খালেদার প্রশংসা, হাসিনার সমালোচনায় ন্যান্সি
জাদুকরি কণ্ঠের জন্য শুরু থেকেই আলোচিত ন্যান্সি। কণ্ঠের জাদুতে ন্যান্সি মাতিয়েছেন দেশ-বিদেশের লাখো ভক্ত-শ্রোতাকে। অর্জন করেছেন দেশের সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে হয়েছেন সেরা সংগীতশিল্পী। এবার ন্যান্সি আলোচিত নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করে। সম্প্রতি এক ফেসবুক বার্তায় বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন তারকা এই সংগীতশিল্পী। আর এতে করেই নানাভাবে আলোচিত হয়ে ওঠেন গানের বাইরে ন্যান্সি।
সোমবার রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। সমর্থন জানিয়েছেন বিএনপির প্রতি। ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার দেওয়া সর্বশেষ বক্তব্যের। ন্যান্সি তাঁর ফেসবুক বার্তায় লিখেছেন, ‘আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। আজ বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনলাম। আমি ও আমার পরিবার সব সময় বিএনপিকে সাপোর্ট করেছি। কিন্তু আজ বিএনপির পক্ষপাতিত্ব করে নয়, বাংলাদেশের একজন সাধারণ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি বেগম খালেদা জিয়ার সুস্পষ্ট, সুচিন্তিত, জনহিতকর বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই। সেই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা অন্যায় করেছেন বা করছেন, তাঁদের প্রতি তিনি (বেগম জিয়া) যে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি দেখিয়েছেন, সেটাও নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।’
একই স্ট্যাটাসের পরের অংশে ন্যান্সি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে লেখেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহারকারী শেখ হাসিনার জন্য নয়, দীর্ঘদিন ধরে শুধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণে যাঁরা আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট করেছেন, তাঁদের সকল অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করেছেন; এখনি সময় প্রতিবাদ করার। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের মিথ্যাচারের কবল থেকে মুক্তি চায়। তাই এবার শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বিএনপি জয়লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ।’
ফেসবুকে নিজের এ ধরনের মন্তব্য প্রকাশের ব্যাপারে ন্যান্সি প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আমার পরিবার জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত। আমার মা-ও ছিলেন জাসাসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমার স্ট্যাটাসটি দিয়ে আমার রাজনৈতিক অবস্থানটা পরিষ্কার করলাম। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমি রাজনৈতিক আদর্শে চলার অধিকার রাখি। আর সেই হিসেবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাও আমার আছে। এটা আমার শিল্পী সত্তার একেবারেই বাইরের ব্যাপার।’
ন্যান্সি আরও বলেন, ‘এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পর আমি সে অর্থে কমেন্ট পাইনি ফেসবুকে। তবে অসংখ্য ফোন পাচ্ছি সেদিন রাত থেকে। সবাই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। সবার একটাই কথা—এটা আমি কী লিখালম! কেন লিখলাম। এ ধরনের মন্তব্যের কারণে আমার সংগীতের ক্যারিয়ারও শেষে হয়ে যেতে পারে। আমি যেন স্ট্যাটাসটা ডিলিট করি, সে পারমর্শও অনেকে দিয়েছেন। এ ছাড়া আমি যেন ফেসবুক বার্তাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করি।’
ন্যান্সি এ-ও বলেন, ‘রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের কারণে শ্রোতারা যদি আমার গান না শোনেন, আমাকে গান গাইতে না ডাকেন, যদি জাতীয় পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হই, ব্ল্যাক লিস্টেড হই, তাতে আমার কোনো দুঃখবোধ থাকবে না। আমি মনে করব শিল্পী হিসেবে আমি ব্যর্থ। কেননা সবাই আমাকে আমার কণ্ঠের জন্যই চেনেন। আমি যদি গান করার ক্ষমতা রাখি আর আমার গান যদি শ্রোতাদের ভালো লাগে, আমি অবশ্যই গান করে যাব। আমার রাজনৈতিক মত প্রকাশের কারণে আমার সংগীত ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে, তা আমি কখনো বিশ্বাস করি না।’
প্রসঙ্গত, এবারের ঈদে প্রকাশিত হয়েছে ন্যান্সির দ্বৈত গানের অ্যালবাম ‘ঝগড়ার গান’। আর্ব এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে প্রকাশিত অ্যালবামটিতে ন্যান্সি গেয়েছেন আসিফ আকবরের সঙ্গে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি মিশ্র গানের অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছে।