ইলিশ আর আম নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় মাহফুজের ঈদ উদযাপন
বাংলাদেশে আজ ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় ইতিমধ্যে ঈদ উদযাপিত হয়েছে। ঝলমলে সিডনি শহরের আনন্দের মাঝেও রিনঝিনিঝিন কষ্টে উদাসী হয়েছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ এখন রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। কেমন কাটছে দিন, কেমন কাটবে ঈদ, এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশের এই অভিনেতা।
করোনার সংকটকাল শুরুর বেশ অনেকটা দিন বাংলাদেশেই ছিলেন অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। তবে সন্তানের আবদারের মুখে চলে আসেন সিডনিতে। বলেন, ‘বাংলাদেশে মহামারি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, আমি তখনো ঢাকাতেই। প্রায় আড়াই মাস আমি ঘর থেকে এক দিনের জন্যও বের হইনি। আর তখন বিমান চলাচলও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওদিকে আমার ছেলেমেয়ে তাঁদের মায়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায়। কি যে একটা শূন্যতা, বলে বোঝানো যাবে না। মাঝেমধ্যে মনে হতো, এই বুঝি শেষ। কোনো দিন মনে হয় আর দেখা হবে না ওদের সঙ্গে। সন্তানের মায়া বড় মায়া। পরে যখন বিশেষ ফ্লাইট চালু হলো, তখন সিডনিতে চলে আসি।’
অস্ট্রেলিয়ায় এসে ১৪ দিন বাধ্যতামূলক আইসোলেশনে থাকতে হয়েছে মাহফুজ আহমেদকে। সেই অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই বললেন, ‘জীবনে বহু একা থেকেছি, এমনিতে কখনই তেমন কিছু মনে হতো না। তবে এ ১৪ দিনকে বহু লম্বা মনে হয়েছে। আইসোলেশন আর জেলখানার মধ্যে পার্থক্য শুধু একটাই, থাকার একটু ভালো পরিবেশ, ব্যস। দরজা সব সময় বন্ধ থাকে, বাইরে নিরাপত্তারক্ষীরা পাহারায়। জেলখানায় প্রতিদিন বের হওয়া গেলেও, আইসোলেশনে ১৪ দিনে একবার ১০ মিনিটের জন্য বের হতে দেয়, যদিও আমি বাইরে যাইনি। ঘরের সামনে খাবার রেখে যেত। কেউ কাছে আসত না, কারও কাছে যাওয়াও যেত না। যদিও এ ব্যবস্থা আমাদের সুস্থতার জন্য, তবুও মনকে বোঝানো খুব কষ্টের ছিল। তবে ওখানে জীবনকে নতুন করে চিনলাম। প্রকৃতির কাছে খুব অসহায় লাগছিল আমাদের। পরিবারের এত কাছে থেকেও দেখতে পারিনি তাঁদেরকে। তবে আইসোলেশন শেষে যখন ছেলেমেয়েদের দেখতে পেলাম, আমার কাছে সেটাই আরেক ঈদ ছিল।’
পরিবার আর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়েই এবারের ঘরোয়া ঈদ আয়োজনের কথা জানালেন মাহফুজ আহমেদ। ছেলেমেয়ে আর স্ত্রীর সঙ্গে নতুন আঙ্গিকে একটা দিন যাপনের ঈদ আয়োজন মাহফুজ আহমেদের। বললেন, ‘ঈদ উদযাপন বলতে দেশে যেমন পশু কোরবানি আর সামাজিকতার আমেজ রয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও তেমন কিছু হয় না। নিজের আঙিনায় কোরবানির ব্যাপারটা এখানে কখনোই সম্ভব না। হয় হালাল মাংসের দোকানে কোরবানির ফরমান পাঠিয়ে দেওয়া লাগে, নয়তো ফার্ম হাউসের মতো জায়গায় নিজে কোরবানি দেওয়া যায়, যেটা খুব একটা দেখা যায় না। সব মিলিয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো ছাড়া কোরবানির ঈদে করার মতো কিছুই থাকে না অস্ট্রেলিয়ায়। তবে এর মধ্যে ভিন্ন কী করা যায়, ভেবে একটা পরিকল্পনা করলাম। এবারের বৈশাখটাও যেহেতু তেমন করে পেলাম না, তাই ঠিক করলাম পরিবার আর ঘনিষ্ঠ স্বজনদের নিয়ে কিছু একটা করা। সে জন্য অস্ট্রেলিয়ায় আমি নিজে ইলিশ আর আম বাংলাদেশ থেকে আনিয়েছি। সেই ইলিশ আর আম আবার নিজেই পৌঁছে দিয়ে এসেছি ঘনিষ্ঠ স্বজনদের বাসায়। এই তো আমাদের ঈদ। জীবনে অনেক সংকট আসবে, তবে সেগুলো কাটিয়ে উঠে নতুন করে বাঁচব বলেই আমরা মানুষ।’ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনের আশা ব্যক্ত করে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সিডনিতে বসবাসরত মাহফুজ আহমেদ।