অন্তরঙ্গ দৃশ্য দেখভাল করাই তাঁদের কাজ

‘গেহরাইয়া’র একটি দৃশ্যে সিদ্ধান্ত ও দীপিকা
ছবি : সংগৃহীত

হলিউড সিনেমায় অন্তরঙ্গ দৃশ্য হরহামেশা দেখা গেলেও বলিউডে অনেক দিন ধরেই এটা ছিল বড় ট্যাবু। তবে ইদানীং হিন্দি সিনেমা, ওয়েব সিরিজে নিয়মিতভাবে নায়ক-নায়িকার ঘনিষ্ঠ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। হলিউডে এ ধরনের দৃশ্য পরিচালনার জন্য আলাদা পরিচালক থাকেন, যাঁদের বলা হয় ‘অন্তরঙ্গ দৃশ্য সমন্বয়ক’। সম্প্রতি বলিউডও ঘনিষ্ঠ দৃশ্য আরও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য অন্তরঙ্গ দৃশ্য দেখভালের আলাদা পরিচালক নিয়োগ দিচ্ছে।

‘সিটি অব ড্রিমস’-এর পোস্টার
ছবি : সংগৃহীত

নাগেশ কুকুনুরের ওয়েব সিরিজ ‘সিটি অব ড্রিমস’-এ বেশ কয়েকটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ছিল অভিনেতা ইজাজ খানের। তিনি জানালেন দৃশ্যগুলোর শুটিং শুরুর আগে তাঁর অস্বস্তির কথা, ‘পর্দায় অন্তরঙ্গ দৃশ্য নিয়ে আমার কিছুটা সমস্যা ছিল, বিশেষ করে চুমুর দৃশ্য নিয়ে।’ কেবল ইজাজই নন, এ সমস্যা থাকে অনেক অভিনেতা–অভিনেত্রীর। এ সমস্যা কাটতে বলিউড পরিচালকেরা এখন দ্বারস্থ হচ্ছেন অন্তরঙ্গ দৃশ্যের সমন্বয়কদের।

‘গেহরাইয়া’তে সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী ও অনন্যা পান্ডে
ছবি : সংগৃহীত

ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের পরিচালকের কথা প্রথম নজরে আসে চলতি বছর মুক্তি পাওয়া শকুন বাত্রার ছবি ‘গেহরাইয়া’তে। দীপিকা পাড়ুকোন, অনন্যা পান্ডে, সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী অভিনীত ছবির পোস্টার মুক্তির পর সেখানে অন্তরঙ্গ দৃশ্যের পরিচালক হিসেবে আস্থা খান্নার নাম দেখা যায়। ছবিটিতে দীপিকা ও সিদ্ধান্তের বেশ কয়েকটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ছিল। অনেকেই তখন মন্তব্য করেন, ছবিটি যাতে সেন্সর পেতে সমস্যা না হয়, সে জন্যই এ ধরনের পরিচালকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু অন্তরঙ্গ দৃশ্য সমন্বয়কদের কাজ মোটেও সেন্সর ইস্যু দেখা নয়, বরং তাঁদের মূল কাজ ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের জন্য পাত্র–পাত্রীদের তৈরি করা এবং পর্দার দৃশ্যগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা।

আস্থা খান্না
ছবি : সংগৃহীত

আস্থা খান্না বলেন, তিনি অন্তরঙ্গ দৃশ্যে শুটিং আরও নিরাপদ করতে চান। মূলত নগ্ন দৃশ্য, নায়ক-নায়িকার ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ও পর্দায় যৌন সহিংসতার দৃশ্যগুলো যেন ঠিকঠাকভাবে হয়, সেটাই দেখভাল করেন তিনি। আস্থা বলেন, ‘অ্যাকশন দৃশ্যের জন্য স্টান্ট সমন্বয়ক, নাচের দৃশ্যের জন্য কোরিওগ্রাফার থাকেন। কিন্তু এটা অদ্ভুত যে বলিউড ছবির ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের জন্য আলাদা কোনো পরিচালক ছিলেন না।’ তবে তিনি মনে করেন, বলিউডে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের শুটিংয়ের জন্য দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।
নিজের কাজ প্রসঙ্গে আস্থা বলেন, ‘শুরুতে দৃশ্যটি নিয়ে পরিচালকের দর্শন অনুযায়ী অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলি। কী করা যাবে আর যাবে না, সে সীমারেখা নির্ধারণ করি। এটাও নিশ্চিত করি, পোস্ট–প্রোডাকশনে যেন দৃশ্যটিতে কোনো পরিবর্তন করা না হয়।’

‘গেহরাইয়া’তে সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী ও দীপিকা পাড়ুকোন
ছবি : সংগৃহীত

আস্থা অন্তরঙ্গ দৃশ্য পরিচালনা নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, জেনেছেন এ ধরনের দৃশ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি।
পর্দায় অন্তরঙ্গ দৃশ্যের পরিচালক থাকার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের দৃশ্যের শুটিংয়ে সীমা ছাড়ালে সেটা কোনো অভিনয়শিল্পীর জন্য মানসিক অশান্তির কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন

আস্থা মনে করেন, হ্যাশট্যাগ মিটু আন্দোলনের পর এখন অবশ্যই এ ধরনের দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় অন্তরঙ্গ দৃশ্যের পরিচালক থাকাটা জরুরি।
‘গেহরাইয়া’তে বেশ কয়েকটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেছেন দীপিকা। তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘পরিচালকের প্রতি আস্থা ছাড়া এ ধরনের দৃশ্যে অভিনয় সম্ভব ছিল না। কারণ, ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় মোটেও সহজ নয়। আপনাকে অবশ্যই একটা নিরাপদ পরিবেশ লাগবে, যেখানে আপনি স্বস্তি বোধ করবেন। ছবিতে দৃশ্যগুলো শুটিং আমরা যেভাবে করেছি, ভারতীয় সিনেমায় সেটা আগে হয়নি।’

‘ফোর মোর শটস প্লিজ’ ওয়েব সিরিজের দৃশ্য
ছবি : সংগৃহীত

আস্থার মতো আরেকজন অন্তরঙ্গ দৃশ্যের সমন্বয়ক নেহা বিয়াস। নিজের কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার কাজ দৃশ্যটি যাতে শৈল্পিকভাবে ধারণ করা যায়, সে জন্য অভিনয়শিল্পীদের সাহায্য করা। ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের সময় তাঁদের আচরণ কেমন হবে, তাঁদের শরীর কীভাবে সাড়া দেবে, সেটা দেখভাল করা।’


নেহা মনে করেন, ওয়েব সিরিজে এখন অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থাকে। সে ক্ষেত্রে তাঁর মতো সমন্বয়কদের কাজের পরিধি বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন

খোলামেলাভাবে যৌনতা তুলে ধরার জন্য আলোচিত ওয়েব সিরিজ ‘ফোর মোর শটস প্লিজ!’। এ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া সিরিজটির তিন কিস্তিতে প্রচুর খোলামেলা দৃশ্য রয়েছে। সিরিজটিতে কাজ করেছেন আস্থা খান্না। তিনি মনে করেন, যৌনতাকে এই সময়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে, যৌনতা মানেই নেতিবাচক কিছু নয়। গল্পের প্রয়োজনে এ ধরনের দৃশ্য থাকতেই পারে। সেটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলাই তাঁর মতো পরিচালকদের কাজ।

আরও পড়ুন