বলিউডের নতুন বিতর্ক সম্পর্কে কতটা জানেন

অনুরাগ কশ্যপ, কৃতি শ্যানন ও নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। কোলাজ

গত বছরের জানুয়ারিতে ‘পাঠান’ দিয়ে হিন্দি সিনেমার বক্স অফিস চাঙা হয়। ছবিটি ১ হাজার কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করে। এরপর আরও বেশ কয়েকটি সিনেমা সুপারহিট হওয়ায় ২০২২ সালের বক্স অফিসের ব্যর্থতা অনেকটা কাটিয়ে ওঠে বলিউড। কিন্তু চলতি বছর আবার হিন্দি সিনেমার ব্যবসা মন্দা। যার অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে অভিনেতাদের বাড়তি পারিশ্রমিক নেওয়াকে। সম্প্রতি এ বিষয়ে কথা বলেছেন অনুরাগ কশ্যপ, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীরা।

হিন্দি সিনেমার অনেক অভিনেতারই পারিশ্রমিক ১০০ কোটি রুপির বেশি। অনেক তারকার পারিশ্রমিক ৩০ থেকে ৫০ কোটি রুপির মধ্যে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এত পরিশ্রমের কারণে সিনেমা নির্মাণের ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কেবল তারকাদের পারিশ্রমিকই নয়, তাঁদের আনুষঙ্গিক অনেক খরচই জোগাতে হচ্ছে প্রযোজকদের।

আরও পড়ুন
অনুরাগ কশ্যপ
ইনস্টাগ্রাম থেকে

হিউম্যানস অব সিনেমাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্মাতা অনুরাগ কশ্যপ বলেন, একটি চলচ্চিত্র তৈরিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় শুধু তারকাদের চাহিদা মেটাতে। বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘“সেক্রেড গেমস”-এ যত ভ্যানিটি ভ্যান দেখেছি, আমার সেটে এত ভ্যানিটি ভ্যান আগে কখনো দেখিনি। এভাবেই সংস্কৃতির শুরু, পরে আপনি এর অন্যথা করতে পারবেন না।’

সাম্প্রতিক অতীতে ফ্লপ হওয়া কয়েকটি বড় বাজেটের ছবি সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনুরাগ বলেন, ‘তারা কেবল চলচ্চিত্রের জন্য ব্যয় করছে না। একটা জিনিস মানুষকে বুঝতে হবে যে আমরা যখন সিনেমা বানাই, তখন আমরা কাজ করি, আমরা কিছু নির্মাণ করি। এটা ছুটির দিন নয়, পিকনিক নয়। অনেক টাকা খরচ করে সিনেমা বানানো হয়…আপনি একটি জঙ্গলের মাঝখানে শুটিং করছেন। তবে আপনার তারকার জন্য তাঁর পছন্দসই পাঁচতারা হোটেল থেকে বার্গার আনতে তিন ঘণ্টা দূরে একটি গাড়িকে পাঠানো হবে...এমন অনেক কিছুই হয়। লোকেশন থেকে ৩ ঘণ্টা দূরত্বের কোনো হোটেলে চালককে গিয়ে সেই বিশেষ বার্গার নিয়ে আসতে হবে। অভিনেতার কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বার্গার কিন্তু ঠান্ডা হয়ে যায়।’

এই ঔদ্ধত্যের জন্য পরিচালক, প্রযোজক ও তারকাদের সহকারীদের দায়ী করেছেন অনুরাগ। একই সঙ্গে তিনি জানান যে তাঁর ছবির সেটে এ রকম কোনো কিছু করার অনুমতি দেন না। নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে অনুরাগ আরও বলেন, ‘তারকাদের স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য কোনো কোনো শেফ দিনে ২ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেন!’ এর পর তিনি হাতের ইশারা করে বলেন, ‘এইটুকু খাবার। পাখির খাবারের সমান।’
বলিউডের অনেক মেকআপশিল্পী কাজের জন্য দিনপ্রতি ৭৫ হাজার রুপি পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে মজা করে পরিচালক জানান, তিনি পরিচালকের বদলে মেকআপশিল্পী হলে এত দিনে আরও ধনী হয়ে উঠতেন।

নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। ছবি : এএফপি

একই প্রসঙ্গে অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীও কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘এটা তো আজ থেকে নয়, বহুদিনের সমস্যা।’ অভিনেতা আরও বলেন, ‘কিছু অভিনেতার অনেক অপ্রয়োজনীয় চাহিদা রয়েছে, তারা সবকিছুই বিলাসবহুল চায়। একটা জিম করার জন্য, একটা রান্নার জন্য, একটা খাওয়ার জন্য, গোসল করার জন্য ও চিত্রনাট্যের লাইন অনুশীলন করার জন্য ভ্যানিটি ভ্যান চায়। এটা পাগলামো। পাগলেরাই পাঁচটা ভ্যানিটি ভ্যান নিয়ে ঘোরে।’

সহ–অভিনেতাদের প্রতি খরচ কমানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন অভিনেতা অকারণে কেন প্রযোজনার খরচ বাড়াতে চান বুঝি না! নবাবদেরও এত দাবি ছিল বলে মনে হয় না। এটা ভীষণ ভুল। এর পরিবর্তে ছবিতে টাকা ঢালুন, তাতে আখেরে ছবির জন্য ভালো হবে।’

কৃতি শ্যানন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

কিছুদিন আগে একই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন কৃতি শ্যাননও। কৃতি ‘দো পাত্তি’ ছবির মাধ্যমে প্রযোজক হিসেবে ফিল্মি জগতে আসতে চলেছেন। তারকাদের হিসাবি হওয়ার পরামর্শ দিয়ে কৃতি বলেন, ‘ছবি নির্মাণের সময় এমন কিছু ব্যাপার আছে, যেখানে অনাবশ্যক খরচ অনেক বেশি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবির গল্পই শেষ কথা। অভিনেতাদের দাবি মেটানোর চেয়ে গল্পকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। একজন অভিনেতার যোগ্যতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাওয়া উচিত। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয় দেখা প্রয়োজন। বিশেষ করে ছবির গল্প যেন গুরুত্ব পায়।’

কৃতি একই প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘আমার মতে, সব অভিনেতার সেটের খরচের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। সবার উচিত অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ করা। আমি কখনোই অহেতুক দাবি করি না।’

তবে নির্মাতা অনুরাগ কশ্যপ মনে করেন সিনেমায় খরচ কমানোর ব্যাপারে বলিউডে তিন খান আমির, সালমান ও শাহরুখ সবচেয়ে সচেতন। এই নির্মাতার কথায়, ‘ছবির বাজেট যাতে বেড়ে সমস্যা সৃষ্টি না করে, সে ব্যাপারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকে এই তিনজনের। তাঁদের মধ্যে কেউই ছবির শুটিংয়ের আগে পারিশ্রমিক নেন না। ছবি বক্স অফিস লাভের মুখ দেখলে তারপর সেখান থেকে লভ্যাংশ নেন তাঁরা। ফলে তাঁদের ছবির শুটিংয়ে বাজেট নিয়ে আলাদা কোনো চাপ থাকে না প্রযোজকের; বরং বলব, এই তিন খানের ছবি সবচেয়ে “বাজেট-ফ্রেন্ডলি” হয়।’