যেমন দেখলাম শাহরুখের পাঠান
পাঠান
অভিনয়শিল্পী: শাহরুখ খান, দীপিকা পাড়ুকোন, জন আব্রাহাম, ডিম্পল কাপাডিয়া, আশুতোষ রানা
পরিচালক: সিদ্ধার্থ আনন্দ
প্রযোজনা সংস্থা: যশরাজ ফিল্মস
বিতর্কের ঝড় থামিয়ে মুক্তি পেয়েছে ‘পাঠান’। চার বছর পর বড় পর্দায় ফিরলেন ‘বলিউডের বাদশা’ শাহরুখ খান। স্বাভাবিকভাবেই ছবিটি ঘিরে সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে ছিল আলাদা উত্তেজনা, আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা। কিং খান এক নতুন রূপে এসে তাঁর অনুরাগীদের বড়সড় চমক দিয়েছেন। রোমান্সের খোলস ছেড়ে ছবিটিতে হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর অ্যাকশন হিরো।
কাহিনি
কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা রদ করার পর পাকিস্তানে উত্তেজনা দেখা যায়। তাই পাকিস্তান ভারতের ওপর হামলা চালাতে হাইটেক প্রাইভেট আতঙ্কবাদী দল ‘আউটফিট এক্স’-এর সাহায্য নেয়। এই দলের প্রধান জিম (জন আব্রাহাম) একসময় ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীতে ছিলেন। দেশের চরম বিপদের সময় একাধিকবার ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তিনি। কিন্তু নিজের বিপদের সময় সরকারকে পাশে পাননি জিম। গর্ভবতী স্ত্রীকে চোখের সামনে আতঙ্কবাদীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যেতে দেখেছিল জিম। সেই থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন দেশদ্রোহী। জিমের লক্ষ্য এক ভাইরাসের মাধ্যমে ভারতের বিনাশ করা। ভারতীয় গোয়েন্দা জিমের এই ভয়াবহ পরিকল্পনার কথা জানতে পারে
জিমের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পারে একমাত্র পাঠান (শাহরুখ খান)। তাই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এই মিশনে তাদের সবচেয়ে যোগ্য এজেন্ট পাঠানের সাহায্য নেয়। এদিকে পাঠানের সঙ্গে পরিচয় হয় রুবিনা মোহসিনের (দীপিকা পাড়ুকোন)। কে এই রুবিনা? আর কী এই ভাইরাস, যার কারণে একটা ভারত ধ্বংস হতে পারে? পাঠান কি পারবে জিমের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে। এসব প্রশ্নের জবাব পেতে হলে দেখতে হবে ‘পাঠান’।
পরিচালনা
সিদ্ধার্থ আনন্দ এর আগে ‘ওয়ার’–এর মতো অ্যাকশন ছবিতে নিজের মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। তাই যোগ্য পরিচালকের হাতে ‘পাঠান’ পড়েছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সিদ্ধার্থ ‘পাঠান’-এর মাধ্যমে উপহার দিয়েছেন বিনোদনে ভরভুর এক ছবি। অ্যাকশন, রোমান্স, লোকেশন, নাচ, আবেগ, মজার সংলাপ থেকে দেশভক্তি—সব উপকরণ সিদ্ধার্থের ছবিতে থরে থরে সাজানো।
ভালো-মন্দ
‘পাঠান’ ছবির ইতিবাচক দিকগুলো হলো ভিএফএক্স, সিনেমাটোগ্রাফি, অ্যাকশন, সংগীত, স্টাইল, পোশাক আর চোখজুড়ানো লোকেশন। পরিচালক সিদ্ধার্থ আগেই দাবি করেছিলেন, এই ছবিতে এমন সব অ্যাকশন দেখা যাবে, যা এর আগে কোনো বলিউড ছবিতে দেখা যায়নি। ‘পাঠান’–এর অ্যাকশন দৃশ্যগুলো সত্যি হাড় হিম করা। ভারত ও ভারতের বাইরের নামি অ্যাকশন ট্রেনারের সাহায্যে ছবিটির অ্যাকশন দৃশ্যগুলো যেন অন্য মাত্রা পেয়েছে। ‘পাঠান’–এর ‘বেশরম রং’ গানের জন্য সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। কিন্তু এই গান ও দীপিকার পোশাক ছবির সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে গেছে। তবে ছবির অন্যতম সেরা আকর্ষণ শাহরুখ–দীপিকার স্টাইল ও পোশাক। পর্দায় এই জুটি যখনই এসেছে উষ্ণতা ছড়িয়েছে। এ জন্য স্টাইলিশ মমতা আনন্দ, নিহারিকা ও শলিনা নথানির বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য।
‘পাঠান’–এ শাহরুখের দূরন্ত লুক ও পেশিবহুল শরীর মুগ্ধ করেছে সবাইকে। নিজেকে অন্য লুকে পর্দায় তুলে ধরার জন্য ট্রেনার প্রশান্ত সাওন্তর কাছে দিন রাত এক করে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ‘কিং খান’। তবে সিদ্ধার্থ এই ছবিতে সবচেয়ে বড় চমক দিয়েছেন ‘পাঠান’ ও ‘টাইগার’কে একসঙ্গে নিয়ে এসে। শাহরুখ ও সালমানের যুগলবন্দী ছবির অন্যতম সেরা আকর্ষণ। ‘পাঠান’ ছবিতে ভাইজান স্বল্প উপস্থিতিই মাতিয়ে দিয়েছেন। দুবাই, প্যারিস, আফ্রিকা, সাইবেরিয়া, আফগানিস্তানের অজানা, অদেখা নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে পর্দায় তুলে ধরে সিনেমাটোগ্রাফার তাঁর পারদর্শিতা দেখিয়েছেন।
দীপিকার সঙ্গে হালকা রোমান্সের দৃশ্যগুলোতে কোথাও ‘কিং অব রোমান্স’কে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। তাই লম্বা, সোনালি চুলের ‘পাঠান’ যেকোনো তরুণীর হৃদয়ে ঝড় তুলতে বাধ্য। এদিকে তরুণদের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পর্দায় রুবিনা হয়ে এসেছেন অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন।
এবার আসা যাক ‘পাঠান’ ছবির মন্দ দিকগুলোর প্রসঙ্গে। এই ছবিতে মারপিট, গোলাগুলি, নাচগান, দূরন্ত লোকেশন, হালকা রোমান্স, দেশপ্রেম—সব থাকা সত্ত্বেও গল্প বেশ দুর্বল। ছবির সম্পাদনা ক্ষেত্রেও দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। কিছু কিছু দৃশ্যে ভিএফএক্স ছিল নিম্নমানের। বিশেষ করে শেষের দিকে জিম ও পাঠানের শূন্যে ভেসে মারপিট করার দৃশ্যটা অকারণে দীর্ঘ করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। দুর্বল ভিএফএক্সের কারণে দু-একটা দৃশ্য হাস্যকরও লেগেছে। জনের মুখে সংলাপ খুব কম শোনা গেছে। আর ছবির সংলাপ আরও জোরদার হওয়ার প্রয়োজন ছিল।
অভিনয়
‘পাঠান’ ছবির মূল আকর্ষণ যে শাহরুখ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রোমান্টিক নায়কের ইমেজ ধুয়েমুছে সাফ করে এই ছবিতে তিনি হয়ে উঠেছেন প্রকৃত অ্যাকশন হিরো। ৫৭ বছর বয়সী এই সুপারস্টার এখনো যে কোনো কম বয়সী নায়ককে পুরোদস্তুর টেক্কা দিতে পারেন, তা তিনি দেখিয়ে দিলেন। আর শাহরুখ দেখিয়ে দিলেন যে রোমান্সের পাশাপাশি অ্যাকশনটাও তিনি ভালোই পারেন। তিনি প্রমাণ করলেন বয়স শুধু একটা সংখ্যা।
তবে দীপিকার সঙ্গে হালকা রোমান্সের দৃশ্যগুলোতে কোথাও ‘কিং অব রোমান্স’কে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। তাই লম্বা, সোনালি চুলের ‘পাঠান’ যেকোনো তরুণীর হৃদয়ে ঝড় তুলতে বাধ্য। এদিকে তরুণদের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পর্দায় রুবিনা হয়ে এসেছেন অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। বলা যায়, এই ছবির অন্যতম সেরা চমক দীপিকা। অ্যাকশন দৃশ্যগুলোতে তিনি অত্যন্ত সাবলীল ছিলেন। পর্দায় শাহরুখের সঙ্গে তাঁর রসায়ন সত্যি জমে উঠেছে।
খলনায়কের ভূমিকায় জন আব্রাহাম যে সঠিক নির্বাচন ছিল, তা প্রমাণিত। ছবিতে তাঁকেও অত্যন্ত স্টাইলিশভাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক। ডিম্পল কাপাডিয়া ও আশুতোষ রানা চরিত্রের প্রতি পুরোপুরি সততা দেখিয়েছেন।