সুরকার আলাউদ্দিন আলী লাইফ সাপোর্টে
লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে বরেণ্য গীতিকার ও সুরকার আলাউদ্দিন আলীকে। শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে আজ শনিবার ভোর পৌনে পাঁচটায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থা বিবেচনা করে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয়। আলাউদ্দিন আলীর ছেলে শওকত আলী রানা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোরে উনার স্ত্রী আমাকে ফোন করে জানান,আলাউদ্দিন আলীর শরীর খুব খারাপ করেছে। রক্তচাপ খুব কমে গেছে। তখন আমি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করি। আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন, অক্সিজেন মাত্রা খুব কম। তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এমন অবস্থায় দ্রুত তাঁকে ভেন্টিলেটরে ব্যবস্থায় নেওয়া হয়। তবে এখনো রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক না। ফুসফুসের একটা অংশ পুরোপুরি নিমোনিক। সব মিলিয়ে বলা যায়, উনার অবস্থা মোটেও ভালো না। আগামী ২৪ ঘণ্টা তাঁর জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, উনি বমি করার সময় ফুসফুসে বমি ঢুকে গেছে। যে কারণে রোগী এসপিরেশন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।’
আলাউদ্দিন আলী ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছেন। প্রথমে ২০১৫ সালের ৩ জুলাই আলাউদ্দিন আলীকে ব্যাংকক নেওয়া হয়েছিল। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায়, তাঁর ফুসফুসে একটি টিউমার রয়েছে। এরপর তাঁর অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসাও চলছিল। এর আগে বেশ কয়েক দফায় তাঁকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। বাংলাদেশ ও ব্যাংককে তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। সাভারে সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন অব প্যারালাইজড কেন্দ্রেও চিকিৎসা নিয়েছেন দীর্ঘদিন।
আলাউদ্দিন আলী বাংলা গান, বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান তৈরি করেছেন। তিনি একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার। গান লিখে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। গুণী এই মানুষের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। তাঁর বাবা ওস্তাদ জাদব আলী। মায়ের নাম জোহরা খাতুন।
দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দিন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী। সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। পরে ১৯৬৮ সালে বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন। শুরুটা শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে, পরে প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘদিন।
লোকজ ও ধ্রুপদি গানের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা আলাউদ্দিন আলীর সুরের নিজস্ব ধরন বাংলা সংগীতে এক আলাদা ঢং হয়ে উঠেছে প্রায় চার দশক ধরে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বহু স্বনামধন্য শিল্পী তাঁর সুরে গান করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন।
আলাউদ্দিন আলীর সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তাঁর ছেলে শওকত আলী। বাবার অসুস্থতা ঘিরে যেন কোনো ধরনের গুজব ছড়ানো না হয়, সে অনুরোধও রেখেছেন তিনি।