ভারতের দর্শকেরা সিনেমা দেখে রেটিং দিলেন ৭.২, বাংলাদেশে মুক্তি না পেলেও রেটিং ৯.৫!
‘সীতা রামম’ সিনেমার পরে নতুন করে চমক জাগানোর আশায় ছিলেন দুলকার সালমান। প্রেমিক বা রোমান্টিক চরিত্রের বাইরে এবার তাঁকে দেখা গেছে পুরো অ্যাকশননির্ভর সিনেমায়। এমন অ্যাকশন সিনেমায় এর আগেও তিনি অভিনয় করেছেন, কিন্তু এবার দুলকার সালমানের জন্য সিনেমাটি ছিল বিশেষ। সেই ‘কিং অব কথা’ নামের সিনেমাটি গত বৃহস্পতিবার ভারত, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশের সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু সিনেমাটি নিয়ে ভক্তদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং ৭-এর নিচে। এক দিন আগেও এই রেটিং ছিল ৬.৩। মজার ব্যাপার হচ্ছে ভারত, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের ভক্তদের চেয়ে বাংলাদেশের দর্শকেরা সিনেমাটি না দেখেই সবচেয়ে বেশি রেটিং দিয়েছেন। এর কারণ হয়তো দক্ষিণের এই প্রিয় তারকাকে এগিয়ে রাখা। তবে দুলকার কি এ-যাত্রায় উতরাতে পারবেন নাকি ফ্লপের খাতায় নাম লেখাতে যাচ্ছেন, সেই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে?
সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন দুলকার সালমান। তার নাম রাজু। সে কথা নামে একটি তামিলের সীমান্ত এলাকার মাস্তান। এ এলাকায় তার কথার বাইরে কিছু হয় না। সেই রাজু হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়। এরপর তাকে দীর্ঘ ১০ বছরের বিশ্রামে থাকতে হয়। তারপর আবার রাজু তার রাজ্যে ফিরে আসে। কিন্তু তত দিনে কথা রাজ্যের অনেক কিছু বদলে গেছে। রাজু কি ফিরে পাবে তার রাজ্য? স্থানীয় মাফিয়াদের দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার দাপট, মাদকসহ নানা বিষয় গল্পে উঠে এসেছে। দুলকারের সিনেমাটির ব্যাপ্তিকাল ২ ঘণ্টা ৫২ মিনিট।
সেই ‘চার্লি’ সিনেমা থেকে এক বছর আগের ‘সীতা রামম’ সিনেমা কথাই যদি বলা যায়, তাহলে দেখা যাবে সেসব সিনেমায় দুলকার সালমান ছিলেন গল্পে প্রাণ। তাঁর অভিনীত বেশির ভাগ সিনেমার গল্পে চমক থাকে। গল্পবর্ণনায় থাকে নতুনত্ব। তাহলে কি ‘কিং অব কথা’ সিনেমায় সেটা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে? ভক্তদের অভিযোগ, গল্প বা গল্প বলায় নেই নতুন কিছু। সিনেমায় শুধু লোভ ও প্রতিহিংসার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তবে গ্যাংস্টার হিসেবে দুলকার পুরো মার্ক পাবেন। তিনি অভিনয়, স্টাইল, এলাকার মাস্তান হিসেবে দর্শকদের মন কেড়েছেন। গানগুলো ছিল উপভোগ্য। কিন্তু গল্প এমনভাবে বলা হয়েছে, যেখানে পরে কী ঘটবে, সেটা দর্শক আগেই বুঝে ফেলেন। অন্যদিকে ঐশ্বরিয়া লক্ষ্মীর অভিনয়ের জায়গা সেই অর্থে চিত্রনাট্য তৈরি হয়নি। কেউ কেউ বলছেন তাঁকে আরও বেশি সুযোগ দেওয়া দরকার ছিল। এ ছাড়া গোবিন্দ কৃষ্ণা, সৌবিন শাহিরদের অভিনয় ছিল প্রত্যাশানুযায়ী।
তবে গ্যাংস্টার সিনেমা হিসেবে এটাকে কোনো কোনো সমালোচক এগিয়ে রাখতে চান, কারণ সিনেমায় বড় ধরনের কোনো টেকনিক্যাল সাপোর্ট নেই, বড় ধরনের কোনো ক্যামিয়ো আর্টিস্ট নেই। সিনেমাটি যেন কয়েক দশক আগে নিয়ে যায় দর্শকদের। এর কারণ সেকেলে মারপিট দৃশ্যগুলো রিয়েলিস্টিক মনে হচ্ছিল। তবে সিনেমায় একাধিক বড় মারপিটের দৃশ্য না থাকলেও চলত। সিনেমার দৈর্ঘ্য আরও অনেক অংশে কমানো যেত। উমেশ পুওয়ানি নামের একজন সমালোচক সিনেমাটির কিছু দৃশ্য প্রসঙ্গে কইমইয়ে বলেছেন, ‘ফ্ল্যাশব্যাকের পরে গল্পটা অনেকটাই সাদামাটা ছিল। দেখা যায় একই সঙ্গে দুজন দীর্ঘদিন আগে গ্যাং ছিল। পরে একজন মাদক ব্যবসা, কালোবাজারি করে ধনী হয়েছে। অন্যজন এগুলোতে জড়াতে চায় না। পরে প্রতিশোধের বিষয়গুলো ক্লিশে মনে হয়েছে।’
কেউ কেউ সিনেমাকে গড়পড়তা বললেও সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্য, অভিনয়, ক্যামেরার কাজের প্রশংসা করেছেন। সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরও দর্শক পছন্দ করেছেন। তবে ভক্তদের অভিযোগ, প্রযোজক হয়তো কাল্ট ক্ল্যাসিক এই সিনেমাটিতে দুলকারকে ভিন্নভাবে দেখাতে চেয়েছেন। কিন্তু এই চরিত্রের সঙ্গে কোনোভাবেই মানানসই নয় দুলকার। অনেকেই সিনেমাটিকে ৯০ দশকের গল্প বলেছেন।
মুক্তির তিন দিন পর গতকাল বেশির শোয়ে দর্শক ছিল হতাশাজনক। সকালের শোতে মাত্র ১৬.৫৫ শতাংশ দর্শক ছিল। দুপুরে ২২ শতাংশ ও সন্ধ্যায় ২৭ শতাংশ দর্শক সিনেমা হলে ছিল। তবে রাতে ছিল সবচেয়ে বেশি ২৮ শতাংশ দর্শক। সিনেমাটির গতকাল আয়ও হয়েছে অনেক কম। দুলকার সালমানের এলাকায়ও তেমন ব্যবসা করছে না সিনেমাটি। চার দিনে সিনেমাটির আয় ১৩.৫ কোটি রুপি, যা দুলকারের অন্য সিনেমার আয় থেকে অনেক কম। গতকাল পঞ্চম দিনে এই আয় ছিল আরও কম।
অভিলাষ জোসি পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘কিং অব কথা’। জানা যায়, সিনেমার বাজেট ছিল ৬০ কোটি রুপি। সিনেমাটি মুক্তির আগেই ৪১ কোটি রুপি আয় করেছে। সিনেমাটি এক হাজারের মতো হল পেয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ হলেই সিনেমাটি নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ কম। দুলকার সালমানের সিনেমাটি ফ্লপ নাকি হিটের কাতারে পড়তে যাচ্ছে, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। সিনেমাটি যদি ৮২ কোটি রুপি ব্যবসা করে, তাহলে এটাকে হিট সিনেমা বলা যাবে।
এদিকে সিনেমাটির গতকাল আইএমডিবি রেটিং ছিল ৬.৪। এই রেটিং বিভিন্ন দেশের ভক্তদের। ‘কিং অব কথা’ নিয়ে ভারতের দর্শকদের ভোটের গড় রেটিং ৬.৩। এক দিনের ব্যবধানে বর্তমান সিনেমাটির রেটিং ৭.১। ভারতের ৮১ শতাংশ দর্শক সিনেমাটিকে ১০-এ ১০ দিয়েছেন। সে তুলনায় ১০-এ ৯ দিয়েছেন মাত্র ২ শতাংশ দর্শক। যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। যুক্তরাষ্ট্রের ভক্তদের গড় রেটিং ৬.৫। যুক্তরাজ্যের দর্শক সিনেমাটি দেখে রেটিং দিয়েছেন ৬.২। বাংলাদেশে সিনেমাটি মুক্তি না পেলেও সিনেমাটি বাংলাদেশ থেকে সর্বাধিক রেটিং পেয়েছে ৯.৫! ৯০ শতাংশ দর্শক সিনেমাটিকে ১০-এ ১০ দিয়েছেন। কেউ ৭-এর নিচে রেটিং দেননি। দুলকার সালমানের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বাড়িয়ে রেটিং দিচ্ছেন অনেকে। এই রেটিং দিন দিন বেড়েই চলেছে। দুলকারের ‘কিং অব কথা’ রেটিংয়ে কতটা উতরাতে পারবে, এ প্রশ্ন অনেকের।
সূত্র: ভ্যারাইটি, কইমই, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস