প্রথম আলো :
ছোটবেলার জন্মদিনের কিছু স্মৃতি, যা আজও মনে পড়ে?
শাহরুখ খান: সত্যি বলতে, ছোটবেলার স্মৃতি ভীষণই আবছা।
প্রথম আলো :
কিন্তু বলিউডে আপনার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো বলে সুনাম আছে।
শাহরুখ খান: হা হা, (মৃদু হেসে) আসলে তখন জন্মদিন উদ্যাপনের অতটা চল ছিল না। আর মনে রাখার মতো কোনো জন্মদিন ছোটবেলায় উদ্যাপন করিনি। ’৮৫ কিংবা ’৮৬ সালে হবে পাঁচ-ছয়জন বন্ধু আমাদের বাড়িতে আসত। আর আমি ওদের সঙ্গে কেক কাটতাম। স্কুলে পারলে টফি ও মিষ্টি নিয়ে যেতাম বন্ধুদের দেওয়ার জন্য।
প্রথম আলো :
এদিন আপনার মা কি বিশেষ কিছু বানাতেন আপনার জন্য?
শাহরুখ খান: না, সে রকম কিছু বানাতেন না। আমাদের রেস্তোরাঁ ছিল। জন্মদিনের দিন সেখান থেকে স্পেশাল খাবার আসত।
প্রথম আলো :
শুনেছি, জন্মদিনের দিন আপনার বাবা আপনাকে তাঁর ব্যবহৃত পুরোনো জিনিস উপহার হিসেবে দিতেন।
শাহরুখ খান: একদমই ঠিক শুনেছেন। আব্বা আমাকে পুরোনো টাইপরাইটার, ক্যামেরা, টেপ রেকর্ডারসহ আরও অনেক পুরোনো জিনিস উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।
প্রথম আলো :
আজও কি আপনার কাছে আছে এগুলো?
শাহরুখ খান: জন্মদিনে পাওয়া আব্বার উপহারগুলো আমি আজও সযত্নে তুলে রেখেছি।
প্রথম আলো :
তারকা হওয়ার আগে কীভাবে জন্মদিন উদ্যাপন করতেন?
শাহরুখ খান: বন্ধুরা মিলে সেলিব্রেট করতাম। বাড়িতে আত্মীয়রা আসতেন। আর তখন ল্যান্ডলাইন ছিল। ল্যান্ডলাইনে বন্ধুদের ফোন আসত। তবে কখনোই বিশেষ কিছু হতো না। কিছু মানুষ তাঁর জন্মদিন নিয়ে খুবই উত্তেজিত থাকেন। আবার কেউ কেউ নিজের জন্মদিনকে ঘিরে খুব একটা উত্তেজনা দেখান না। আমি এই দ্বিতীয় দলে পড়ি।
প্রথম আলো :
জন্মদিনে আজ পর্যন্ত পাওয়া সেরা উপহার?
শাহরুখ খান: সব উপহারই সেরা। তবে আমার এক ভক্ত আমাকে তাবিজ উপহার দিয়েছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, আমাকে কেউ উপহারই দিতে চায় না। সবাই বলে, একে কী দেব, ওর কাছে সবকিছুই তো আছে। তবে সারা বিশ্ব থেকে মানুষের ভালোবাসা ভরা শুভেচ্ছা পাই, তখন আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
প্রথম আলো :
আজকে পাওয়া সেরা উপহার...
শাহরুখ খান: এখনো দেখা হয়নি। বাড়ি ফিরে দেখব কে কী দিয়েছে।
প্রথম আলো :
আর আজকে পাওয়া সেরা শুভেচ্ছাবার্তা...
শাহরুখ খান: ‘আই লাভ ইউ শাহরুখ’।
প্রথম আলো :
আব্রাম কী বলে শুভেচ্ছা জানাল?
শাহরুখ খান: আব্রাম বলেছে, ‘হ্যাপি বার্থডে বার্থডে বয়’। আজ সকালে আমার বড় ছেলে আরিয়ান ওকে জিজ্ঞেস করে, জানিস আজকে কেন বিশেষ দিন? তার জবাবে আব্রাম বলে, ‘জানি, আজ আমার পাপার জন্মদিন।’ আরিয়ান আবার আব্রামকে প্রশ্ন করে, ‘আমাদের বাড়ির সামনে কেন এত ভিড় জানিস?’ তার জবাবে আব্রাম বলে, ‘জানি, আমার পাপা দেখতে খুবই ভালো, তাই এত ভিড়।’
প্রথম আলো :
তারকা হিসেবে প্রথম জন্মদিনের কথা মনে পড়ে?
শাহরুখ খান: খুব সম্ভবত ১৯৯৮ হবে। আমার কিংবা আরিয়ানের জন্মদিনের দিন খুব বড় করে পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। সেই প্রথম বলিউডের প্রায় সব তারকা জন্মদিনের পার্টিতে এসেছিলেন। অমিতজি, শ্রীদেবীজিসহ আরও অনেক বিশিষ্ট মানুষ এদিন এসেছিলেন। এই দিনটা আমার কাছে খুব বিশেষ ছিল।
প্রথম আলো :
কখন অনুভব করলেন যে আজ আমি সুপারস্টার?
শাহরুখ খান: দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে (ডিডিএলজে) ও কুছ কুছ হোতা হ্যায়-এর পরপরই প্রচুর মানুষের ভালোবাসা পেতে শুরু করি। সবাই বলল, আমার ছবি এখন ভালো চলছে। ডিডিএলজে সত্যিই ভালো ছবি। এই ছবি আমাকে একটা জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল। তখন স্টার বলে ভাবিনি। তবে বুঝেছি আমি ভালো কাজ করছি। এই সিনেমাগুলোর পরপরই আমার এক জন্মদিনের দিন ফিল্ম সিটিতে প্রায় ৪৫ জন মানুষ ফুলের তোড়া নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আমি আমার ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করি এরা কারা। ম্যানেজার বলেন, এরা টিকিট ব্ল্যাকার। আমি সত্যি একটু অবাক হয়ে যাই। আমার সঙ্গে তাঁরা কেন দেখা করতে এসেছেন। তখন তাঁরা আমাকে বলেন, ‘আপনার জন্যই মানুষ আবার হলমুখী হয়েছে। আর আপনার জন্যই আমাদের ব্যবসা ভালো চলছে। ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা করেছি। তাই আজ আপনাকে আমরা ধন্যবাদ জানাতে এসেছি।’
প্রথম আলো :
আপনার ছবি কি মানুষের বাস্তব জীবনে প্রভাব ফেলে?
শাহরুখ খান: আমি এতে খুব একটা বিশ্বাস করি না। কিন্তু বাস্তব জীবনে দেখেছি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার ছবি দ্বারা মানুষ প্রভাবিত হয়েছে। আমি বুঝে উঠতে পারি না, এটা কী করে সম্ভব হয়। একটা ছবি দ্বারা মানুষ কীভাবে প্রভাবিত হয়। বিষয়টা আমাকে অবাক করে। চলচ্চিত্র তো একটা ম্যাজিক ইন্ডাস্ট্রি। আমার স্বদেশ ছবি দেখার পর অনেকে আবার এ দেশে ফিরে এসেছেন। ‘ওম শান্তি ওম’ ছবিতে দীপিকার হাত ধরে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে আমার আড়াই বছরের ছেলে বলে ওঠে, ‘পাপা, তুমি যেয়ো না।’ ডিডিএলজে দেখার পর অনেকে বিয়ে করে ফেলেন। তবে সিনেমা মানুষকে পজিটিভ ও নেগেটিভ দুইভাবে প্রভাবিত করে। এই নয় যে আমি নেগেটিভ চরিত্রে কাজ করিনি। তবে এসবের পর একজন অভিনেতা হিসেবে দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। তখন মনে হয় এমন কিছু করতে হবে, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে।
প্রথম আলো :
২৫ না ৫২, কোনটি অনুভব করছেন?
শাহরুখ খান: আমি এটা ঠিক বুঝি না। সত্যি বুঝে উঠতে পারছি না, আমি ২৫ বা ৫২। আমি এতগুলো বছর যা ছিলাম, তা-ই আছি। শরীরে ইনজুরি আছে, তবু সুস্থ আছি। আর মানুষের দায়িত্ব, পেশা এসবের প্রভাব তার স্বাস্থ্যের ওপর পড়ে। আজ আমাকে আমার পেশার কারণে অনেক সচেতন থাকতে হয়।
প্রথম আলো :
আজকের এই বিশেষ দিনে আপনি কী চান?
শাহরুখ খান: গতকাল রাতে আমার শাশুড়ি মা আমাকে ফোন করে অত্যন্ত আবেগের সঙ্গে জানতে চেয়েছিলেন যে ‘আজকের রাতে আমি কী চাই।’ দেখুন, জীবনের প্রতি পর্যায়ে একেক রকম চাওয়া থাকে। যখন ছাত্র ছিলাম তখন এক রকম চাইতাম। তারপর বিয়ে হলো। বাবা হলাম। তখন অন্য চাওয়া। তবে একটা জিনিস সব সময় চাই, আমি যেন সুস্থ থাকি। সুস্থতার আগে কিছু নেই। আর আমার সন্তানেরা যেন সুস্থ থাকে।