কে জানত ছোটবেলায় বাংলাদেশের ট্রেনের সেই বাঁশি মনে রয়ে যাবে

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে মুক্তির পরপর বাংলাদেশের দর্শকের কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় কিরণ রাওয়ের হিন্দি সিনেমা ‘লাপাতা লেডিস’। আমির খান প্রযোজিত এই সিনেমার লেখক বিপ্লব গোস্বামী। গত বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় প্রথম আলো কার্যালয়ে এসেছিলেন এই ভারতীয় চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা। ‘লাপাতা লেডিস’সহ নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন লতিফুল হক  

প্রথম আলো:

আপনার জন্ম তো আগরতলায়। সেখান থেকে ‘লাপাতা লেডিস’-এর গল্পকার হয়ে উঠলেন কীভাবে?

বিপ্লব গোস্বামী : আমার জন্ম, স্কুল আগরতলায়। এরপর কলকাতায় সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হই। ছোটবেলাতেই ঠিক করেছিলাম, পড়াশোনা শেষ করে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক হব। ফলে স্কুল, কলেজের পড়াশোনার সঙ্গে আমার সিনেমা নিয়ে পড়ার প্রস্তুতিও চলতে থাকে।

প্রথম আলো :

সিনেমা নিয়ে কাজ করবেন, ছোটবেলায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে কে আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে?

বিপ্লব গোস্বামী : এটা একটু অদ্ভুত ব্যাপার। আমার বাবা করুণাময় গোস্বামী বরাবরই শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। নিয়মিত খবরের কাগজ পড়তেন, দেশ-বিদেশের খবর রাখতেন, সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করতেন; সব মিলিয়ে চারপাশে একটা শিল্পের পরিবেশ ছিল। বড় হতে হতে বুঝে গেলাম, সিনেমাশিল্প নিয়ে আমার বড্ড আগ্রহ। ছাত্র ভালো ছিলাম, সিদ্ধান্ত নিলাম পড়াশোনাটাই করব সিনেমা নিয়ে। আরও পরে ঠিক করি নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার হব। এটা করতে গেলে তো সিনেমার কারিগরি দিক সম্পর্কে জানতে হবে। এ জন্যই সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে চলচ্চিত্র সম্পাদনার ওপর তিন বছরের পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করি।

বিপ্লব গোস্বামী। তানভীর আহাম্মেদ

প্রথম আলো :

এরপর কি পেশাদার জীবন শুরু?

বিপ্লব গোস্বামী : পড়াশোনা শেষে কিছুদিন মুম্বাইতে বিভিন্ন সিনেমার সম্পাদনা করি, অনেক টেলিফিল্ম, তথ্যচিত্রে কাজ করেছি। কোনোটায় সম্পাদনা করেছি, কোনোটায় প্রযোজক হিসেবে যুক্ত ছিলাম, কোনোটা আবার লিখেছি। একটা সময় মনে হলো আমার মূল লক্ষ্য লেখালেখি আর নির্মাণ—সেটা এবার শুরু করব।

‘লাপাতা লেডিস’ ছবিতে নিতাংশী গোয়েল
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রথম আলো:

‘লাপাতা লেডিস’-এর গল্প নিয়ে আপনি তো প্রতিযোগিতায় অংশ নেন...

বিপ্লব গোস্বামী : হ্যাঁ। প্রায় ১০ বছর আগে আমি গল্পের সারাংশ লিখেছিলাম। লেখার পর নিজেরই খুব ভালো লেগেছিল। যে ধরনের সিনেমা আমি লিখেতে বা বানাতে চাই, সেটা এ ধরনের (‘লাপাতা লেডিস’) সিনেমাই। সেই সময়ে ২০ কি ২২টি দৃশ্য লিখেছিলাম। এরপর সিনেমার বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতাম, দেখতাম, পড়াশোনা করতাম—এভাবেই চলছিল। ২০১৮ সালে একটা প্রতিযোগিতার ঘোষণা আসে। যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে হিন্দি সিনেমার জন্য চিত্রনাট্য আহ্বান করা হয়। এই প্রতিযোগিতা হয় মুম্বাইতে। ভাবলাম এত বড় একটা প্রতিযোগিতা, অংশ নিতে হবে। এটা ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা, এখানে ভারত বা ভারতের বাইরে থেকে সিনিয়র-জুনিয়র সবাই হিন্দি সিনেমার চিত্রনাট্য জমা দিতে পারবেন। প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন আমির খান, রাজকুমার হিরানি, আনজুম রাজাবলি, জুহি চতুর্বেদীর মতো ব্যক্তিত্বরা। তখন দেড় মাসের মধ্যেই লেখা শেষ করে পাঠিয়ে দিই। ইচ্ছা ছিল সিনেমাটি নিজেই বানাব। প্রতিযোগিতায় প্রায় চার হাজার চিত্রনাট্যের মধ্যে আমারটা দ্বিতীয় হয়। সেই সময় এটা মুম্বাই সিনেমা দুনিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন ফেলে। তখন সিনেমার নাম ছিল ‘টু ব্রাইডস’।

সিনেমাটি সব ধরনের বাহল্যবর্জিত, একেবারেই অর্গানিক, ভেতর থেকে আসা গল্প। খুব সাধারণ অথচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। মূল ব্যাপার হলো গল্পটি খুব স্বাভাবিক ও সাধারণ। আর সাধারণের সঙ্গে সবাই একাত্ম হয়ে যায়। সিনেমার ঘটনা, চরিত্র, তাদের কথাবার্তা সবই মানুষের চেনা। গল্পে কৃত্রিমতা বা আরোপিত ব্যাপারস্যাপার আমি লেখার সময় সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছি।
বিপ্লব গোস্বামী

প্রথম আলো :

কিরণ রাও, আমির খান সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?

বিপ্লব গোস্বামী : ‘টু ব্রাইডস’ নিয়ে যখন অনেক কথা হচ্ছে, তখন আমি নিজে সিনেমাটি বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর মধ্যে কিরণ রাও গল্পটা সম্পর্কে জানেন, তিনি খুব পছন্দ করেন। সেটা এতটাই যে নিজেই এটা পরিচালনা করতে চান। আমির খানেরও গল্প খুব পছন্দ হয়, তিনি প্রযোজনা করতে চান। আমির খান চাইছিলেন, আমি এই প্রকল্পে কেবল লেখক হিসেবেই থাকি। শুরুতে নিজে নির্মাণের কথা ভাবলেও পরে মনে হলো, আমির যেহেতু প্রযোজনা করতে চান, আমি বরং লেখক হিসেবেই থাকি। সবাই জানেন, আমির খান হিন্দি সিনেমার জন্য কত বড় নাম। তিনি যদি প্রযোজনা করেন তাহলে ভালোই হবে।

আমির খানের সঙ্গে বিপ্লব গোস্বামী। লেখকের ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

আপনার নিজের নির্মাণের তাহলে কী হলো?

বিপ্লব গোস্বামী : ‘টু ব্রাইডস’ নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, তখনই আমি আরেকটা চিত্রনাট্য লিখছি। এ জন্যই ‘টু ব্রাইডস’ আমির খানের প্রযোজনা সংস্থাকে দিয়ে দিই। ভেবেছি এটা তাঁরা বানাক, আমি নতুন চিত্রনাট্যটা থেকে সিনেমা পরিচালনা করব।

প্রথম আলো:

‘টু ব্রাইডস’ থেকে সিনেমার নাম বদলে ‘লাপাতা লেডিস’ হলো কীভাবে?

বিপ্লব গোস্বামী : ‘টু ব্রাইডস’ ইংরেজি নাম ছিল। আমির খানই প্রস্তাব করেন হিন্দি নাম দিলে কেমন হয়। তখন সবার মত নিয়ে ‘লাপাতা লেডিস’ নামকরণ করা হয়।

খুব ছোটবেলায় মাঝরাতে ঘুম ভেঙে আখাউড়ার ট্রেনের বাঁশি শুনতে পেতাম। তখন কে জানত ছোটবেলায় বাংলাদেশের ট্রেনের সেই বাঁশি অবচেতন মনে রয়ে যাবে। আসলে শিল্পীর জীবনের সঙ্গে অনেক উপকরণ জড়িয়ে থাকে, যেগুলো অজান্তেই উঠে আসে।
বিপ্লব গোস্বামী

প্রথম আলো :

‘লাপাতা লেডিস’ নিজে বানাতে চেয়েছিলেন। মুক্তির পর দেখে কী মনে হলো? নিজের স্বপ্নের কতটা কাছাকাছি হয়েছে?

বিপ্লব গোস্বামী : আমি যেমন ভেবেছিলাম, তেমনই হয়েছে। এটা খুব তৃপ্তির। এখন আমি নিজের প্রথম হিন্দি সিনেমা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা ছাড়াও আরেকটা হিন্দি সিনেমা পরিচালনা করতে যাচ্ছি।

‘লাপাতা লেডিজ’ সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে বিপ্লব গোস্বামী। লেখকের ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

নতুন প্রকল্পগুলো নিয়ে বলা যাবে?

বিপ্লব গোস্বামী : এটা এখন না বলি। আরেকটু সময় যাক।

প্রথম আলো:

‘লাপাতা লেডিস’ ওটিটিতে মুক্তির পর বাংলাদেশের দর্শকেরাও পছন্দ করেছেন। সিনেমাটি কেন এত মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে বলে আপনার মনে হয়?

বিপ্লব গোস্বামী : সিনেমাটি সব ধরনের বাহল্যবর্জিত, একেবারেই অর্গানিক, ভেতর থেকে আসা গল্প। খুব সাধারণ অথচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। মূল ব্যাপার হলো গল্পটি খুব স্বাভাবিক ও সাধারণ। আর সাধারণের সঙ্গে সবাই একাত্ম হয়ে যায়। সিনেমার ঘটনা, চরিত্র, তাদের কথাবার্তা সবই মানুষের চেনা। গল্পে কৃত্রিমতা বা আরোপিত ব্যাপারস্যাপার আমি লেখার সময় সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছি। চেয়েছিলাম সহজাত একটা গল্প বলতে। আবেগ-অনুভূতি তো আসলে বিভিন্ন জায়গার মানুষের মধ্যে একই থাকে, যদি তার ‘সাধারণত্ব’কে স্পর্শ করা হয়। আমরা তো আসলে খুব সাধারণ, পরিস্থিতির কারণে হয়তো সাধারণ প্রতিক্রিয়া চাপা পড়ে যায়।

প্রথম আলো :

ট্রেন ভারতের যোগাযোগব্যবস্থায় বড় নিয়ামক। ‘লাপাতা লেডিস’-এও ‘ট্রেন-যোগ’ আছে। এই হারিয়ে যাওয়া-খুঁজে পাওয়ার বিষয়গুলো কি ট্রেনের মাধ্যমে রূপক হিসেবে দেখানো হয়েছে?

বিপ্লব গোস্বামী : আমার বড় হওয়া আগরতলায়। এটা কিন্তু ট্রেননির্ভর শহর নয়। তবে ছোটবেলা থেকেই ট্রেনের গল্প শুনে বড় হয়েছি। খুব ছোটবেলায় মাঝরাতে ঘুম ভেঙে আখাউড়ার ট্রেনের বাঁশি শুনতে পেতাম। তখন কে জানত ছোটবেলায় বাংলাদেশের ট্রেনের সেই বাঁশি অবচেতন মনে রয়ে যাবে। আসলে শিল্পীর জীবনের সঙ্গে অনেক উপকরণ জড়িয়ে থাকে, যেগুলো অজান্তেই উঠে আসে। একটা সময় কলকাতায় পড়াশোনার সূত্রে নিয়মিত ট্রেনের যাত্রী হই, আজও আমার কোথাও যাওয়ার সময় ইচ্ছা করে ট্রেনেই যাই। কারণ, ট্রেনে যাওয়ার সময় অনেক ঘটনার সাক্ষী হওয়া যায়। সিনেমার গল্প লেখার সময় সেগুলো মাথায় ছিল।

প্রথম আলো :

‘লাপাতা লেডিস’ চলতি বছরের অন্যতম চর্চিত সিনেমা। এটার জনপ্রিয়তায় আপনার জীবন কতটা বদলেছে?

বিপ্লব গোস্বামী : খুব একটা বদলায়নি। তবে কাজ পাওয়াটা সহজ হয়েছে। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা ধরনের কাজের প্রস্তাব পাচ্ছি। মুম্বাই, তেলেগু, তামিল, পশ্চিমবঙ্গ এমনকি বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রস্তাব পাচ্ছি।

‘লাপাতা লেডিস’ ছবির দৃশ্য
ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রথম আলো:

আপনি নিজে কী ধরনের সিনেমা বানাতে চান?

বিপ্লব গোস্বামী : দীর্ঘদিন ধরে এতটা ধৈর্য ধরেছি, পড়াশোনা করেছি, খাটুনি করেছি তো আসলে নিজের মতো করে সিনেমা বানাতেই। লাপাতা লেডিস-এর পর সেই প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। কারণ, অনেক দিন ধরেই নিজের মতো করে সিনেমা বানাতে চেয়েছি, পারিনি। এই সিনেমা তো আমার ১০ বছর আগে লেখা। এই ১০ বছরে আমাকে দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছে, এই সময়ে আমি প্রচুর গল্প জমিয়েছি। আমি কেমন সিনেমা বানাতে চাই, সেটা লাপাতা লেডিস দেখলেই বুঝবেন। এখানে সিনেমাশিল্পের উপাদান আছে, বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার জন্য কাঠামো আছে, বিদ্রূপ আছে, বিনোদন আছে, সামাজিক বার্তাও আছে। সিনেমাটা সাধারণ কিন্তু এটা সাজানো খুব কষ্টকর প্রক্রিয়া ছিল।

কিরণ রাওয়ের সঙ্গে বিপ্লব গোস্বামী। লেখকের ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

আপনি তো বাংলাদেশে এসেছেন নির্মাতা দীপঙ্কর দীপনের আমন্ত্রণে। তাঁর সঙ্গে পরিচয় কীভাবে?

বিপ্লব গোস্বামী : আমার পরিচিত এক ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দীপঙ্করদার ভালো সখ্য। ওই ছোট ভাই আমাকে সব সময় দীপঙ্কর দীপনদার কথা বলত। যখন জানতে পারলাম দীপঙ্কর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতা, তখন আমার কৌতূহল হলো। এভাবেই একবার দেখা হয় আর দেখা হওয়ার পর তাঁকে খুব ভালো লেগে গেল; খুবই আন্তরিক, নিখাদ মনের একজন মানুষ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে আমার আগ্রহ আছে। দীপঙ্করের সিনেমা তো দেখেছি, এ ছাড়া তারেক মাসুদ স্যারের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এ ছাড়া মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, হিমেল আশরাফসহ আরও অনেকের কাজ দেখেছি। বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীদের অনেকেরই কাজ খুব ভালো লাগে। চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, অপূর্ব, নিশো, তাসনিয়া ফারিণ...আরও অনেকে আছেন।
বিপ্লব গোস্বামী

প্রথম আলো :

এটা কবের ঘটনা?

বিপ্লব গোস্বামী : ২০১৯ বা ২০২০-এর দিকে হবে। এরপর দীপঙ্করের ছবি বের হয়, সেগুলো দেখি, নানা বিষয়ে আমাদের কথা হতো।

দীপঙ্কর দীপন। তানভীর আহাম্মেদ
প্রথম আলো:

এবারই কি প্রথম বাংলাদেশে এলেন?

বিপ্লব গোস্বামী : না। এর আগেও একবার এসেছিলাম বছর চারেক আগে। এরপর আরও একবার আসি ব্যবসায়িক কাজে। এবার তৃতীয়বার। হঠাৎ দীপঙ্কর বলল, ফ্রি থাকলে কুমিল্লা ঘুরে যাও। আমি একটু ব্যস্তই ছিলাম, কিন্তু কুমিল্লার নাম শুনে পরদিনই রেডি হয়ে চলে এলাম। কুমিল্লা দুর্দান্ত লেগেছে, মাঝে বৃষ্টি হয়েছে; সবুজের আবহে দারুণ সময় কেটেছে। মানুষও খুব আন্তরিক। কুমিল্লা শহর ছাড়া দৌলতপুর, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর গেলাম। আমি এসেই দীপঙ্করকে বলেছিলাম, যদি সম্ভব হয় আমাকে গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাও। গ্রামে গিয়েছিলাম সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে। ইচ্ছা ছিল আরও কয়েক দিন থেকে যেতে, কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় আপাতত উপায় নেই। আসলে ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশ নিয়ে একটা কৌতূহল ছিল, ভালোবাসা আছে, মা-বাবার কাছে অনেক গল্প শুনেছি। তখনই মনে হতো, কবে যাব...বাংলাদেশের মানুষের জীবনশৈলীর সঙ্গে পরিচিত হব।

বিপ্লব গোস্বামী। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

প্রথম আলো :

বাংলাদেশের সিনেমায় আপনাকে পাওয়া যাবে কি না?

বিপ্লব গোস্বামী : ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে আমার আগ্রহ আছে। দীপঙ্করের সিনেমা তো দেখেছি, এ ছাড়া তারেক মাসুদ স্যারের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এ ছাড়া মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, হিমেল আশরাফসহ আরও অনেকের কাজ দেখেছি। বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীদের অনেকেরই কাজ খুব ভালো লাগে। চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, অপূর্ব, নিশো, তাসনিয়া ফারিণ...আরও অনেকে আছেন। বাংলাদেশের সিনেমা তো ভারতে নিয়মিত মুক্তি পায় না। যখনই সুযোগ হয় ইউটিউব বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের কাজ দেখি। বাঙালি হিসেবে বাংলা সিনেমায় অবশ্যই কাজ করতে চাই। হিন্দি, তামিল সিনেমার কাজ করছি, শিগগিরই লেখক ও নির্মাতা হিসেবে বাংলায় কাজ শুরুর ইচ্ছা আছে। আমার খুব ইচ্ছা দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে একটা সিনেমা করব। দুই বাংলার দারুণ সব বিষয় নিজের কাজ করা যায়, অসাধারণ সব শিল্পীরা আছেন, তাঁদের নিয়ে কাজ করতে পারলে খুব ভালো লাগবে।

প্রথম আলো :

বাংলা কনটেন্টের দর্শক তো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে। এই দর্শকদের কাছে আরও ভালোভাবে কীভাবে পৌঁছানো যায়?

বিপ্লব গোস্বামী : এ জন্য নিখাদ পরিকল্পনা দরকার। সিনেমাশিল্প ও বাণিজ্যের মধ্যে এত বছর থেকে আমি যা বুঝেছি সেটা হলো, একটা যথাযথ, নিরপেক্ষ পরিকল্পনা যদি থাকে, তাহলে বাংলা কনটেন্টকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আমাদের তো দর্শকের অভাব নেই, তারা দেখবে না এটা হতে পারেনি। কেন ‘লাপাতা লেডিস’ বাঙালিরা দেখেনি? ঢাকা বা কলকাতা থেকে যখন ভালো সিনেমা হয়, তখন সে আলোড়ন তো হিন্দি সিনেমা বলয়েও পড়ে। সব সময় যে ভালো সিনেমা করতে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন তা কিন্তু নয়। অনেক সময় সীমিত বাজেট দিয়েও ভালো ছবি করা সম্ভব।