সিনেমাপ্রেমীদের জন্য বাল্কির উপহার, হৃদয় জয় করলেন দুলকর সালমান
সিনেমাপ্রেমীদের জন্য বাল্কির উপহার, হৃদয় জয় করলেন দুলকর সালমান
বিনোদনজগৎ আর চিত্রসমালোচক বা মিডিয়ার সম্পর্কটা ভালোবাসা আর ঘৃণায় ভরা। একজন পরিচালকের কাছে তাঁর ছবি সন্তানের মতোই। তাই বলা হয়, একটা ছবি মুক্তির পাওয়ার যন্ত্রণা, প্রসব যন্ত্রণার থেকে কম কিছু নয়। কিন্তু সেই সন্তানতুল্য ছবিকে অনেক সময় নির্মম এবং অন্যায়ভাবে ক্ষতবিক্ষত করেন চিত্রসমালোচকেরা। এই যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খায় চিত্রনির্মাতাদের। অনেক সময় অবসাদ ঘিরে ধরে তাঁদের।
কখনোবা তাঁরা তারার মতো খসে পড়েন বিনোদনের আকাশ থেকে। বলিউডের বরেণ্য চিত্রনির্মাতা তথা অভিনেতা গুরু দত্তের জীবনে এ রকমই ঘটনা ঘটেছিল। নিজের সব ভালোবাসা, আবেগ দিয়ে তিনি নির্মাণ করেছিলেন ‘কাগজ কে ফুল’ ছবিটি। কিন্তু সমালোচকেরা ‘কাগজ কে ফুল’ ছবিকে তখন তাদের কলমের ধারে নির্মমভাবে কাটাছেঁড়া করেছিলেন। এই যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেননি গুরু দত্ত। মানসিক অবসাদে চলে গিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। ‘কাগজ কে ফুল’-এর মতো সেদিনের সেই ফ্লপ ছবিকে আজকে কালজয়ী ছবির আখ্যা দেওয়া হয়।
পরিচালক আর বাল্কি ‘চুপ: রিভেঞ্জ অব দ্য আর্টিস্ট’ ছবিটি গুরু দত্তকে উপসর্গ করেছেন। আর তিনি এই ছবির মাধ্যমে একদল লোভী চিত্রসমালোচকদের ‘চুপ’ থাকার কথা বলেছেন। এসব চিত্রসমালোচক অর্থের লোভে বা চ্যানেলের টিআরপি বাড়ানোর জন্য অন্যায়ভাবে একটা ছবি হত্যা করেন। ছবি রেটিং সিস্টেমের বিরুদ্ধে এক শিল্পীর প্রতিশোধ নিয়ে ‘চুপ’ ছবিটি।
কাহিনি
এক রাতে চিত্রসমালোচক নিতিন শ্রীবাস্তবকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর আরও দুই সমালোচককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। একের পর এক হত্যার ঘটনায় বিনোদনজগৎ তথা সংবাদমাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি হয়। পুলিশ কর্মকর্তা অরবিন্দ মাথুর (সানি দেওল) এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নামেন। তিনি অচিরে বুঝতে পারেন যে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আছে এক সিরিয়াল কিলার। আর সেই হত্যাকারী ছায়াছবির দুনিয়ারই কেউ। কারণ, তার যত রাগ চিত্রসমালোচকদের ওপর। আর এই হত্যাকাণ্ডে এক অদ্ভুত বিষয় অরবিন্দ লক্ষ করেছিলেন। সমালোচকেরা যেভাবে ছবির সমালোচনা করেছেন, তাদের সেভাবেই হত্যা করেছে হত্যাকারী। অরবিন্দ সমালোচকদের নেতিবাচক রিভিউ লেখা বন্ধ করার কথা বলেন। তারপরও এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয় না৷ তখন অরবিন্দ এ হত্যা মামলার তদন্তের জন্য বন্ধু তথা মনোচিকিৎসক জেনোবিয়ার (পূজা ভাট) সাহায্য নেন।
এদিকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় ড্যানির (দুলকর সালমান) এক ফুলের দোকান আছে। এই দোকানে ফুল কিনতে গিয়ে ড্যানির সঙ্গে বিনোদন সাংবাদিক নীলা মেননের (শ্রেয়া ধনন্তরি) পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে অন্তরঙ্গতা বাড়ে। প্রকৃত খুনিকে ধরতে অরবিন্দ নীলার সাহায্য নেয়। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ে সেই সিরিয়াল কিলার। কিন্তু কে সেই হত্যাকারী? যার হাতে হয়ে চলেছে একের পর এক নির্মম হত্যা। আর কেনই–বা তার নিশানায় শুধু চিত্রসমালোচকেরা। এদিকে ড্যানির জীবনে এক অন্ধকার অতীত আছে, কী সেই অতীত? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে দেখতে হবে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারধর্মী ছবি ‘চুপ’।
ভালো-মন্দ
আর বাল্কি মানেই ব্যতিক্রমী কিছু। এর আগে তিনি ‘পা’, ‘চিনি কম’, ‘প্যাডম্যান’-এর মতো ভিন্ন ধারার ছবি উপহার দিয়েছেন। আবার এক ব্যতিক্রমী ছবি উপহার দিলেন বাল্কি। তিনি চিত্রনির্মাতা আর সমালোচকদের মধ্যে খুব সুন্দর সমতা বজায় রেখেছেন। একটা ছবিকে কেন্দ্র করে সবার আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, আর তা সম্মান করা উচিত, এই ছবিতে তা প্রকাশ পেয়েছে। ‘চুপ’ ছবির কাস্টিং সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল। একদিকে সানি দেওল, আর অপর দিকে দক্ষিণি তারকা দুলকর সালমান। দীর্ঘ সময় পর বাল্কি পূজা ভাটকে বড় পর্দায় ফিরিয়ে আনলেন। আর বাল্কির ছবিটি আপাদমস্তক সিনেমাপ্রেমীদের জন্য। ছবির বেশ কিছু দৃশ্য মন ছুঁয়ে যায়। দুলকর আর শ্রেয়ার রোমান্টিক দৃশ্যগুলো খুব সুন্দর করে আঁকা হয়েছে।
গুরু দত্তর ‘কাগজ কে ফুল’, ‘প্যায়াসা’, আর তাঁর ছবির গান ‘চুপ’-এ খুব সুন্দরভাবে গাথা হয়েছে। সাহির লুধিয়ানবির লেখা গান ‘ইয়ে দুনিয়া অগর মিল ভি জায়ে’, ‘জানে ক্যায়া তুনে কহি’ দ্বারা প্রেরিত হয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বানানো হয়েছে, যা ছিল অত্যন্ত শ্রুতিমধুর। এই ছবির সংগীত একমুঠো তাজা বাতাস বয়ে এনেছিল। ‘চুপ’ ছবির শেষ দৃশ্যটি গুরু দত্ত দ্বারা অনুপ্রাণিত। আর এই দৃশ্য এক অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যায়। ছবির বেশ কিছু সংলাপ দারুণ।‘ চুপ’-এর একটা সংলাপ দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। সংলাপটি হলো, ‘কাগজের ওপর যারা কলম চালান, তারাই “কাগজ কে ফুল”-এর নির্মাতাকে চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন।’ আর বাল্কির সিনেমার প্রতি প্রেম, আবেগ এই ছবির পরতে পরতে ধরা পড়েছে। ছবির বেশ কিছু দৃশ্য মনে হয়েছে যে বাল্কি রংতুলি দিয়ে এঁকেছেন। বান্দ্রার অলিগলি, মেহেবুব স্টুডিওসহ আরও নানা কিছু খুব সুন্দরভাবে পর্দায় তুলে ধরেছেন সিনেমাটোগ্রাফার বিশাল সিনহা।
এবার আসা যাক ছবির মন্দ বিষয় প্রসঙ্গে। ‘চুপ’ ছবিতে বেশ কিছু ত্রুটি আছে, যা সিনেমাটি দেখলেই ধরা পড়বে। বিশেষ করে মুম্বাইয়ের মতো শহরে একের পর এক হত্যা হয়ে চলেছে অথচ পুলিশ সাইবার সেলের কোনো সাহায্য নেয়নি। হত্যাকারীকে ধরার জন্য সিসিটিভি ফুটেজের সাহায্য সেভাবে নেয়নি পুলিশ। অথচ মুম্বাইয়ের মতো শহরের আঁকেবাঁকে সিসিটিভি। ‘চুপ’ ছবির প্রথম ভাগ বেশ টান টান ছিল। দ্বিতীয় ভাগ সেই তুলনায় দুর্বল। ছবিটিকে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বলা হয়েছে। অথচ আর বাল্কি ছবির মাঝপথেই রহস্যের পর্দা সরিয়ে দেন। তাই খুনি কে জানতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি।
অভিনয়
দুলকর সালমানকে ‘চুপ’ ছবির প্রাণভোমরা বলা যায়। প্রেম, আবেগ, হিংস্রতা, উন্মাদনা—সবকিছুই তিনি নিখুঁতভাবে পর্দায় মেলে ধরেছেন। ‘সীতা রামম’-এরপর আবার নিজের দাপট দেখালেন এই দক্ষিণি তারকা। দুলকর সালমানকে এ ছবিতে নেওয়ার জন্য অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, আশা করি বাল্কি তাঁদের ‘চুপ’ করিয়ে দিতে পারবেন। শ্রেয়া সাংবাদিকের চরিত্রে দারুণ মানানসই। শ্রেয়ার সঙ্গে দুলকরের রসায়ন মুগ্ধ করে সবাইকে। ‘চুপ’ ছবিতে সানিকে তাঁর নিজস্ব আন্দাজে দেখা গেছে। পূজা ভাটকে দীর্ঘ সময় পর পর্দায় দেখা গেল। তিনি তাঁর অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে যথাযথ।