নিজেও জানতেন না তাঁর জীবনের গল্পটি হবে সিনেমার মতোই

ভূমিকা চাওলা
ইনস্টাগ্রাম

স্কুলে পড়ার সময়ই অভিনয়ের প্রেমে পড়েন। কলেজে পড়ার সময় শুরু করেন অল্প পরিসরে মডেলিং। কিন্তু পরিবার চাইত, অভিনয় না করে চাকরি করুক মেয়ে। পরে কিছু কাজে জনপ্রিয়তা পেলে আর কেউ বাধা হতে পারেননি। মিউজিক ভিডিও দিয়ে শুরু করেন। তাঁকে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি এনে দেয় সালমানের খানের সঙ্গে ‘তেরে নাম’ সিনেমা। পাঠক হয়তো বুঝেছেন, বলছি ভারতের অভিনেত্রী ভূমিকা চাওলার কথা। আজ তাঁর জন্মদিন। মিড ডে, আইএমডিবি, হিন্দুস্তান টাইমস, উইকিপিডিয়া অবলম্বনে ভূমিকাকে নিয়ে জেনে নিতে পারেন জানা-অজানা কথাগুলো।

কীভাবে ক্যারিয়ার শুরু
তাঁর জন্ম পাঞ্জাবি পরিবারে। পড়াশোনা করেছেন দিল্লিতে। ভূমিকার জন্ম ১৯৭৮ সালের ২১ আগস্ট। তাঁর পারিবারিক ডাকনাম নাম রচনা। বাবা সেনাবাহিনীর চাকরি করতেন। যে কারণে বাসায় কড়া নিয়মের মধ্যে বড় হয়েছেন। বলা ভালো, নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থাকতে হয়েছে, সেগুলোই তাঁর কাছে কড়া মনে হতো। এখান থেকে বের হয়ে অভিনয় করা সহজ কথা ছিল না। ১৯৯৭ সালে তিনি কাজের জন্য মুম্বাইতে চলে আসেন। শুরুতে নাম লেখান মিউজিক ভিডিওতে। ১৯৯৮ সালে ‘মাসুম তেরা চেহরা’ স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমায় নাম লেখান। কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও দেখা গেছে। প্রথম ২০০০ সালে তেলেগু সিনেমায় অভিনয় করেন। শুরু হয় পথচলা। হয়তো নিজেও জানতেন না তাঁর জীবনের গল্পটি হবে সিনেমার মতোই।

‘তেরে নাম’ ছবিতে ভূমিকা চাওলা
ছবি: আইএমডিবি

কেন বলিউড থেকে দূরে
‘তেরে নাম’ সিনেমা দিয়ে তুমুল আলোচনায় আসেন তিনি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বলিউড থেকে আবার ছিটকেও যান। এই অভিনেত্রীকে সবচেয়ে বেশি শুনতে হয় বলিউডে কেন শক্ত জায়গা করতে পারলেন না? এ প্রশ্নে তিনি প্রায়ই বলেন, ‘ক্যারিয়ারে কিছু ভুল ছিল। বিভিন্ন সময় অনেক বেশি কাজে ব্যস্ত থাকায় ও শিডিউল দেওয়া থাকায় ভালো কিছু সিনেমার চিত্রনাট্য হাতছাড়া করতে হয়েছে। যা ছিল আমার জন্য ভুল। পরে কিছু কাজ করলেও ব্যাটে–বলে মেলেনি।’

২০০৫ সালে ‘সিলসিলে’ সিনেমা নিয়ে আশা দেখলেও সেটা ব্যর্থ হয়। বাদ পড়েন ‘জাব ইউ মেট’ থেকে। সেই থেকে ক্যারিয়ারে ভাটা পড়ে ভূমিকার। বড় কোনো প্রোডাকশনে আর ডাক পাননি। আর সে অর্থে ফেরা হয়নি বলিউডে। সময়টা তাঁর জীবনের জন্য হতাশার ছিল।

স্বামীর সঙ্গে ভূমিকা চাওলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

হতাশা কাটাতে গিয়ে প্রেম
ক্যারিয়ারে নানা সময় বারবার ভেঙে পড়েছেন এই নায়িকা। তিনি ভারতের চলচ্চিত্র সাময়িকী ফিল্মফেয়ারকে জানিয়েছিলেন, ‘কিছু ছবিও এ সময়ে হাতছাড়া হয়ে যায়।’ মন খারাপ হয়ে যায় তাঁর। সে সময়ে তিনি ধ্যান করতে শুরু করেন। ভরত ঠাকুরের কাছে যোগব্যায়াম শুরু করেন ভূমিকা। ভরতের সান্নিধ্য তাঁর জীবনে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। মানসিকভাবে শক্ত হোন। পরে তাঁদের মধ্যে প্রেম হয়ে যায়। পরিকল্পনা করেন নতুন করে শুরু করবেন। ভরতকে বিয়ে করে বলিউড ছেড়ে হায়দরাবাদে চলে যান। যদিও তার আগেই বলিউড ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।

ভূমিকা চাওলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

প্রযোজনাতেও ব্যর্থ
হায়দরাবাদে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালুর পর সেখান থেকে নিয়মিত সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করেন। দক্ষিণি সিনেমায় অভিনয়ও করতে থাকেন। স্বামী ও বন্ধুর কথায় চালু হওয়া প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে সিনেমা বানান। সেই সিনেমাও ব্যর্থ হয়। তখন মানসিকভাবে আরও বেশি ভেঙে পড়েন। স্বীকার করেন, এটা তাঁর জন্য ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। পরে অভিনয়ে, শুধু অভিনয়েই নিয়মিত হন। ব্যক্তিগত জীবনে এবার আসে নতুন ধাক্কা। এদিকে ভূমিকার টাকা দিয়ে তাঁর স্বামী দুবাইয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। তখন শোনা যায়, ভরতের আরেকটি প্রেমের গুঞ্জন। এসব গুঞ্জন দূর করতে ভূমিকাও চলে যান দুবাই। অভিনয়ে বিরতি পড়ে যায়। ২০১৪ সালে তিনি মা হন। সংসার চললেও ক্যারিয়ার থেকে যায় অনেকটাই দূরে।

‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ছবিতে ভূমিকা চাওলা
ছবি: সংগৃহীত

বলিউডে শেষ চেষ্টা
যে বলিউড তাঁকে খ্যাতি দিয়েছে, দিয়েছে ভক্ত-অনুসারী, সেই বলিউডের ভালোবাসায় বারবার জড়াতে চেয়েছেন। কিন্তু ভাগ্য আর সহায় হয়নি। তিনি ২০১৪ সালের দিকে শেষবারের মতো চেষ্টা করেন বলিউডে অভিনয় করার। কিন্তু এ সময় তাঁর বয়সও বেড়ে গেছে। আলোচনায় না থাকায় নায়িকা চরিত্রে চাহিদা কমতে থাকে। সেই ২০০৩ সালে ‘তেরে নাম’ সিনেমার পর নাম উজ্জ্বল করার মতো তেমন ছবি ছিল না। শুরু করেন পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়। ‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ সিনেমায় সুশান্ত সিং রাজপুতের বোনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। কিন্তু সে অর্থে জনপ্রিয়তা পায়নি চরিত্রটি। আশাহত হয়ে পরে দক্ষিণি সিনেমায় নিয়মিত হন। এখন পার্শ্বচরিত্রেই তাঁকে বেশি দেখা যায়। বর্তমানে এই অভিনেত্রী হাতে রয়েছে দুটি সিনেমা। পোস্ট প্রোডাকশনে থাকা এই সিনেমাগুলো হলো ‘ইমারজেন্সি’ ও ‘ব্রাদার’।