এই কারিনাকে কে চিনত

‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি

প্রচণ্ড মানসিক টানাপোড়েন নিয়ে নতুন শহর বাকিংহামে কাজ করতে আসে জাসমিত ভারমা ওরফে জ্যাস। এই ব্রিটিশ-ভারতীয় গোয়েন্দা বাকিংহামে এসেই মুখোমুখি হয় একটি মিসিং কেসের। ইশপ্রীত কোহলি নামের ১০ বছরের এক শিশু নিখোঁজ। নিজের অতীত স্মৃতি ভুলতে না পারায় এ তদন্তে প্রথমে যুক্তই হতে চায়নি জ্যাস। কিন্তু ঘটনার পরদিনই পাওয়া যায় ইশপ্রীতের মরদেহ!

এক নজরে
সিনেমা:
‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’
জনরা: ক্রাইম থ্রিলার
পরিচালক: হংসল মেহতা
অভিনয়: কারিনা কাপুর খান, রণভীর ব্রার, অ্যাশ টেন্ডন, প্রভলিন সাধু, কিথ অ্যালেন

এ খুনের তদন্ত শুরুর পর অস্বাভাবিক দ্রুততায় ধরা পড়ে যায় খুনি। স্বীকার করে নেয় সে তার সব অপরাধ। কিন্তু অনেক রহস্য যেন তখনো সমাধান হয়নি। জাসমিত প্রশ্ন তোলে তদন্তের নেতৃত্বে থাকা সহকর্মী হার্ডি প্যাটেলকে নিয়ে। কিন্তু হাতে কোনো প্রমাণ না থাকায় পিছিয়ে আসতে হয় জ্যাসকে। শুনতে হয় নিজের অতীত নিয়ে নানা কথাও।

কিন্তু এ ঘটনা থেকে মন সরাতে পারে না জাসমিত। খুঁজতে থাকে ক্লু, যা তাকে নিয়ে যাবে আসল খুনির কাছে। একটা সময় জাসমিত বুঝতে পারে, এ শহরের বেশির ভাগ মানুষ অভিবাসী হলেও তাদের মধ্যে রয়েছে ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষ। এ কারণে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়, রাগ আর ঘৃণা। এখানেই কি সে খুঁজে পায় ছোট্ট ইশপ্রীতের আসল মৃত্যুর কারণ? একে একে বের হয়ে আসতে থাকে নানা কিছু, যা চমকে দেয় বারবার।

‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি

হংসল মেহতার আগের কাজগুলোর মতোই ‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’–এ রয়েছে একটি নীরব-অন্ধকার দিক। এখানে পরিচালক গল্প যেমন হালকা করার চেষ্টা করেননি, তেমনি জোর করে ঢোকাননি ভয় ধরানো উপাদান। কাহিনি এগিয়ে যায় ধীরগতিতে। কাহিনি অনেক ঘটনাবহুল হলেও ক্রাইম ড্রামা সিনেমায় যে উত্তেজনা থাকে, তার পরিমাণ ছিল নগণ্য।

সিনেমাটি ইংল্যান্ডের বাকিংহ্যামশায়ারে শুটিং হলেও এখানে দেখানো হয়নি বাকিংহ্যামশায়ারের নন্দিত জায়গাগুলো। কাহিনির প্রয়োজনে নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানই দেখানো হয়েছে বারবার, যার সঙ্গে মানিয়ে যায় এ সিনেমার ধূসর আবহ।

‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি

পরিচালক এখানে মাদক, যৌন প্রবণতা দমন, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, পারিবারিক নির্যাতনের মতো অনেক সমস্যা একসঙ্গে দেখাতে চেয়েছেন। এসব সামাজিক সমস্যা কখনো কখনো খুনের মূল ঘটনাকে ছাপিয়ে যায়। তবে অনেক কিছু দেখাতে গিয়ে চিত্রনাট্যের কোথাও যেন ফাঁকা রয়ে যায়। মনে হয়, কোনো কিছুই ঠিকভাবে দেখানো হলো না। বড় পরিসরে কিছু বিষয় দেখালে গল্প হয়তো দৃঢ়ভাবে ছাপ ফেলতে পারত।

‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি

তবে এই সিনেমার যাঁর কথা না বললেই নয়, তিনি কারিনা কাপুর খান। বাণিজ্যিক ধারা আর গ্ল্যামারাস লুকের বাইরে গিয়ে কারিনার নো-মেকআপ লুক নজর কাড়বে যে কারও। এখানে তিনি গোয়েন্দা পুলিশ হিসেবে এতই ভালো অভিনয় করেছেন যে অন্য চরিত্রদের শুধু পার্শ্বচরিত্রই মনে হয়। কেবল অভিনেত্রী হন, কারিনা সিনেমাটির অন্যতমও প্রযোজকও। এটি তাঁর প্রথম প্রযোজনা। নিজের প্রযোজিত প্রথম সিনেমায় নিরীক্ষাধর্মী একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি, এ জন্যও কারিনার সাধুবাদ প্রাপ্য।

এ ছাড়া রণভীর ব্রার ছেলেহারা বাবার চরিত্রে ভালো অভিনয় করেছেন। অ্যাশ টেন্ডনের গোয়েন্দা হিসেবে অভিনয়ও নজর কেড়েছে। যদিও মায়ের চরিত্রে প্রভলিন সাধুর অভিনয় ছিল বেশ সাদামাটা। কিথ অ্যালেনের চরিত্র ছোট হলেও নজর কেড়েছে।
‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’-এর গল্প একটি খুনের ঘটনা থেকে শুরু। তবে এতে শুধু খুনের রহস্য উঠে আসেনি। কাহিনির একদিকে উঠে এসেছে শোককে শক্তি বানানোর চেষ্টা; অন্যদিকে প্রকাশ পেয়েছে অবদমিত ক্ষোভের বিস্ফোরণ। তাই ‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’কে শুধুই একটি রোমাঞ্চকর থ্রিলার বলা যায় না।

‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’–এর পোস্টার। আইএমডিবি

এতে খুনের রহস্যের সমাধান হয় ঠিকই, তবে কে খুন করেছে, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হয় একদম শেষ দৃশ্য পর্যন্ত। তাই শোকাবহ ধূসর আবহে ‘দ্য বাকিংহাম মার্ডারস’–এর গল্প কিছুটা ধীরগতিতে এগোলেও পরিচালক যা দেখাতে চেয়েছেন, তাতে তিনি সফল বলাই যায়।

আরও পড়ুন

১৩ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ১০৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের এ সিনেমা। সামনে এটি স্ট্রিমিং হবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে।