নিজেকেই সবচেয়ে বড় ‘যোদ্ধা’ মনে করেন অনিল
চার দশকের বেশি সময় ধরে হিন্দি ছবির দুনিয়ায় রাজত্ব করছেন অনিল কাপুর। ‘অ্যানিমেল’-এর পর ‘ফাইটার’ ছবিতেও তিনি অপ্রতিরোধ্য। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে ৬৭ বছর বয়সী এই অভিনেতার মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি
সিনেমার ক্যারিয়ারই ৪৫ বছরের! অনিল কাপুরের সঙ্গে আলাপের শুরুতেই উঠল তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ার প্রসঙ্গ। অভিনেতা বললেন, ‘আজও দর্শক আমার অভিনয় উপভোগ করছেন। আমাকে তাঁরা ভালোবাসা দিচ্ছেন। পরিচালক, নির্মাতারা আমাকে কাজের সুযোগ দিচ্ছেন। আর এসব কিছুর জন্য আমাকে প্রতিদিনই “যোদ্ধা” হয়ে উঠতে হয়।’ বাস্তবে তাঁর দেখা সবচেয়ে বড় ‘যোদ্ধা’ কে, জানতে চাইলে হেসে জবাব দেন, ‘আমি নিজেকে সবচেয়ে বড় যোদ্ধা বলে মনে করি। বিয়ে করে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ জয় করেছিলাম। এরপর বাবা, এখন দাদু হয়ে একের পর এক যুদ্ধে জয় লাভ করেছি আমি। সিদ্ধার্থ আনন্দ (পরিচালক) আমাকে “ফাইটার” ছবির গল্প শোনানোর পর থেকে এক নতুন “ফাইট” শুরু হয়েছিল। কারণ, পর্দায় আমাকে ৪২ বছরের মানুষের মতো দেখতে হতে হবে। তাই নিজের বাইরে বড় যোদ্ধা হিসেবে আর কাউকে দেখতে পাই না আমি (সশব্দ হেসে)।’
অনিল কাপুরের কথায় প্রতিটি ছবি তাঁর দিকে নতুন চ্যালেঞ্জ বয়ে আনে। তিনি বলেন, ‘আজও যেকোনো ছবি, চরিত্র, দৃশ্য আমার দিকে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। এখনো সেটে পা রাখার আগে উদ্বিগ্ন থাকি। সব সময় চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দিতে।
নিজেকে আগের চাইতে আরও ভালো অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করার তাগিদ সব সময় অনুভব করি।’ এত দিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাটানোর পর আজও নিজের কাজকে সমানভাবে উপভোগ করেন অনিল। তিনি বলেন, ‘আমি এমন এক পেশা বেছে নিয়েছি, যেটাকে আমি ভালোবাসি। প্রতিদিন সেটে যেতে আজও আমি রোমাঞ্চিত হই। এখনো পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি, এর থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না বলে আমি মনে করি। এই পেশার জন্য আমি নানা জায়গায় ঘুরতে পারি। নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়।’
অনিল কাপুর অভিনীত একাধিক চরিত্র অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘মুন্না’, ‘মজনু’, ‘লক্ষ্মণ’ থেকে ‘বলবীর সিং’—এমন অনেক চরিত্রের কথাই বলা যায়। এ প্রসঙ্গ উঠতেই অনিল বলেন, ‘শুরুতে আমাকে সবাই চরিত্রের নামে ডাকতেন। কেউ তখন আমার নামে চিনতেন না।
এমনকি “অ্যানিমেল” মুক্তির পর অনেকে “বলবীর সিং” বলে সম্বোধন করছেন। যৌবনে অভিনয় আমার কাছে চাকরির মতো ছিল। ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করতাম তখন। হিন্দিতে সেভাবে কাজ পাচ্ছিলাম না, তাই দক্ষিণে কাজ করা শুরু করেছিলাম। এরপর ধীরে ধীরে এখানেও (বলিউড) কাজ পেতে শুরু করি।’
‘মুন্না’, ‘লক্ষ্মণ’-এর মতো আরও অনেক চরিত্র অনিলকে তারকা বানিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমার অভিনীত চরিত্রগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলেই সবার এত ভালোবাসা পেয়ে এসেছি। দিলীপ কুমার, নাসিরুদ্দিন শাহ, পদ্মিনী কোলহাপুরির মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করার সুবাদেই পরিচিতি পেয়েছি।
তাঁরা আমার সঙ্গে তখন কাজ না করলে আজ আমাকে কেউ চিনতেন না। ওই সময়কার শীর্ষ স্থানীয় নায়িকাদের সঙ্গে আমি কাজের সুযোগ পেয়েছি। আমি শুধু অভিনেতাই হতে চেয়েছিলাম। তারকা হওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। আজ সেটা হয়েছি মানুষের ভালোবাসা আর ওপরওয়ালার আশীর্বাদে। আমার থেকে কত প্রতিভাবান, সুদর্শন ছেলে অভিনেতা হতে আসে। কিন্তু ঈশ্বর আমাকে এই সৌভাগ্য দিয়েছেন। আমি অভিনেতা থেকে তারকা হয়ে ওঠাতে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করি।’