আমিরের আক্ষেপ, আমিরের ইচ্ছা

আমির খান। এএফপি

‘সব সময় আমার লক্ষ্য ছিল দর্শকের মন জয় করা। কিন্তু আমি আমার পরিবার ও সন্তানদের সময় দিতে পারিনি। সন্তানেরা যখন ছোট ছিল, তখন ওদের চিন্তাভাবনা এবং ওরা কী চায়, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। অথচ আমি আমার টিম ও পরিচালকদের ব্যাপারে সবকিছু জানতাম। কিন্তু আমার সন্তানদের কতটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো, সে ব্যাপারে কিছুই আমার জানা ছিল না।’ আবেগপ্রবণ হয়ে কথাগুলো বলেছিলেন বলিউড সুপারস্টার আমির খান। তখন তাঁর চোখের কোণে জল চিকচিক করছিল!

আমির খান
এএনআই

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে হাজার হাজার ভক্তের হৃদয়ে বাস করেন আমির খান। দশকের পর দশক ধরে বলিউড সাম্রাজ্যে রাজত্ব করছেন তিনি। সিনেমার জগতের মানুষদের নিয়ে আমির গড়ে তুলেছেন এক পরিবার। কিন্তু অজান্তেই নিজের পরিবার তাঁর থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। ৫৯ বছর বয়সী এই অভিনেতার গলায় এখন শুধুই আক্ষেপ।

আমির এই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে তাঁর মেয়ে আইরা মানসিক অবসাদ থেকে বের হয়ে অনেক ভালো আছে। এখানেও আক্ষেপ, ‘ওই সময় আইরার আমাকে প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমি ওকে সময় দিতে পারিনি। আমার ছেলে জুনাইদ আমাকে ছাড়াই বড় হয়ে উঠেছে।’

আমির খান ও কিরণ রাও। এএনআই

সম্প্রতি দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে আমির জানিয়েছেন যে তিন বছর আগেই সিনেমা জগৎ ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন তিনি। পরিবারকে সময় দিতে চেয়েছিলেন। আমিরের এই সিদ্ধান্তে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী কিরণ রাও, আইরা আর জুনাইদ ভীষণ অবাক হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে আমিরের ভাষ্য, ‘জুনাইদ আর আইরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিল যে আমি কেমন করে সিনেমা ছাড়তে পারি। কারণ, ৩০ বছর ধরে আমি পাগলের মতো শুধু এটাই করে এসেছি।’ এই বলিউড তারকা জানান যে তাঁর এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছিলেন কিরণ। আমির বলেন, ‘কিরণ আমায় বলেছিল যে আমি এখন এর গুরুত্ব বুঝতে পারছি না। ও বলেছিল যে আমি সিনেমার সন্তান। সিনেমার জন্যই জন্মেছি। কিরণ বলেছিল যে সিনেমা ছাড়া আমার জীবন দুনিয়া ছাড়ার সমান। কিরণ আরও বলেছিল যে ও ওই দুনিয়ার-ই এক অংশ। তাই আমার সিনেমাকে ছাড়া মানে ওকেও ছাড়া।’

আমির দীর্ঘদিন ধরে তিল তিল করে বানিয়েছিলেন তাঁর স্বপ্নের ছবি ‘লাল সিং চড্ডা’। এই ছবির ভরাডুবির পর মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। মানসিক অবসাদ কাটিয়ে ওঠার জন্য এই বলিউড সুপারস্টার থেরাপিও নিয়েছিলেন। বেশ কিছু দিন সিনেমার জগৎ থেকে দূরে ছিলেন তিনি।

আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’ ছবিটি দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে। আইএমডিবি

কিছুদিন আগে দিল্লির এক অনুষ্ঠানে আমির বলেছিলেন, ‘“লাল সিং চাড্ডা”র পর আমার আর একটা ছবির শুটিং করার কথা ছিল। কিন্তু আমি বিরতি নিয়েছিলাম। অভিনেতা হিসেবে আমি যখন কোনো ছবিতে কাজ করি, তখন সেই ছবির মধ্যে আমি এতটাই হারিয়ে যাই যে আমার জীবনে তখন আর কারও অস্তিত্ব থাকে না। “লাল সিং চাড্ডা”র পর আমি “চ্যাম্পিয়ন” নামের একটা ছবি করতে চেয়েছিলাম। এই ছবির গল্প বেশ সুন্দর। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল যে আমার এবার বিরতি নেওয়া প্রয়োজন। আর আমি আমার পরিবার, মা ও সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে চেয়েছিলাম।’

১৯৮৬ সালে প্রথম রীনাকে বিয়ে করেছিলেন আমির। আমির আর রীনার দুই সন্তান হলো জুনাইদ আর আইরা। ২০০২ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। পরে কিরণ রাওকে বিয়ে করেন আমির। সারোগেসির মাধ্যমে আমির ও কিরণের জীবনে আসে ছেলে আজাদ। ২০২১ সালে এই দম্পতি আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

রীনা দত্ত ও আমির খান। এএনআই

আমির আবার বিয়ে করবেন কি না জানতে চাইলে অভিনেতার জবাব, ‘বিয়ে একটা ক্যানভাস। দুজন মানুষের ওপর নির্ভর করে তাঁরা এই ক্যানভাসকে কীভাবে রাঙিয়ে তুলবেন। আর আমার এখন ৫৯ বছর বয়স। আমার মনে হয় না যে আমি আবার বিয়ে করতে পারব। এই মুহূর্তে আমার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক সম্পর্ক। আমি আবার আমার পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছি। আমার সন্তান আর আমার ভাই-বোনেদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছি। আর আমি আমার কাছের মানুষদের সঙ্গে এখন দারুণ আনন্দে আছি। আমি এক উন্নত মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে এখন কাজ করছি।’

অবসর বিষয়ে কিছুটা মত পাল্টেছেন আমির। গত আগস্টে সুপ্রিম কোর্টে আয়োজিত ‘লাপাতা লেডিস’ ছবির বিশেষ প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানে আমির জানান, ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি কাজ করবেন। ‘আমি খুব শিগগিরই আমার ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে পৌঁছাতে চলেছি। কোভিডের সময় আমার বয়স ছিল ৫৬ বছর। তখন ভেবেছিলাম যে আমার কাছে আর ১৫ বছর আছে। ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত আমি সক্রিয়ভাবে কাজ করব।’

আরও পড়ুন

‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ আরও জানান যে ছায়াছবির জগৎ ও সমাজ থেকে তিনি প্রচুর ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেয়েছেন। তাই এর প্রতিদান হিসেবে তিনি বেশি বেশি ছবি নির্মাণ করতে চান। তাঁর ভাষ্য, ‘সমাজ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। তাই আমি সিনেমার মাধ্যমে সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই। প্রতিবছর সিনেমায় অভিনয় করতে পারব না, তবে আমি সিনেমা প্রযোজনা করতে পারব। নতুন প্রতিভাবান অভিনেতাদের জন্য আমি একটা মঞ্চ বানাতে চাই, যাতে মানুষ “লাপাতা লেডিস”-এর মতো ছবি দেখতে পান।’