ঈদে শাহরুখ, সালমান ও আমির খান কী করেন
ঈদ মানেই খানদের খানদানে পুরোপুরি উৎসবের মেজাজ। বলিউডের সুপারস্টার শাহরুখ খান, সালমান খান ও আমির খান—তিনজনই ঈদ উৎসব পালন করেন জাঁকজমকপূর্ণভাবে। মুম্বাই থেকে বলিউডের তিন তারকার ঈদ উদযাপনের খবরাখবর জানাচ্ছেন দেবারতি ভট্টাচার্য
‘মান্নাত’–এ কাটে শাহরুখের ঈদ
ঈদের দিন মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় শাহরুখ খানের বাংলো ‘মান্নাত’ আলোয় আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে। করোনার আগে সাধারণত সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করতেন কিং খান। এখন সেই নিয়মে ছেদ পড়লেও ভক্তদের কখনো নিরাশ করেন না এই বলিউড সুপারস্টার। ঈদের দিন বিকেলে বান্দ্রায় তাঁর প্রাসাদোপম বাংলোর একচিলতে বারান্দায় এসে ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেন শাহরুখ। দুই হাত প্রসারিত করে সবার উদ্দেশ্যে দেন প্রেমের বার্তা। এদিন নিজের প্রিয় তারকাকে একঝলক দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন কিং খানের অনুরাগীরা। কাকভোর থেকে অপেক্ষায় থাকেন তাঁরা। প্রতি ঈদে শাহরুখের দোসর হয় তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র আব্রাম। ঈদের সারা দিন পরিবারের সঙ্গে কাটালেও রাতে অভিন্নহৃদয় বন্ধু সালমান খানের বাসায় যেতে ভোলেন না শাহরুখ।
‘ভাইজান’–এর বাসার বিরিয়ানি শাহরুখের বিশেষ পছন্দের। তাই নিজের বাড়িতে এলাহি আয়োজন থাকলেও সালমা আন্টির (সালমানের মা) হাতের বিরিয়ানি তাঁর চাই–ই চাই।
ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদ সম্মেলনে নিজের কৈশোরের ঈদ প্রসঙ্গে কিং খান একবার বলেছিলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা খুব সাদামাটাভাবে ঈদ করতাম। পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটাতাম। আর মা–বাবার হাত ধরে প্রতিবেশীদের বাড়িতে যেতাম। এদিন সকালে আব্বার সঙ্গে স্কুটিতে চেপে জামে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম। বাড়িতে মা বানাতেন হায়দরাবাদি খাবার। আর কখনো আব্বা বানাতেন পাঠানি খানা। সেসব খাবার আমি আজও মিস করি। আজও ঈদের দিনটা আমি পরিবারের সঙ্গেই কাটাই।’ এই সম্মেলনেই আব্রামের ঈদির প্রসঙ্গে হাসতে হাসতে এই তারকার কথা, আব্রামের কাছে তো রোজই ঈদ। তাই ঈদি হিসেবে ওকে নতুন খেলনা কিনে দিতে হয়।
শাহরুখের দুরন্ত ‘ফ্যাশন স্টেটমেন্ট’ সব সময়ই নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে। ঈদের দিনটির জন্য তিনি প্রায় সময় বেছে নেন সাদা বা কালো পাঠানি কিংবা শেরওয়ানি। গত রোজার ঈদেও ৫৮ বছর বয়সী এই তারকা সাদা পাঠানিতে এসে ভক্তদের ঈদের সালাম জানিয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছিলেন, ছোটবেলায় ঈদের দিন তিনি মোটেই কুর্তা-পায়জামা পরতে চাইতেন না। সুপারস্টারের কথায়, ‘মায়ের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে কুর্তা-পায়জামা পরতাম। আমি এখন আরিয়ানকে জোর করে পাঠানি স্যুট বা “আচকন” পরাই।’ একবার ঈদে শাহরুখ আর তাঁর বড় ছেলে আরিয়ানকে কালো রঙের পাঠানি স্যুটে দেখা গিয়েছিল। আর কিং খান নিজেও ডিজাইনারকে দিয়ে একই রকম পাঠানি স্যুট বানিয়েছিলেন।
সালমানের ঈদ বিরিয়ানিতে
সালমান খানের বাড়িতে প্রতিবছর খুব ধুমধামের সঙ্গে ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদের দিন শাহরুখের মতো সালমানের আবাসন ‘গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্ট’-এর সামনেও ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। আর এদিন পড়ন্ত বিকেলে ‘ভাইজান’ দেখা দেন তাঁর অনুরাগীদের। বাবা সেলিম খানকে সঙ্গে নিয়ে গ্যালাক্সির বারান্দায় এসে ভক্তদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান তিনি। শোনা গেছে, ঈদের দিন তাঁর বাড়িতে স্পেশাল বিরিয়ানি তৈরি করা হয়। আর এর রেসিপি সালমানের মা সালমার নিজস্ব। তবে এই বিটাউন তারকা তাঁর মায়ের হাতের শিউ-কোরমার বড় ভক্ত। যেকোনো ঈদেই নাকি তিনি ডায়েটের কথা ভুলে প্রাণ ভরে শিউ-কোরমা খান। সালমান একবার ঈদ ঘিরে ভাগ করে নিয়েছিলেন ছোট্ট এক স্মৃতি, ‘রমজানের সময় আম্মি বাড়ির জানালায় পাখিদের জন্য একবাটি ড্রাইফ্রুটস রাখতেন। আর পাখিরা টুকটুক করে সারা দিন তা খেত। দিনের শেষে যা বাঁচত, আমরা তিন ভাই তা ভাগ করে খেতাম।’
ঈদের দিনটি সালমান পুরোপুরি নিজের পরিবারের সঙ্গেই কাটান। এদিন তাঁদের পারিবারিক ছবিতে ছেয়ে যায় নেট দুনিয়া। এ বছর ঈদেও পুরো খান খানদান একছাদের তলায় একত্র হয়েছিল। ঈদের দিন বিকেলে সাদা পোশাকে ধরা দিয়েছিলেন সালমান। পাশে বাবা সেলিম খান ছাড়া ছিলেন তাঁর দেহরক্ষীরাও।
আমিরের ঈদি দুই টাকা
বলিউডের তিন খানের মধ্যে অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে ঈদ উদ্যাপন করেন আমির খান। এদিন তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, ঠিক আম্মির বাসায় চলে আসেন। আর আম্মির সঙ্গে বিশেষভাবে দিনটি কাটান এই তারকা। এদিন মায়ের হাতের রান্না খেতে ভালোবাসেন আমির।
তবে প্রতিবছর ঈদের সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ভোলেন না বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’। এ বছর রোজার ঈদের দিন সকালে তিনি পাপারাজ্জিদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তবে এবার তাঁর সঙ্গী ছিলেন দুই পুত্র জুনেইদ আর আজাদ। তাঁদের তিনজনেরই পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি। ঈদ উপলক্ষে এবার পাপারাজ্জিদের মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন আমির। করোনার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বলিউড তারকা ঈদ ঘিরে মেলে ধরেছিলেন নিজের শৈশবের স্মৃতি, ‘ছোটবেলায় ঈদি পাওয়ার লোভে বারবার বড়দের সালাম ঠুকতাম আমি।’ এ সময় বলিউড তারকা হাসতে হাসতে বলেন, ‘তবে আফসোস, দুই টাকার বেশি ঈদি কখনোই পেতাম না। এখনো আজাদকেও আমি দুই টাকাই দিই।’