দোবারা: তাপসীর সঙ্গে এক রোমাঞ্চকর ভ্রমণ

চলচ্চিত্র: দোবারা

পরিচালক : অনুরাগ কশ্যপ
অভিনয়শিল্পী: তাপসী পান্নু, পাভেল গুলাটি, রাহুল ভাট, শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়, নিধি সিং, হিমাংশি চৌধুরীসহ অন্যরা।
রেটিং: ৩/৫

এই ছবিতে তাপসীকে এক জটিল চরিত্রে দেখা গেছে

বলিউডে এখন রিমেকের ধুম। হলিউড ছবি থেকে দক্ষিণি ছবির রিমেক হচ্ছে এখন মুড়িমুড়কির মতো। এরই মধ্যে পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ নিয়ে এলেন স্প্যানিশ ছবি ‘মিরাজ’-এর হিন্দি রিমেক ‘দোবারা’। একতা কাপুর প্রযোজিত এই ছবি রিমেক হলেও ছবির প্রতিটি বাঁকে পাওয়া গেছে অনুরাগের নিজস্ব ছোঁয়া। এই সাসপেন্স থ্রিলারধর্মী ছবিটি আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেঁধে রাখবে। মনে হবে যে তাপসী পান্নুর টাইম মেশিনে আপনিও সওয়ারি।

গল্প
ছবির গল্পের প্রসঙ্গে আসা যাক। ‘দোবারা’ ছবির কাহিনিকে দুই দশকের মধ্যে আসা–যাওয়া করতে দেখা যাবে। তাপসী টাইম মেশিনে ভর করে ২০২১ থেকে ১৯৯০-এ ফিরে যাবেন। ১৯৯০ সালে এক প্রবল বর্ষণমুখর রাত দিয়ে এই ছবির কাহিনি শুরু। পুনের হিঞ্জেবাড়িতে ১০ বছরের কিশোর অমেয় তার আর্কিটেক্ট মায়ের সঙ্গে থাকে। এই প্রবল ঝড়বৃষ্টির রাতে অমেয় প্রতিবেশীর বাসা থেকে মারপিটের আওয়াজ শুনতে পায়। কৌতূহলবশত অমেয় মাকে না জানিয়ে প্রতিবেশী ঘোষের (শ্বাশত) বাসায় পৌঁছে যায়। সেখানে গিয়ে সে দেখে, ঘোষপত্নীর রক্তাক্ত মৃতদেহ। এদিকে অমেয়কে দেখে ফেলেন মিস্টার ঘোষ।

তিনি অমেয়কে তাড়া করেন। অমেয় ভয় পেয়ে ছুটে পালাতে গিয়ে দমকলের গাড়ির চাকায় পৃষ্ট হয়। আর ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় ২টা বেজে ১২ মিনিট। ২টা ১২ মিনিটকে কেন্দ্র করে ‘দোবারা’ ছবির কাহিনি ঘোরাফেরা করে।

‘দোবারা’র একটি দৃশ্য
ছবি : আইএমডিবি

ছবির কাহিনি

১৯৯০ সাল থেকে সোজা চলে আসে ২০২১-এ। ছবিতে দেখা গেছে নার্স অন্তরা (তাপসী) স্বামী (রাহুল ভাট) আর মেয়ে অবন্তিকে নিয়ে পুণের এক নতুন বাসায় শিফট হয়েছেন। ঘটনাচক্রে এই বাড়ি হলো কিশোর অমেয়র। এই বাড়িতেই মায়ের সঙ্গে থাকত অমেয়। এদিন আবার প্রবল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। এই রাতে অন্তরা অমেয়র ঘর থেকে খুঁজে পান তার পুরোনো এক টেলিভিশন আর ভিডিও রেকর্ডার। এই ভিডিও রেকর্ডারটি অমেয়র খুব প্রিয় ছিল। সেই প্রবল ঝড়-ঝঞ্ঝার রাতে টেলিভিশন আর ভিডিও রেকর্ডারের মাধ্যমে অমেয়র সঙ্গে অন্তরার দেখা হয়। অন্তরা অতীতে ফিরে অমেয়কে প্রাণে বাঁচান। আর মিসেস ঘোষের হত্যাকারীকে ধরতে সাহায্য করে। অতীতের কারণে অন্তরার বর্তমান পুরোপুরি বদলে যায়। এক রাতেই চেনা মানুষগুলো অন্তরার কাছে অচেনা হয়ে যায়। তিনি খুঁজে পান না তাঁর ছোট্ট অবন্তিকে। এক ঘন রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়েন অন্তরা। আর এই রহস্যের জাল খুলতে হলে দেখতে হবে ‘দোবারা’।

‘দোবারা’ ছবির কাহিনি একটু জটিল হলেও সাসপেন্সে ভরপুর। এই ছবির প্রতিটি মুহূর্ত আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে। আড়াই ঘণ্টার এই ছবি আপনাকে এতটুকু বিরক্ত হতে দেবে না। এটাই ‘টাইম ট্রাভেল’ ছবির বিশেষত্ব।

নির্মাতা অনুরাগ কশ্যপের সঙ্গে তাপসী

পরিচালক অনুরাগ চার-পাঁচটা মূল চরিত্রের মাধ্যমে এই ছবির গল্পকে বলেছেন। ছবির সিনেমাটোগ্রাফি কাহিনির সঙ্গে যথাযোগ্য। দুই দশককে পর্দায় খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ভালো। তবে ‘দোবারা’ ছবিতে আবেগের ছোঁয়া একটু কম আছে। মেয়ে অবন্তিকে হারানোর পর অন্তরার মধ্যে সেই আবেগ ধরা পড়েনি। আবার মেয়েকে ফিরে পাওয়ার পরও অন্তরার মধ্যে সেই উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। ছবির সম্পাদনা আর একটু ভালো হওয়ার প্রয়োজন ছিল। আর ‘দোবারা’ ছবির কিছু দৃশ্য একটু দীর্ঘ বলে মনে হয়েছে।

‘দোবারা’র একটি দৃশ্য

অভিনয়

‘দোবারা’ ছবিতে সবার অভিনয় প্রসংশিত। এই ছবিতে তাপসীকে এক জটিল চরিত্রে দেখা গেছে। কিন্তু এই বলিউড নায়িকা তাঁর অভিনয়গুণে জটিল চরিত্রটি সহজভাবে পর্দায় মেলে ধরেছেন। শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়, পাভেল গুলাটি, রাহুল ভাট প্রত্যেকে নিজের চরিত্রের সঙ্গে সুবিচার করেছেন।