‘আমার বয়সী অভিনেতাদের অপশন কম’

গজরাজ রাও। ইনস্টাগ্রাম থেকে

অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পেয়েছে কমেডি সিরিজ ‘দুপাহিয়া’। কমেডির মোড়কে নানা সামাজিক বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন পরিচালক সোনম নায়ার। সিরিজে অন্যতম মূল চরিত্রে দেখা গেছে গজরাজ রাওকে। চিত্রনাট্য পড়েই তিনি সিরিজটি করতে আগ্রহী হয়েছিলেন বলে জানান। মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপচারিতার সময় গজরাজ রাও বলেন, ‘প্রিয়দর্শন আর সুরজ বরজাতিয়া যদি এক হন, তাহলে যে রকম অনুভূতি হবে, এই সিরিজের কাহিনি শুনে আমার এমনই অনুভূতি হয়েছিল। খুব কম ক্ষেত্রে হয়েছে যে চিত্রনাট্য পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটি করতে উৎসাহী হয়েছি। “দুপাহিয়া”র ক্ষেত্রে তা–ই হয়েছিল।’

‘দুপাহিয়া' সিরিজের পোস্টার। আইএমডিবি

সিরিজটির গল্প বিহারের এক অজগ্রাম ঘিরে; প্রতিটি পর্বে গ্রাম্য সরলতা ধরা পড়েছে। শহুরে ব্যস্ত জীবন ছেড়ে গ্রামের সহজ–সরল জীবন কি কোথাও টানে? গজরাজ জানান, ‘আসলে দূরের সব জিনিস সব সময় বেশি সুন্দর লাগে। শহরের মানুষদের মনে হয় গ্রাম্য জীবন কত সহজ। আবার গ্রামের মানুষদের মনে হয় তাঁদের জীবন নরকের সমান।’

এক মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে সিরিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। একবার চোরের খপ্পরে পড়েছিলেন বলে জানান গজরাজ। তাঁর দামি মুঠোফোন চুরি গিয়েছিল। তবে ১৫ বছর আগে এক ক্যামেরা হারানোর দুঃখ আজও ভুলতে পারেননি তিনি। অভিনেতা জানান, ‘আন্তনগর ট্রেনে সুইজারল্যান্ড থেকে প্যারিসে যাচ্ছিলাম। আর তখন ভুলবশত ক্যামেরাটা ট্রেনে রেখে নেমে গিয়েছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও ক্যামেরাটা উদ্ধার করতে পারিনি।’

গজরাজ রাও। ইনস্টাগ্রাম থেকে

অভিনেতা হিসেবে গজরাজ কমেডি ঘরানা বেশি উপভোগ করেন। কারণ, ব্যাখ্যা করে অভিনেতা বলেন, ‘আমার মনে হয়, কমেডিতে অভিনেতারা একটু বেশি স্বাধীনতা পান। তবে এর জন্য চিত্রনাট্য ভালো হওয়া প্রয়োজন। সিরিয়াস প্রকল্পে অভিনেতাদের একটু মেপেটেপে অভিনয় করতে হয়। কিন্তু কমেডিতে আমরা অনেক ছাড় পাই। নিজের থেকে কিছু যোগ করার সুযোগ পাই।’ ‘দুপাহিয়া’র মতো পারিবারিক প্রকল্প এখন ওটিটিতে কম নির্মাণ করা হয়, এখন ডার্ক কনটেন্ট বা থ্রিলারধর্মী প্রকল্পের আধিপত্য বেশি। বেশ কিছু অভিনেতা এ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেছেন গজরাজ।

তাঁর মতে, ‘দেখুন হাতের পাঁচ আঙুল পাঁচ রকম হয়। আর তাই ভিন্ন স্বাদের প্রকল্পের নিশ্চয় প্রয়োজন আছে। থ্রিলার, ডার্ক কমেডি এসব প্রকল্প নিশ্চয় জরুরি। তবে দর্শক হিসেবে আমি পারিবারিক সিরিজ বা গল্প দেখতে বেশি পছন্দ করি। ৩০-৪০ বছর পর আজও হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়, বাসু চট্টোপাধ্যায়, সাই পরাঞ্জপাইয়ের ছবি আমাকে প্রভাবিত করে।’

সিনেমার দৃশ্যে গজরাজ রাও। আইএমডিবি

তবে ‘বাধাই হো’র সফলতার পর চিত্রনাট্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে গজরাজের রুচি কিছুটা বদলেছে। তাঁর কথায়, ‘এখন আমি ভিন্ন স্বাদের গল্পের সন্ধানে থাকি। শুধু আমার চরিত্র নয়, আশপাশের চরিত্রগুলো যেন আলাদা হয়, সেটাও গুরুত্ব দিই। সত্যি বলতে আমার বয়সী অভিনেতাদের অপশন কম। চেষ্টা করি সীমিত সুযোগের মধ্যে সেরাটা বেছে নিতে।’

‘মজা মা’, ‘ডাব্বা কারটেল’, ‘সত্যপ্রেম কি কথা’, ‘ময়দান’সহ আরও নানান প্রকল্পে নানান চরিত্রে গজরাজকে দেখা গেছে। আর সব সময় তাঁর দুরন্ত অভিনয় মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। তাই গজরাজের মতো অভিনেতার থেকে সবার প্রত্যাশা থাকে প্রচুর। তবে এই প্রত্যাশার বোঝা পিঠে করে নিয়ে চলতে রাজি নন তিনি। গজরাজ বলেন, ‘আমরা সবাই বিশাল এক ফ্যাক্টরির খুব ছোট এক অংশমাত্র। তাই কোনো শিল্পী এই দায়ভার নিজের ওপর খুব একটা নিতে পারেন না। কিন্তু বিমানবন্দর, রেস্তোরাঁ বা অন্য কোথাও গেলে ভিন্ন বয়সী মানুষেরা আমার অভিনয়ের যখন প্রশংসা করেন, আমার সত্যিই তখন খুব আনন্দ হয়। কিছুদিন আগে একটা ছবির শুটিংয়ের জন্য লন্ডনে গিয়েছিলাম। তখন কিছু ভারতীয়র সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। ওনারা বলেছিলেন যে আমার নাম দেখে ছবিটি দেখতে ওঁরা আগ্রহী হন। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী বা হতে পারে।’

আরও পড়ুন

একাধিক অ্যাড ফিল্ম পরিচালনা করেছেন গজরাজ। এবার একটা ছবি পরিচালনা করতে চান তিনি। গজরাজ জানান, এর কাহিনির ওপর এখন তিনি কাজ করছেন।