‘৯৬’ নির্মাতার নতুন সিনেমা হয়তো আপনার জীবনের সঙ্গেও মিলে যাবে

‘মেআরগান’-এর দৃশ্য। আইএমডিবি

তাঁর সিনেমা সংলাপনির্ভর। রহস্য-রোমাঞ্চ নেই, সেভাবে নাটকীয়তা নেই; তবু পর্দা থেকে চোখ ফেরানো যায় না। ২০১৮ সালে ‘৯৬’ বানিয়ে চমকে দিয়েছিলেন সি প্রেম কুমার। দীর্ঘ ছয় বছরের বিরতির পর এবার নতুন ছবি ‘মেআরগান’ নিয়ে হাজির নির্মাতা। ২৭ অক্টোবর নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর থেকেই ব্যাপক আলোচনায় সিনেমাটি। ভারত তো বটেই, অনেক বাংলাদেশি দর্শকও মজেছেন ‘মেআরগান’-এ। নতুন সিনেমাটি কি বহুলচর্চিত ‘৯৬’–কে ছাড়িয়ে যেতে পারল?

ঘরে ফেরার টান আশ্চর্য এক অনুভূতি। জীবনের প্রয়োজনে, কখনো বাধ্য হয়ে মানুষ যে ঘর ছাড়ে, আদৌ সেই ‘ঘর’-এ কি আর ফেরা হয়? ‘মেআরগান’-এর ফ্রেমে ফ্রেমে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন নির্মাতা। সি প্রেম কুমারের ছবিতে একটা স্মৃতিমেদুর ব্যাপার থাকে, আছে এ সিনেমায়ও। বারবার তিনি উসকে দিতে চান স্মৃতিকাতরতা। একান্নবর্তী পরিবার ছাড়ার পর শহরমুখী মানুষের শেকড়ে ফেরার যে টান, নিজের শহরে ফেরার যে আর্তি; সেটাই হিম বাতাসের মতো ধাক্কা দিয়েছে দর্শকের মনে।

‘মেআরগান’-এর দৃশ্য। আইএমডিবি

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিল ‘৯৬’। কিছুদিন আগেই ছবিটির মুক্তির বর্ষপূর্তিতে অন্তর্জাল ভরে গিয়েছিল ভক্তদের স্মৃতিচারণে। তামিল ছবি ‘মেআরগান’ও ঠিক শুরু হয়েছে ১৯৯৬ সালেই।

১৯৯৬ সালে জমিজমাসংক্রান্ত ঝামেলায় নিজের শহর ছাড়তে বাধ্য হয় অরুলের পরিবার। থিতু হয় মাদ্রাজে। ২২ বছর পর চাচাতো বোন ভুবানার বিয়ে উপলক্ষে নিজের শহরে ফিরতে একরকম বাধ্যই হয় সে। অরুল চেয়েছিল, বিয়েতে স্রেফ চেহারা দেখিয়ে রাতেই ফিরতি বাস ধরবে। কিন্তু তাঁর সে ইচ্ছা কি পূরণ হয়? বিয়েতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় এক আগন্তুকের। যে অরুলকে দারুণ খাতির করে। তার সব গল্পই ওই ব্যক্তির জানা। কিন্তু অরুল কিছুতেই তাকে মনে করতে পারে না। কে এই আগন্তুক? তার সঙ্গে অরুলের সম্পর্কই বা কী?

‘মেআরগান’-এর দৃশ্য। আইএমডিবি

‘৯৬’-এর মতো ‘মেআরগান’ও সংলাপনির্ভর সিনেমা। কোনো রহস্য নেই, তবু আপনাকে পর্দায় আটকে রাখবে নির্মাতার গল্প বলার ধরন। এ যেন আত্মীয়তা আর নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের হৃদয় নিংড়ানো এক ভ্রমণ। প্রেম কুমারের সিনেমায় প্রাণী থেকে শুরু করে আপাতদৃষ্টে তুচ্ছ অনেক কিছুই পরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সিনেমায় যেমন আছে সাইকেল। এই অঞ্চলের মানুষের ‘ফেলে আসা জীবন’-এ সাইকেল নিয়ে কারই–বা স্মৃতি নেই!

প্রেম কুমার আগে ছিলেন চিত্রগ্রাহক। পর্দায় দুর্দান্ত ভিজুয়াল তাঁর সিনেমায় বাড়তি পাওনা। সঙ্গে আছে আবেগের দুর্দান্ত উপস্থাপন। মাঝরাতে ১৮ বছর বয়সী অরুলের শহর ছেড়ে যাওয়া, দুই দশক পর ফিরে ইতস্তত ভাব; সবই প্রেম কুমার তুলে এনেছেন দারুণ দক্ষতায়। বিয়ের আসরে ভাই-বোনের পুনর্মিলনী বা উঠানে মাদুর পেতে আগন্তুকের সঙ্গে অরুলের কথোপকথন সিনেমারই অন্যতম সেরা দৃশ্যগুলোর একটি। আগে বিয়েকে কেন্দ্র করে গ্রামে আত্মীয়স্বজনের একটা বড় পুনর্মিলনী হতো, সেই স্মৃতিও উসকে দিয়েছেন নির্মাতা।

‘মেআরগান’-এর পোস্টার। আইএমডিবি

এই ছবি দেখতে দেখতে আপনিও ফিরে যাবেন ফেলে আসা নিজের গ্রামে। ট্রেনে করে অরুল রওনা দেয়, জানালায় উঁকি দিলে চোখে পড়ে গ্রামের সুবজ; মনে হবে আপনিও আছেন অরুলের পাশের সিটে। ২২ বছর পর নিজের শহরে ফিরে অরুলের নিজেকে শুরুতে আগন্তুক মনে হয়, পরে অসহায় বোধ করে। তার দীর্ঘশ্বাস চেনা মনে হতে পারে আপনারও।

‘মেআরগান’-এ অরুলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অরবিন্দ স্বামী, অন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন কার্থি। দুজনের দুর্দান্ত অভিনয় এ সিনেমার অন্যতম বড় সম্পদ। দুজনই ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন এ সিনেমায়। অরবিন্দ আর কার্থির রসায়নের কারণেই ছবিটি মাঝপথে একটু শ্লথ মনে হলেও বিরক্ত লাগে না।

আরও পড়ুন

সঙ্গে বাড়তি ধন্যবাদ প্রাপ্য দক্ষিণি তারকা দম্পতি সুরিয়া ও জ্যোতিকা; তাঁরাই এ সিনেমার প্রযোজক কিনা!