একের পর এক রেকর্ড ভাঙা এই সিনেমায় কী আছে
২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল হরর-কমেডি ঘরানার সিনেমা ‘স্ত্রী’। এর প্রায় ছয় বছর পর গত ১৫ আগস্ট মুক্তি পায় এটির সিকুয়েল ‘স্ত্রী ২’। অমর কৌশিক পরিচালিত সিনেমাটি ইতিমধ্যে ‘বাহুবলী ২’-এর হিন্দি সংস্করণের আয় ছাড়িয়েছে। শাহরুখ খানের ‘পাঠান’-এর ভারতীয় বক্স অফিস কালেকশনের রেকর্ড ভেঙে এটি এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করা হিন্দি ছবি। বক্স অফিস নিয়ে কাজ করা ভারতীয় গণমাধ্যম সচনিল্কের প্রতিবেদন অনুসারে, সিনেমাটি গত বুধবার পর্যন্ত কেবল ভারতেই আয় করেছে ৫৩৩ কোটি ৫৫ লাখ রুপি। কিন্তু কী আছে ‘স্ত্রী ২’ সিনেমায়, যে কারণে একের পর এক রেকর্ড ভেঙে চলেছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক সম্ভাব্য কারণগুলো—
একনজরে
সিনেমা: স্ত্রী ২
জনরা: হরর-কমেডি
পরিচালক: অমর কৌশিক
প্রযোজক: দিনেশ বিজন
চিত্রনাট্যকার: নিরেন ভাট
অভিনয়ে: রাজকুমার রাও, শ্রদ্ধা কাপুর, অপারশক্তি খুরানা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পঙ্কজ ত্রিপাঠি।
হরর-কমেডি ঘরানার সিনেমায় সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হলো, দুটি ব্যাপারকেই ঠিকঠাক ফুটিয়ে তোলা। ‘স্ত্রী ২’ সিনেমার নির্মাতারা কাজটি করার চেষ্টা করেছেন নিখুঁতভাবে।
সিকুয়েল সিনেমার ক্ষেত্রে কাহিনির চরিত্রগুলো যেহেতু আগে থেকেই তৈরি থাকে, তাই পরিচালক বা লেখকের মধ্যে যত্নের অভাব দেখা যায়। কিন্তু ‘স্ত্রী ২’ প্রথম ছবির সব সৌন্দর্য বজায় রেখেই কাহিনিতে নতুন মোড় নিয়ে আসতে পেরেছে।
প্রথম ছবিতে স্ত্রী পুরুষদের অপহরণ করত।
এই সিনেমায় দেখা যায়, সার্কাটা বা মুণ্ডুহীন এক দানবকে; যে নারীদের অপহরণ করে। এ কাহিনি সিনেমার প্রথম দিকেই সবাই জেনে যায়। তাই অ্যাকশন আর কমেডির মধ্যে কাহিনি গতিশীল হয়ে ওঠে প্রথম থেকেই। এ কারণে শুরু থেকেই সিনেমাটি দর্শকদের মনোযোগ পুরোদমে ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
‘স্ত্রী ২’-এর কাহিনিও চান্দেরি নামের সেই গ্রামের। প্রথম ছবির ঘটনা যেখানে শেষ হয়, সেখান থেকেই ‘স্ত্রী ২’-এর ঘটনা শুরু।
স্ত্রী চলে যাওয়ার পর চান্দেরিতে এক নতুন আতঙ্ক ছড়াতে থাকে। মুণ্ডুহীন দানব তুলে নিয়ে যেতে থাকে একের পর এক নারীদের। ঘরের ভেতরে থেকেও সার্কাটার হাত থেকে রক্ষা পায় না তারা। গল্পটির সঙ্গে সিনেমার চরিত্ররা জড়িয়ে পড়ে, যখন সার্কাটা বিট্টুর প্রেমিকা চিট্টিকে তুলে নিয়ে যায়। এদিকে রুদ্র ভাইয়া চান্দেরি পুরাণের ছেঁড়া অংশসহ একটি চিঠি পান, সেখানে সার্কাটা ফিরে আসার হুমকি থাকে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর শহরে আসে ভিকির সেই প্রেমিকা, যে কিনা শুধু মহাপূজার আগেই চান্দেরিতে আসে। সে–ও যোগ দেয় এই সার্কাটাকে দমন করার মিশনে। কিন্তু কেউই জানে না, কীভাবে সার্কাটাকে আটকানো সম্ভব।
স্ত্রীর চেয়ে শক্তিশালী এ দানবকে কীভাবে মোকাবিলা করবে তারা? সেটাই দেখানো হয়েছে ‘স্ত্রী ২’ সিনেমায়।
‘স্ত্রী’ সিনেমার মতো ‘স্ত্রী ২’-এও রাজকুমার রাও দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। সহযোগী হিসেবে অপারশক্তি খুরানা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সঙ্গ দিয়েছেন দারুণভাবে। পঙ্কজ ত্রিপাঠি তাঁর সংলাপের কারণে দর্শককে মাতিয়ে রেখেছেন পুরোদমে। শ্রদ্ধা কাপুর যদিও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন, তবে তাঁর চরিত্রটি খুব একটা অবদান রাখেনি। বরং রাজকুমার রাওয়ের সঙ্গে তাঁর রোমান্টিক দৃশ্যগুলো খাপছাড়া ছিল।
শেষ দিকে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর মিললেও শ্রদ্ধা কাপুরের চরিত্রটি ধোঁয়াশাই রয়ে যায়। তবে চিত্রনাট্যের প্রতিটি চরিত্র তাদের নিজ নিজ ভূমিকায় এত অনন্য ছিল যে কাউকে কোথাও বেমানান লাগেনি।
সিনেমার দ্বিতীয় অংশে মনে হয়েছে, নির্মাতারা একটু তাড়াহুড়ো করেছেন। এই অংশে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে নতুন দুই চরিত্রের সঙ্গে। একটি চরিত্র ‘ভেড়িয়া’ সিনেমার, দিনেশ বিজনের হরর ইউনিভার্সের দর্শকেরা তাঁকে চেনেন। এ থেকে ধারণা পাওয়া যায়, ভবিষ্যতে হয়তো ‘স্ত্রী’ ও ‘ভেড়িয়া’র ক্রসওভার সিনেমা হতে পারে।
দুর্দান্ত হাস্যরসাত্মক সংলাপ ‘স্ত্রী ২’ সিনেমার ইউএসপি হলেও ছবিতে ভয় ধরানো যে দৃশ্যগুলো দেখানো হয়েছে, সেগুলোও দারুণ। ‘স্ত্রী’ থেকে ‘স্ত্রী ২’ সিনেমার ভৌতিক দুনিয়া তৈরি করা হয়েছে বেশি যত্ন নিয়ে। ভিএফএক্সের কাজ ছিল পরিমিত। কোথাও খুব বেশি কিছু করা হয়েছে বলে মনে হয়নি; কাহিনির প্রয়োজনে মানানসই রাখা হয়েছে। আবহ সুর আর দারুণ আইটেম গানে সিনেমার এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যের পরিবর্তন বেশ ভালো ছিল। মোটকথা, বিনোদন আর ভয়—এই দুইয়ের মিশেলে অমর কৌশিক বাজিমাত করেছেন। তাই মুক্তির প্রায় এক মাস পরও সিনেমাটি মন জয় করে চলেছে দর্শকদের। এর মধ্যে যে বাজেটের কয়েক গুণ আয় করেছে, সে কথা বলাই বাহুল্য।