আবার পর্দায় লোকেশ-জাদু
বাণিজ্যিক আর শৈল্পিক ঘরানার মিশেলে সিনেমা বানান লোকেশ কঙ্গরাজ। দক্ষিণ ভারতের এই নির্মাতার সিনেমা সমালোচক-নন্দিত হয়, বক্স অফিসে ব্যবসাও করে। গত বছর ‘বিক্রম’-এর মতো সুপারহিট সিনেমার পর পরিচালক হাজির লিও নিয়ে। গত বৃহস্পতিবার মুক্তির পর থেকে বক্স অফিসে দুরন্ত গতিতে ছুটছে থালাপতি বিজয় অভিনীত সিনেমাটি।
‘মানাগারাম’ দিয়ে ২০১৭ সালে পরিচালনা শুরু করেন লোকেশ। প্রথম সিনেমাতেই সাফল্য। হাইপার লিংক থ্রিলারটি দেখে সমালোচকেরা বলেন, ‘মাস্ট ওয়াচ’, বক্স অফিসে লক্ষ্মী লাভও হয় যথেষ্ট। পরের কয়েক বছরে ‘কাইথি, ‘মাস্টার’ আর ‘বিক্রম’ বানিয়েছেন পরিচালক। এর মধ্যে ‘কাইথি’কে বলা হয় তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা সিনেমা। ‘কাইথি’ আর ‘বিক্রম’ লোকেশ সিনেমাটিক ইউনিভার্সের (এলসিইউ) অংশ। ‘লিও’ সেই ইউনিভার্সের তৃতীয় কিস্তি।
সিনেমার গল্প কাশ্মীরের এক ক্যাফের মালিক পাথিবান ওরফে পার্থিকে নিয়ে। আপাতদৃষ্টে নিরুত্তাপ জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ পার্থির শান্ত জীবন হয়ে ওঠে অশান্ত, ভুলে যাওয়া অতীতে ফিরে যেতে হয় তাঁকে। এরপর কী হয়, তাই নিয়ে গল্প। সিনেমাটিতে আছে এক ক্রমিক খুনি, বেপরোয়া পুলিশ কর্মকর্তাসহ নানা ধরনের চরিত্র।
কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া ট্রেলার দেখে বা সংবাদমাধ্যম সূত্রে অনেকেই আঁচ করতে পেরেছেন লিও প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত কানাডীয় নির্মাতা ডেভিড ক্রোনেনবার্গের ক্ল্যাসিক সিনেমা ‘আ হিস্ট্রি অব ভায়োলেন্স’ থেকে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, ক্রোনেনবার্গের সিনেমা দ্বারা প্রভাবিত হলেও লিও নিজের মতো করেই বানিয়েছেন লোকেশ। তাঁরা আরও বলছেন, এটি পরিচালকের সেরা সিনেমা নয় অবশ্যই কিন্তু তিনি যেভাবে গল্প বলেছেন, সেটা তারিফ করার মতো। ভারতের দুই প্রখ্যাত সমালোচক অনুপমা চোপড়া ও ভারদ্বাজ রঙ্গন মনে করেন, হলে উপভোগ করার মতো দুর্দান্ত এক সিনেমা লিও। পরিচালক যেভাবে ভক্তদের জন্য বিভিন্ন দৃশ্য তৈরি করেছেন, নায়ককে যেভাবে দেখিয়েছেন, সেটা হলভর্তি দর্শকের সঙ্গে না দেখলে বড় মিস।
বেশির ভাগ দক্ষিণি সিনেমার নির্মাতারা সেভাবে প্রচার করেন না। তবে বিজয়-ভক্তরা তো আর প্রচারের ধার ধারেন না। গত বৃহস্পতিবার মুক্তির পর দুই দিনেই ভারতে সিনেমার আয় ১০০ কোটি রুপি ছাড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী এই আয় প্রায় দ্বিগুণ। বিজয়ের অভিনয়, লোকেশের পরিচালনা ছাড়াও দর্শক-সমালোচক একবাক্যে প্রশংসা করেছেন সিনেমার আবহ সংগীত। কয়েক বছর ধরেই তরুণ সংগীত পরিচালক অনিরুদ্ধ রবিচন্দ্রনের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। ব্যতিক্রম ছিল না এ সিনেমাও। চলতি বছর আলোচিত আরও দুই সিনেমা ‘জওয়ান’ ও ‘জেলার’-এর সংগীতও তাঁরই করা।
থালাপতি বিজয় ছাড়াও ‘লিও’-এর বিভিন্ন চরিত্রে আছেন তৃষা কৃষ্ণান, সঞ্জয় দত্ত, গৌতম মেনন, প্রিয়া আনন্দ প্রমুখ। প্রায় ৩০০ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমাটিতে বিজয় একাই পারিশ্রমিক নিয়েছেন ১২০ কোটি রুপি! ছবিতে বিজয়ের ধূসর চরিত্রের লুক চূড়ান্ত করা হয় ৩০টি আলাদা লুক দেখার পর। ছবিতে পঞ্চমবারের মতো তাঁর জুটি হয়েছেন তৃষা। ‘লিও’-এর অন্যতম খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয়।
অভিনেতা জানিয়েছেন, মাত্র এক লাইন গল্প শুনেই চরিত্রটি করতে রাজি হন তিনি। সিনেমার একটি অতিথি চরিত্রে আছেন নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপও।
‘লিও’-এর বড় অংশের শুটিং হয়েছে কাশ্মীরে। এ ছাড়া চেন্নাই, হায়দরাবাদের রামুজি ফিল্মসহ আরও কয়েকটি জায়গায় হয়েছে সিনেমার কাজ।
লোকেশের পরের তিন সিনেমা চূড়ান্ত হয়ে আছে। এরপর রজনীকান্তকে সিনেমা বানাবেন তিনি, এরপর আসবে ‘কাইথি ২’ ও ‘বিক্রম ২’। নির্মাতা আগেই জানিয়েছিলেন, মোটমাট দশটি সিনেমা বানাবেন তিনি। পাঁচটি তো হয়েই গেল, এখন বাকি পাঁচটি দেখার অপেক্ষা।