কপিরাইটের নামে হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সংগীত ও চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টরা
কপিরাইট সুরক্ষার নামে দেশের সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি এবং সংগীতশিল্পীদের হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছে নিজ নিজ ক্ষেত্রের কয়েকটি সংগঠন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ‘হয়রানি’র বিস্তারিত তুলে ধরেন। যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (বামবা), মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইবি) ও বাংলাদেশ ফিল্ম প্রোডিউসারস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটরস অ্যাসোসিয়েশন (বিএফপিডিএ)।
সংবাদ সম্মেলনে ওলোরা আফরিন নামের এক আইনজীবীর লাইসেন্সিং অ্যান্ড কালেক্টিং সোসাইটি ফর সিনেমাটোগ্রাফ ফিল্মের (এলসিএসসিএফ) মাধ্যমে কপিরাইটকে ইস্যু করে হয়রানি ও মামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন আয়োজকেরা।
বামবা সভাপতি হামিন আহমেদ বলেন, আইনজীবী ওলোরা আফরিন কীভাবে লাইসেন্সিং অ্যান্ড কালেক্টিং সোসাইটি ফর সিনেমাটোগ্রাফ ফিল্ম নামের একটি সোসাইটির অনুমোদন পেলেন, তা বিস্ময়কর। শুধু তা–ই নয়, ওই সোসাইটির ব্যানার ব্যবহার করে কপিরাইট সুরক্ষার নামে তিনি নিজের স্বার্থ হাসিলে একের পর এক অপকর্মের মাধ্যমে এই শিল্পে গভীর অস্থিরতা তৈরি করে চলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইনজীবী ওলোরা আফরিন বিভিন্ন সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, টেলিভিশন চ্যানেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজকের কাছে নোটিশ পাঠাচ্ছেন। তাঁর ‘অবৈধ, অনৈতিক ও অস্বাস্থ্যকর’ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সংগীত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, প্রভাব খাটিয়ে হয়রানিমূলক মামলা করিয়ে সংগীত–সংশ্লিষ্ট দুজনকে কারাগারেও পাঠিয়েছেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে তাঁরা জামিনে বের হয়ে আসেন।
হামিন আরও বলেন, ‘এসব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি শিল্পীদের অধিকার ও মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সুষ্ঠু পরিবেশ সুরক্ষায় সরকারের সক্রিয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একই সঙ্গে ওই আইনজীবীর এ ধরনের হয়রানিমূলক অপতৎপরতা বন্ধ ও সিএমও নিবন্ধন বাতিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এমআইবি প্রেসিডেন্ট এ কে এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘অভিযুক্ত ওলোরা আফরিন সিনেমাটোগ্রাফির জন্য সোসাইটির অনুমোদন নিয়েছেন অথচ ওই সোসাইটিতে এ দেশের চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিই নেই। এখন ওই ব্যানার ব্যবহার করেই তিনি বিভিন্ন সংগীত প্রযোজক, সার্ভিস প্রোভাইডার এবং প্রোডাকশন হাউসের মাথার ওপর ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঢালাওভাবে সবাইকে তাঁর কথামতো চলার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর প্রস্তাবে রাজি না হলে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এবং সার্ভিস প্রোভাইডারদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি, লিগ্যাল নোটিশ ও মামলা দিয়ে চরম হয়রানি করে চলেছেন। আমরা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বিএফপিডিএ সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘কীভাবে তিনি এমন একটি অনুমোদন পেলেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ বিষয়ে অবিলম্বে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক এর সঠিক ব্যাখ্যা দাবি করছি। চলচ্চিত্রের সঙ্গে আদৌ সংশ্লিষ্ট নয়, এমন ব্যক্তি কীভাবে এ–জাতীয় একটি সিনেমাটোগ্রাফি সোসাইটির অনুমোদন পেলেন।’
সবশেষে প্রশ্নোত্তর সেশনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বামবা সভাপতি হামিন আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন এমআইবির সহসভাপতি ও অনুপম রেকর্ডিং মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও চেনা সুরের স্বত্বাধিকারী হাসান মতিউর রহমান, ইবিএস সলিউশনসের পরিচালক এনামুল হক, কাইনেটিক নেটওয়ার্কের জুয়েল মোর্শেদ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন হামিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন সংগীতজগতের তারকা, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, সংগীত পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আয়োজনে সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন শ্রাবণ্য তওহিদা।