক হলো।
শোনা যায়, দুজনই বিয়ের আগে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। কারণ, নায়ক হয়ে ওঠার আগে ১৯৫৪ সালে প্রকাশ কউরের সঙ্গে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল ধর্মেন্দ্রর।
প্রসঙ্গত, ধর্মেন্দ্রর আগের ঘরের সন্তান সানি দেওলের চেয়ে হেমা মালিনী বয়সে মাত্র ছয় বছরের বড়। শিল্পকলার প্রতি দারুণ আকর্ষণ রয়েছে হেমার।

নাট্যবিহার কলাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দায়ও নিজের অভিনয়দক্ষতার ছাপ রেখেছেন হেমা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অভিনয়ে সফল হলেও নাচই হেমার জীবনের মূলমন্ত্র। নাচই তাঁর প্রথম ভালোবাসা। নাচে পটু হেমা ভারতীয় সব ধরনের নাচে দক্ষ। পশ্চিমা ঘরানার কিছু নাচও জানা আছে তাঁর।

শশী কাপুর ও হেমা মালিনী

হেমার সৌন্দর্যের রহস্য

হেমার সৌন্দর্যের রহস্য জানার আগ্রহ অনেকেরই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সৌন্দর্যের রহস্য পানি। প্রচুর পানি পান করে ত্বকের পরিচর্যা করেন হেমা মালিনী।

রাজনীতির মঞ্চে হেমা মালিনী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।

এখনকার হেমা
প্রতিদিন সকাল শুরু করেন প্রাণায়াম ও যোগব্যায়াম দিয়ে। ত্বকে কখনো সাবান ব্যবহার করেন না এই অভিনেত্রী। এর পরিবর্তে বেসন ও মালাইয়ের মিশ্রণ পুরো শরীরে মাখেন। এই অভিনেত্রী একজন নিরামিষভোজী। তিনি সব সময় সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন উপবাস করেন। চাল বা গমজাতীয় খাবার থেকে ওই দুই দিন সম্পূর্ণ দূরে থাকেন তিনি।
সূত্র: হেমা মালিনীর জীবনী ‘বিয়ন্ড দ্য ড্রিম গার্ল’