নিজের শর্তে বাঁচেন তিনি
ওটিটি, বড় পর্দা থেকে মঞ্চ—সর্বত্রই রাধিকা আপ্তের সমান দাপট। যেকোনো চরিত্রে অভিনয় করতে এই নায়িকা আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু একটা বিষয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকে। প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারের শুরুতেই রাধিকা বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে কাজ করার আত্মবিশ্বাস আছে। মঞ্চে অভিনয়ের সময় আমি রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াই। তবে অভিনয় ছাড়া কোনো পুরস্কার নেওয়া বা দেওয়ার সময় মঞ্চে যেতে আমার ভীষণ ভয় করে। তখন আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। মনে হয়, মঞ্চে পা রাখার আগেই অজ্ঞান হয়ে যাব।’
রাধিকাকে গত সপ্তাহেই দেখা গেছে নেটফ্লিক্সের প্রশংসিত ছবি ‘মনিকা, ও মাই ডার্লিং’–এ। এ ছবিতে পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্র করেছেন তিনি। ওয়েব ছবিতে নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে এই নায়িকা বলেন, ‘এমন চরিত্র আগে কখনো করিনি। তাই শুরুতে একটু আত্মবিশ্বাস কম ছিল। আসলে আমাকে আমার কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে অভিনয় করতে হয়েছিল। আমার চরিত্রের কমেডি একদম আলাদা ছিল। কমেডি করা অনেক কঠিন। তাই আমার এ চরিত্র নিয়ে বেশ চাপে ছিলাম। তবে এই ছবিতে দুর্দান্ত সব শিল্পী কাজ করেছেন—রাজ (রাজকুমার রাও), সিকান্দার (খের), হুমার মতো অভিনয়শিল্পীদের পাশে পেয়ে আমার কাজটা আরও সহজ হয়ে গিয়েছিল।’
রাধিকা আরও বলেন ছবিতে ভালো সহ–অভিনেতা পাওয়া তাঁর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, ‘একটা সিনেমাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ভালো সহ–অভিনেতা পাশে থাকা জরুরি। ভালো অভিনেতাকে পাশে পেলে নিজের কাজ আরও উন্নত হয়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে স্বার্থপর অভিনেতার সংখ্যাই বেশি। তারা শুধু নিজের সংলাপটুকু বলে কেটে পড়ে। অভিনয়ের আরেক নাম প্রতিক্রিয়া। নওয়াজ, রাজকুমার, বিজয় ভার্মা, বিক্রান্ত ম্যাসি, গুলশান দেবাইয়ারা সহ–অভিনেতা হিসেবে দুর্দান্ত। তাদের মতো অভিনেতাদের পাশে পেয়ে নিজেকে আরও উন্নত করতে পেরেছি। অভিনেতা হিসেবে তারা অত্যন্ত উদার।’
রাধিকা এমি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এই সম্মান খুব কমসংখ্যক অভিনেত্রীর কপালে জুটেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার মনে হয়, দুনিয়াতে এমন অনেক ভালো অভিনেতা আছেন, যাঁরা পুরস্কার পাননি। এমন অনেকে পুরস্কার পেয়েছেন, যাঁদের অভিনয় অতটা ভালো নয়। শুধু অভিনয়ের ক্ষেত্রে নয়, জীবনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে দেখেছি।’
বলিউডে দীর্ঘ সময় ধরে রাজত্ব করার পরও এখানকার চাকচিক্যের সঙ্গে নিজেকে মানাতে পারেননি রাধিকা। নিজের শর্তে বাঁচতে ভালোবাসেন তিনি। তাই রাধিকা সোজাসাপটা বলেন, ‘হিন্দি ছায়াছবির দুনিয়ায় অভিনেতাদের ঘিরে এক অদ্ভুত ইমেজ তৈরি করা হয়েছে। তাঁকে মার্সিডিজে চড়ে আসতে হবে, অভিনেতারা এক পোশাক দ্বিতীয়বার পরতে পারবেন না, তাঁদের ঘিরে আরও নানা ইমেজ প্রতিনিয়ত বানানো হচ্ছে। অভিনয়ের চেয়ে তাঁরা বেশি নিজের ইমেজ তৈরিতে বুঁদ হয়ে আছেন। আমি আমার মর্জিমতো চলতে ভালোবাসি। অনেক অভিনেতা নিজেকে শুধুই বড় পর্দার জন্য ভাবেন। আমি বুঝে উঠতে পারি না প্ল্যাটফর্মে কী যায়–আসে। আমরা অভিনেতা, অভিনয় করাটাই আমাদের কাজ।’
রাধিকা আরও বলেন, ‘এই ইমেজ তৈরি করতে না পারা আমার ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলেছে। হিন্দি ছবিতে নানা ধরনের চরিত্রে আমি কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু সে সুযোগ পাইনি। কিন্তু ওটিটিতে আসার পর আন্তর্জাতিক ছবির দরজা আমার জন্য খুলে গেছে। এখন আমার কাছে তিনটে আন্তর্জাতিক প্রকল্প আছে।’
আজও কি রাধিকাকে প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে হয়, মুচকি হেসে তিনি বলেন, ‘এসব এখন জলভাত হয়ে গেছে। কারণ, প্রায়ই আমি এর শিকার হই। এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাই না।’