‘চান্দু চ্যাম্পিয়ন’ নয়, ‘চ্যাম্পিয়ন’-এর গল্প

মুরলিকান্তের চরিত্রে কার্তিক আরিয়ানফেসবুক থেকে

মহারাষ্ট্রের একটি থানায় হাজির হন মুরলিকান্ত পেটকার। কারণ? তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করতে চান। ঘটনাটা ২০১৭ সালের। শুনে বিস্মিত হয়ে যান ইন্সপেক্টর শচীন কাম্বলে। মুরলিকান্ত জানান, খেলাধুলায় তাঁর বিশেষ অবদানের কারণে তিনি অর্জুন পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য হওয়ার পরও ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁকে তা দেননি।

ফ্ল্যাশব্যাক
এরপর কী? এরপর ফ্ল্যাশব্যাক। ১৯৫২ সালের দিকে যাত্রা। সেখানে একজন স্কুলপড়ুয়া তাঁর ভাইয়ের কাঁধে চড়ে ভারতের প্রথম অলিম্পিক গোল্ড মেডেলজয়ী কে ডি যাদবকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন। অনুষ্ঠান ঠিক নয়, রেলস্টেশনে কে ডি যাদবকে বরণের মহা আয়োজন। স্কুলপড়ুয়া মুরলিকান্ত জানতে পারেন, ভারতের হয়ে প্রথম কেউ অলিম্পিক গোল্ড মেডেল জেতায় কে ডি যাদবকে এমন সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।

স্বপ্নের শুরু
তারপর মুরলির সংকল্প তৈরি হয়, তিনিও একদিন অলিম্পিক জিতবেন। তাঁর স্বপ্নের কথা বন্ধুবান্ধব কিংবা অন্যরা জানার পর তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করেন। তাঁর নাম দেন ‘চান্দু চ্যাম্পিয়ন’। কিন্তু হাসাহাসি কিংবা চান্দু চ্যাম্পিয়ন উপাধি মুরলির সহ্য হয় না। তিনি তো অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হতে চান। তাহলে কী করতে হবে? তাঁর বড় ভাই তাঁকে নিয়ে যান বক্সার গণপতের কাছে। তাঁর স্বপ্নের গল্প শুনে সেখানেও হাসির রোল পড়ে।

যাত্রা শুরু
তারপর? হাসির পরও শুরু হয় যাত্রা। লক্ষ্য, বক্সিংয়ে অলিম্পিক জয়। একদিন গ্রামে আয়োজন করা হয় বক্সিংয়ের। আয়োজক এলাকার মোড়ল। বক্সার গণপতকে বলা হয়েছে, তাঁর বক্সাররা ইচ্ছা করে হেরে যাবেন। এ কথা শুনে কেউ রাজি হন না। পরে সিদ্ধান্ত হয়, মুরলি লড়বেন বক্সিংয়ে। ঘটেও তা-ই। কিন্তু কী ঘটে! জিতে যান মুরলিকান্ত। এই জিতে যাওয়াটাই বুমেরাং হয়ে দেখা দেয়। বুমেরাং, নাকি অলিম্পিক জয়ের পথে নতুন যাত্রা শুরু মুরলির! মোড়ল ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করে বসেন। প্রাণে বাঁচতে মিলখা সিংয়ের মতো শুরু হয় মুরলির দৌড়। ট্রেনের যাত্রী গারনেল সিং তাঁকে টেনে তোলেন।

মুরলির সংকল্প, তিনিও একদিন অলিম্পিক জিতবেন
ফেসবুক থেকে

মুরলির পরাজয়
এরপর গারনেল সিং ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে মুরলি গিয়ে হাজির ইএমই কোরের পরীক্ষায়। সেখানে যথাযথভাবে উত্তীর্ণ। একটা পর্যায়ে সেখানে ক্যাপ্টেন আলীর তত্ত্বাবধানে চলে বক্সিংয়ের প্রশিক্ষণ। সেখান থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক মিলিটারি বক্সিং। কিন্তু জয়ী হতে পারেন না মুরলি।

বাকিটা দেখে নেবেন
তারপর কী হয়? তারপর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়। মুরলিকান্ত গুলিবিদ্ধ হন। তাহলে কি থেমে যায় মুরলির অলিম্পিক-স্বপ্ন? মুরলির বাকি যাত্রাপথ আপনারা দেখে নেবেন কবির খান পরিচালিত সিনেমা ‘চান্দু চ্যাম্পিয়ন’-এ। বায়োগ্রাফিক্যাল স্পোর্টস ড্রামাধর্মী সিনেমা এটি। প্রযোজনা করেছেন সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা।
১৪ জুন মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চান্দু চ্যাম্পিয়ন’-এ ভারতের প্রথম প্যারালিম্পিক গোল্ড মেডেলজয়ী মুরলিকান্ত পেটকারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কার্তিক আরিয়ান। ক্যাপ্টেন আলী চরিত্রে আছেন বিজয় রাজ।

‘চান্দু চ্যাম্পিয়ন’ সিনেমায় বাস্তব জীবনের মতোই একজন ‘চ্যাম্পিয়ন’ হয়ে উঠেছেন কার্তিক আরিয়ান
ফেসবুক থেকে

কেমন হলো
বায়োগ্রাফিক্যাল সিনেমার গল্প তো দর্শকের মোটামুটি জানাই থাকে। তাই দারুণ কিছু করতে পারা বেশ শ্রমসাধ্য। সেই জায়গা থেকে বয়স্ক মুরলিকান্তের চরিত্রে কার্তিক আরিয়ানকে দেখে মনে হয়েছে, চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জোর চেষ্টা চালিয়েছেন কার্তিক। তবে খেলোয়াড় কার্তিক আর কোচ বিজয় রাজের জুটি বেশ জমেছে। দর্শককে টান টান কাহিনির ভেতর আটকে রাখার মতো ব্যাপার না থাকলেও এক বসায় দেখে ফেলতে মন চাইবে, সেটা হতেই পারে।

‘চ্যাম্পিয়ন’ কার্তিক আরিয়ান

‘চান্দু চ্যাম্পিয়ন’-এর জন্য কার্তিক আরিয়ান নিজের সর্বস্ব ঢেলে দিয়েছেন, সেটা বোঝা যায়। তাঁর নিজেরও রয়েছে অনেক সংগ্রামের পর আজকের অবস্থানে উঠে আসার গল্প। গোয়ালিয়র থেকে উঠে এসেছেন তিনি। জায়গা করে নিয়েছেন বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে। বলিউডে তাঁর ছিল না কোনো গডফাদার। ছিল না কোনো যোগাযোগ। তিনি একজন বায়োটেক ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এখন সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান করছেন।

বায়োগ্রাফিক্যাল স্পোর্টস ড্রামাধর্মী সিনেমা এটি। প্রযোজনা করেছেন সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা
ফেসবুক থেকে

কার্তিকের উপলব্ধি
‘চান্দু চ্যাম্পিয়ন’ সিনেমায় বাস্তব জীবনের মতোই একজন ‘চ্যাম্পিয়ন’ হয়ে উঠেছেন কার্তিক আরিয়ান। এই সিনেমায় অভিনয় করা প্রসঙ্গে নিজের ভাবনা সম্প্রতি ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনকে জানিয়েছেন কার্তিক, ‘সিনেমাটি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। যখন কবির (খান) স্যার প্রথম আমার কাছে এসেছিলেন, তখন আমরা কেউই জানতাম না যে এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। কিন্তু তিনি যখন মুরলিকান্ত পেটকারের গল্প শোনালেন, মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এতটাই যে আমার কাছে এটা অনন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল। তাই সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না, সেটা না জেনেই ছবিটি করতে রাজি হয়ে যাই।’

যা শিখলেন কার্তিক
ছবিটি যাঁর জীবনী অবলম্বনে তৈরি, সেই মুরলিকান্ত পেটকারের গল্প কার্তিককে কতটা অনুপ্রাণিত করেছে, সেই গল্পও বলেছেন ফিল্মফেয়ারকে। তাঁর ভাষ্য, ‘এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা মানে, গল্প আপনার ভেতরে অসাধ্য সাধন করার ইচ্ছাশক্তি জাগিয়ে তুলবে এবং কঠোর পরিশ্রম আপনার কাছে প্রাধান্য পেতে থাকবে। তখন কোনো কিছু অর্জনের সংকল্প পেটকারের মতোই আপনার কাছে অন্যতম হয়ে উঠবে।’