এ আর রাহমানের সংসার ভাঙার নেপথ্যে কী
প্রায় তিন দশকের দাম্পত্য জীবনে বড় ধাক্কা। গতকাল মঙ্গলবার বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রাহমান ও সায়রা বানু। এর পর থেকেই আলোচনা চলছে, হঠাৎই কেন বিচ্ছেদের ঘোষণা দিলেন এই দম্পতি। বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে কী লিখলেন তাঁরা? বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে।
বিচ্ছেদের খবর জানিয়ে এ আর রাহমান আর সায়রা বানু যে বিবৃতি দিয়েছেন, মোটাদাগে সেখানে কারণ হিসেবে ‘মানসিক দূরত্ব’কে উল্লেখ করেছেন তাঁরা। বাংলাদেশ সময় গতকাল দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে এ আর রাহমান এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘ভেবেছিলাম আমরা ত্রিশে পৌঁছাব। কিন্তু মনে হয় সবকিছুরই এমন শেষ আছে, যা আগে থেকে বোঝা যায় না। ভাঙা হৃদয়ের ভার স্রষ্টার সিংহাসনও কাঁপিয়ে দিতে পারে। ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে সবকিছুর অর্থ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছি। যদিও ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের টুকরাগুলো আর আগের জায়গা ফিরে পেতে না–ও পারে।’
বন্ধুদের উদ্দেশে রাহমান আহ্বান জানান, ‘আমাদের জীবনের এই ভঙ্গুর অধ্যায়ে মহানুভবতা ও আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান জানানোয় আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’
এর আগে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে রাহমানের স্ত্রী সায়রা বানুর একটি বিবৃতি ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আনেন তাঁর আইনজীবী। আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে সায়রা বানুর আইনজীবী বন্দনা শাহ জানিয়েছেন, ‘বিয়ের বহু বছর পর স্বামী এ আর রাহমানের সঙ্গে বিচ্ছেদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সায়রা বানু। তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে মানসিক চাপের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। একে অপরের প্রতি তাঁদের গভীর ভালোবাসা সত্ত্বেও এই দম্পতি লক্ষ করেছেন, তাঁদের মধ্যে দিন দিন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অনেক ব্যবধান, যা এই মুহূর্তে কোনো পক্ষই পূরণ করতে সক্ষম নয় বলে মনে করছেন তাঁরা। উভয়েই আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন মিটিয়ে নিতে, কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি।’
সায়রা বানুর ভাষ্য, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর পক্ষে মোটেও সহজ ছিল না। অনেক ব্যথা ও যন্ত্রণা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে আইনজীবী অনুরোধ করেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে যেন সায়রাকে বিব্রত না করা হয়। তিনি মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে ইতি টানা সহজ নয়।’
এ আর রাহমান ও সায়রা বানুর আইনজীবী বন্দনা শাহর আরেকটি মন্তব্য অন্যকিছু ইঙ্গিত করে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ধোকার কারণেই সব সময় তারকাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়, তা ঠিক নয়, জরুরি নয়। একে অপরের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার কারণে অনেক সময় সম্পর্ক ভেঙে যায়। আবার অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মা–বাবা, ভাই-বোন বা অন্য কোনো আত্মীয়ের কারণে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক প্রভাবিত হয়।
১৯৯৫ সালে সায়রা বানুর সঙ্গে সংসারজীবন শুরু করেন এ আর রাহমান। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে শিল্পী জানিয়েছিলেন, সায়রা বানুর সঙ্গে বিয়েটা হয়েছিল পারিবারিক পছন্দে। তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ বা প্রেম নয়। মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন তিনি।
সিমি গারেওয়ালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাহমান এমনও বলেছিলেন, স্ত্রী সায়রার সঙ্গে তাঁর কিছু সাংস্কৃতিক মতপার্থক্য রয়েছে। যদিও তাঁরা বিষয়টি সামলে নিয়েছেন বলেও জানিয়েছিলেন।
১১ বছর বয়স থেকে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার বিভিন্ন সুরকারের সঙ্গে বাজাতে শুরু করেন রাহমান। ঘটনাচক্রে ব্যক্তিজীবনে ধর্ম বদলান। ২৩ বছর বয়সে সপরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। তাঁর নাম ছিল দিলীপ কুমার। ১৯৯২ সালে তামিল ছবি ‘রোজা’ দিয়ে সুরকার হিসেবে তাঁর যাত্রা। পরে ১৯৯৫ সালে রাম গোপাল ভার্মার ‘রঙ্গীলা’তে সংগীত পরিচালনা করে তিনি শুরু করেন বলিউড যাত্রা।
ড্যানি বয়েলের ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’-এর জন্য অস্কার, গ্র্যামি, বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব জিতেছিলেন এ আর রাহমান। এ ছাড়ায় তাঁর ঝুলিতে আছে ভারতের ছয়টি জাতীয় পুরস্কার।