যে কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে রজনীকান্ত অভিনীত ‘লাল সালাম’
তিনি তামিল সিনেমার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। ভারতীয় চলচ্চিত্রে চার দশকের বেশি সময় ধরে তাঁর রাজত্ব। তিনি অভিনেতা হিসেবে প্রচলিত অভিনয়ের নিয়ম মানেন না। তাঁর নিজস্ব অভিনয়শৈলী ভক্তদের কাছে তুমুল আলোচিত। তাঁকে বলা হয় জীবন্ত কিংবদন্তি, রজনীকান্ত। বছরের পর বছর তিনি সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়ে আসছেন। রজনীকান্তের ছবিতে কেবল রজনীকান্তই থাকেন, গল্প নিয়ে কেউ মাথায় ঘামান না—অভিনেতাকে নিয়ে এটা প্রচলিত প্রবাদ। তবে ক্যারিয়ারের ১৬৯তম সিনেমায় এসে ছন্দপতন যেন। বক্স অফিসে এবার মুখ থুবড়েই পড়েছে স্পোর্টস ড্রামা ‘লাল সালাম’, যেখানে কাজে আসেনি দক্ষিণি সুপারস্টার রজনীকান্তের স্টারডমও।
গ্রামীণ পরিবেশে ক্রিকেট, ধর্ম ও আবেগের পটভূমিকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি। পরিচালনা করেছেন তাঁর মেয়ে ঐশ্বরিয়া। রজনীকান্তর ছবি হওয়া সত্ত্বেও ছবিকে ঘরে নেই জয়জয়কার। বক্স অফিস সংগ্রহ দেখলে মনেই হবে না এটি রজনীকান্তের সিনেমা। ছবিতে ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেছেন দক্ষিণের এই মহাতারকা। গত বছর ‘জেলার’ সিনেমা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এ বয়সেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী রজনীকান্ত।
কিন্তু ‘লাল সালাম’–এর এমন মরো মরো দশা কেন? এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মনে হচ্ছে, ভালোবাসার মাসে ক্রিকেটের আমেজ ঠিক ধোপে টিকল না। অন্যদিকে অনেকের প্রশ্ন, রজনীকান্তের বয়স নাকি চিত্রনাট্যেই মূল ঘাপলা?
হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত এক রিভিউ বলছে, ‘পরিচালক ঐশ্বরিয়া রজনীকান্ত এমন একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন, যা আজকের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক। যদিও আরও ভালো করে গল্পটি লিখতে পারতেন বিষ্ণু রঙ্গাসামি। কিছু প্লট স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি। কিছু দৃশ্য আরও ভালোভাবে সম্পাদনা করা যেত, এগুলো গল্পের মেজাজ নষ্ট করে দেয়।
পাশাপাশি আরেকটি কারণও সামনে আসছে। বলা হচ্ছে, সিনেমার মূল নায়ক রজনীকান্ত নন, তবুও পোস্টার থেকে শুরু করে সবখানেই সুপারস্টারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি কেবল প্রচারণার খাতিরে। উদ্দেশ্য রজনীকান্তকে দেখিয়ে সিনেমাটির ভালো ব্যবসা হাসিল করা। কিন্তু বাস্তবে সেটি ঘটল না। কারণ, রজনীকান্তকে সব সময়ই মূল হিরো হিসেবে দেখতেই পছন্দ করেন ভক্তরা। তাই তো ৪৫ মিনিট সুপারস্টারের উপস্থিতিতেও হলে মন ভরেনি দর্শকদের।
কারণ যা–ই হোক, বক্স অফিসে সিনেমাটির আয়ও খুব একটা ভালো নয়। মুক্তির প্রথম দিন ৯ ফেব্রুয়ারি ভারতে মাত্র সাড়ে তিন কোটি রুপির ব্যবসা করে ‘লাল সালাম’।
দ্বিতীয় দিনে তা কমে দাঁড়ায় ৩ কোটি ২৫ লাখে। পরদিন তা কমে হয় ৩ কোটি ১৫ লাখে। কিন্তু চতুর্থ দিনে বক্স অফিসে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘লাল সালাম’। মাত্র ১ কোটি ১৩ লাখের ব্যবসা হলো এদিন। অথচ রজনীকান্তর ‘জেলার’ ছবিটির প্রথম দিনই আয় হয়েছিল ৫০ কোটি রুপির বেশি। অর্থাৎ রজনীকান্তের জেলার এক দিনে যা আয় করেছে ‘লাল সালাম’ চার দিনেও তার ধারেকাছে নেই। এখন ছবিটি পুঁজি তুলতে পারবে কি না, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সন্দেহ।
অথচ নিজের মেয়ের বানানো সিনেমাতে ৪৫ মিনিটের অভিনয়ে প্রতি ১ মিনিটের জন্য ১ কোটি রুপি নিয়েছেন রজনীকান্ত। তাঁর পাশাপাশি ‘লাল সালাম’-এ অভিনয় করেছেন বিষ্ণু বিশাল, বিক্রান্ত। তাঁরাই এই ছবির মুখ্য চরিত্র। ছবির জন্য সুর করেছেন এ আর রহমান।
অন্যদিকে একই দিনে মুক্তি পাওয়া শহীদ কাপুর-কৃতি শ্যাননের ‘তেরি বাতো মে অ্যায়সা উলঝা জিয়া’ সিনেমাটি ‘লাল সালাম’–এর তুলনায় অনেক ভালো আয় করছে। যাতে মূলত রোবট আর মানুষের মধ্যে হওয়া প্রেমকাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে শহীদ-কৃতির এআই ভালোবাসায় মুগ্ধ দর্শক।