কঠিন সময়ে নার্গিসের মন্ত্র
অনেক কষ্টেসৃষ্টে দু-চারটে শব্দ হিন্দিতে বললেন মার্কিন বংশোদ্ভূত বলিউড নায়িকা নার্গিস ফাখরি। প্রায় এক দশক তিনি কাটিয়ে ফেলেছেন বলিউড সাম্রাজ্যে। কিন্তু তাঁর হিন্দির অবস্থা এখনো তথৈবচ। সম্প্রতি বলিউড নায়িকা নার্গিস ফাখরির সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি। আড্ডার শুরুতে হেসে তিনি বলেন, ‘না, হিন্দিটা এখনো শিখে উঠতে পারিনি। তবে একটু–আধটু বুঝতে পারি। সাত বছর ধরে হিন্দির ক্লাস করছি। কিন্তু আখেরে খুব একটা লাভ হয়নি। আসলে হিন্দিতে কথা বলার সঙ্গীর অভাব। আমার কর্মচারী, গাড়ির ড্রাইভাররাও আমার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলেন।’
‘রকস্টার’ দিয়ে বলিউডের খাতা খুলেছিলেন মার্কিনি মডেল নার্গিস। এক দশকের বেশি বলিউডে কাটানোর প্রসঙ্গে হেসে বলেন, ‘কী বলছেন! বলিউডে ১০ বছর পার করে ফেলেছি? সত্যি বিশ্বাসই হচ্ছে না। কিন্তু শরীরের বয়স ১০ বছর বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে না।’ এই এক দশক নার্গিসের কাছে শিক্ষণীয় ছিল বলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই নতুন কিছু না কিছু শিখেছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতা আরও বেড়েছে।’
ইমতিয়াজ আলী পরিচালিত রকস্টার ছবিতে নার্গিস ‘হির’-এর চরিত্রে নজর কেড়েছিলেন। এর পরপরই তাঁকে সুজিত সরকারের ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল। এ দুই ছবি সমালোচকদের দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছে। এদিনের আলাপচারিতায় তাই স্বাভাবিক নিয়মে উঠে এসেছিল এই দুই ছবির কথা। নার্গিস স্মৃতির খাতা খুলে বলেন, ‘এই দুই সিনেমা ঘিরে আমার অজস্র স্মৃতি। আমাকে এখনো অনেকে হির নামে ডাকেন। আমি ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণকে চিনেছিলাম এই দুই ছবির হাত ধরেই। ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ ও ‘রকস্টার’ আমাকে ভারতীয় সংস্কৃতি, খাবার—সবকিছুর সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে।’
গত কয়েক বছর বিটাউন থেকে দূরে ছিলেন নার্গিস। ফিল্মি ময়দানে এবার দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমেছেন এই মার্কিন রূপসী। তিনি হেসে বলেন, ‘এখন কী সব যেন বলে—নার্গিস ২.০ সংস্ক্ররণ, তা–ই না? নতুন এক ভ্রমণ। তাই নতুন অনেক কিছু শিখব।’ নার্গিসকে সম্প্রতি ‘শিব শাস্ত্রী বলবোয়া’ ছবিতে দেখা গেছে। এই ছবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নিউইয়র্কের মেয়ে। এই ছবির শুটিং নিউইয়র্কে হয়েছে বলে দারুণ মজা পেয়েছিলাম। এই ছবিতে অনুপম খের আর নীনা গুপ্তার মতো দাপুটে অভিনেতাদের সান্নিধ্যে এসে অনেক কিছু শিখেছি। অনুপম খেরের সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। তাই তাঁর সঙ্গে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ ছিলাম।’
জীবনের নানা কঠিন পরিস্থিতিতেও হার মানেননি নার্গিস। তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন সমুদ্রের মতো। সমুদ্র যেমন কখনো শান্ত থাকে, আবার তারই বুকে ঢেউ আসে। মানুষের জীবনও ভালো আর মন্দকে নিয়ে। আমার মন্ত্র হলো জীবনের কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখা, আর ইতিবাচক থাকা। নিজের প্রতি তখন বিশ্বাস হারালে চলবে না। মনে মনে ভাবতে হবে, আগামী দিনে আমার জন্য ভালো সময় অপেক্ষা করছে।’
নিজের ফিল্মি ক্যারিয়ার বেশ ভালোভাবে শুরু করেও সেভাবে সফলতা পাননি নার্গিস। ভাগ্যে বিশ্বাসী এই বলিউড নায়িকা বলেন, ‘দেখুন আমার ভাগ্যে যা ছিল, তা পেয়েছি বলে আমি মনে করি। আর যা পেয়েছি, তাতেই আমি খুশি।’
সাক্ষাৎকারের শেষ প্রান্তে এসে নার্গিস বলেন, ‘আমি সব ধরনের চরিত্রের জন্য উন্মুক্ত। তবে অ্যাকশনধর্মী চরিত্রে অভিনয় করতে ইচ্ছুক। সত্য ঘটনার আধারে নির্মিত ছবিতে কাজ করতে চাই। এমনকি মন্দ মেয়ের চরিত্রেও রাজি। কিছুদিন আগেই সামান্থার (প্রভু) “যশোদা” দেখেছি, দারুণ লেগেছে। এই ধরনের শক্তিশালী চরিত্রে নিজেকে দেখতে চাই। আর ওটিটি আসার পর মেয়েদের জন্য অনেক শক্তিশালী চরিত্র লেখা হচ্ছে।’