করোনার দিনগুলোয় অমিতাভের খোলা ডায়েরি
১১ জুলাই রাতে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এল খবরটা। ‘বলিউডের শাহেনশাহ’ অমিতাভ বচ্চন নিজেই টুইটে জানালেন খবরটা। তাঁর করোনা পজিটিভ। ‘জলসা’র উঁচু দেয়াল আর নানা স্তরের নিরাপত্তাবলয় ভেদ করে করোনা কীভাবে ভেতরে পৌঁছে গেল, এ নিয়ে তখন রীতিমতো গবেষণা চলছে। এরই মধ্যে ১২ জুলাই মধ্যরাতে খবর এল, অমিতাভপুত্র অভিষেক বচ্চন করোনায় আক্রান্ত। আর সকালে জানা গেল, অমিতাভের পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ও নাতনি আরাধ্যরও করোনা পজিটিভ।
হাসপাতালে অমিতাভ বচ্চন ভর্তি হয়েছেন বলে কথা!
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অমিতাভ বচ্চনকে বাড়ির কাছে মুম্বাইয়ের নানাবতী হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। এর মধ্যে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। অমিতাভের অবস্থা এই ভালো তো এই খারাপ। তাঁর জন্য আলাদা করে বোর্ড বসিয়ে গঠন করা হয়েছে বিশেষ মেডিকেল টিম। অমিতাভের হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড়। হাসপাতালের এই ইউনিটি করোনার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। তাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের সামনে বেশ কিছুটা জায়গা ছেড়ে ব্যারিকেড দিয়েছে। অমিতাভ বচ্চনের শারীরিক অবস্থা জানানোর জন্যও গঠিত হয়েছে একটা বিশেষ পিআর (জনসংযোগকর্মী) দল।
কথা রেখেছেন অমিতাভ বচ্চন
অমিতাভ বচ্চন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভক্তদের কথা দিয়েছিলেন, হাসপাতালের দিনগুলোয় তিনি ভক্তদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। সেই কথা রেখেছেন অমিতাভ। ১১ থেকে ৩০ জুলাই দুপুর পর্যন্ত অমিতাভ টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ৩০টি করে পোস্ট দিয়েছেন। ব্লগেও যুক্ত হয়েছে নতুন লেখা। সব মিলিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শখানেক পোস্ট জড়ো হয়েছে। সব সময়ই অমিতাভ বচ্চন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়, তবে এইবেলা অমিতাভের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে ওঠা কঠিন। কখনো দুহাত জোড় করে জানিয়েছেন ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা। কখনো নেদারল্যান্ডসের জুতার ভেতর ছোট ছোট গাছে ফুল ধরে আছে, সেই ছবি আর নিজের পায়ের উলের জুতার ছবি পাশাপাশি রেখে জানিয়েছেন, তাঁর জুতাজোড়া এই কঠিন সময়ে তাঁকে উষ্ণতা দিচ্ছে।
ভালোবাসা আর প্রার্থনা স্পর্শ করছে অমিতাভকে
হাসপাতালের সামনে ব্যারিকেড দিলে কী হবে, অমিতাভকে আইসোলেশনে রাখলে কী হবে, সবকিছু পেরিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঠিকই অমিতাভ বচ্চনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে কোটি প্রার্থনা আর ভালোবাসা। অমিতাভ বচ্চন লিখেছেন, ‘আপনাদের ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি। আপনাদের দোয়া শুনতে পারছি। আপনাদের উদ্বিগ্নতা আমাকে স্পর্শ করছে। আমার এই জড়ো হওয়া হাত দুটো ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে।’
‘সৃষ্টিকর্তা, আমায় সাহায্য করুন
সাদাকালো দুটো ছবি। সেখানে ‘জলসা’র সামনে জড়ো হয়েছে হাজারো ভক্ত। হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন অমিতাভ। হাত নেড়ে সেই অভিবাদন গ্রহণ করছে উচ্ছ্বসিত ভক্ত। এমন দুটো ছবি পোস্ট করে অমিতাভ বচ্চন লিখেছেন, ‘এই যে হাজারো হাত, এগুলো আমার শক্তি। আমার শরীরের ভেতরেও এই শক্তি করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হতে লড়াই করছে। তাই সৃষ্টিকর্তা, আমায় সাহায্য করুন।’
সফল হোন, শত্রু ফ্রি!
অমিতাভ বচ্চন হাসপাতালে থেকে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে লিখেছেন, শত্রু বানানোর জন্য আপনাকে কেবল একটু সফল হতে হবে। শত্রু এমনিতেই তৈরি হয়ে যাবে। তারা প্রতিনিয়ত বিনা পারিশ্রমিকে আপনার শত্রু হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবে।
মৃত্যু মানে ফুরিয়ে যাওয়া নয়
তারকা হওয়ার প্যাকেজের সঙ্গে নাকি ‘অনলাইন বুলিং, ট্রলিং’ এগুলোও থাকে। করোনায় আক্রান্ত অমিতাভ বচ্চনকে নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেজেছে মৃত্যুঘণ্টা। ফেক আইডিধারী একদল লিখছে, তারা প্রার্থনা করছে, অমিতাভ বচ্চন যেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই বলিউড সুপারস্টার কড়া জবাব দিয়ে ব্লগে লিখেছেন, ‘ওরা আজ মুখোশের আড়ালে আমার মৃত্যু কামনা করছে, কারণ, আমি অমিতাভ বচ্চন। আমার সামনে এই মুহূর্তে দুটো রাস্তা খোলা। হয় আমি বেঁচে উঠব, না হয় আমি মারা যাব। আমি যদি মারাও যাই, তবুও আমার মৃত্যু মানে ফুরিয়ে বা শেষ হয়ে যাওয়া নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার ৯ কোটি ভক্ত আমার বর্ধিত পরিবারের অংশ। আর বেঁচে গেলে আমি এই “অসুর”দের শেষ দেখে ছাড়ব।’
প্রার্থনা
অমিতাভ বচ্চনের শেষ দুটি পোস্টে (বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত) দেখা যাচ্ছে প্রার্থনা। তিনি লিখেছেন, ‘সৃষ্টিকর্তা, আমাদের জীবন দেওয়ার জন্য, জীবনের চমৎকার সময় উপহার দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। আমরা আমাদের সমস্ত অনিশ্চয়তা, ভয় আর উদ্বিগ্নতা আপনাকে দিলাম। আপনি পবিত্র স্পর্শে আমাদের সুস্থ করে তুলুন। আমাদের আশীর্বাদ করুন, যাতে যখন কেউ আমাদের দেখছে না, সেই মুহূর্তেও আমরা সৎ থাকি।’
অমিতাভ বচ্চন আরও বলেছেন, হাসপাতালে পিপিই, মাস্ক পরে যে চিকিৎসক, নার্সরা তাঁর সেবা করছেন, তাঁরা সৃষ্টিকর্তার দূত। তাঁদের মঙ্গল কামনা করেও প্রার্থনা করেছেন অমিতাভ বচ্চন।
সোশ্যাল মিডিয়ার ‘পোকা’ অমিতভ বচ্চন
৭৭ বছর বয়সে এসেও অমিতাভ ‘নিউ মিডিয়া’র সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর সক্রিয়তা যেকোনো তরুণ তারকাদের উদ্বুদ্ধ করে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কোন মাধ্যমে তাঁর ভক্তসংখ্যা কত: ফেসবুক-২ কোটি ৯৯ লাখ। অমিতাভের ফেসবুকে পোস্টের সংখ্যা-২৮১০ (বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত)
টুইটার-৪ কোটি ৩৫ লাখ। টুইটারে তাঁর পোস্টের সংখ্যা-৩৬১০। টুইটারে ভক্তসংখ্যার দিক থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর অমিতাভ বচ্চনের অবস্থান।
ইনস্টাগ্রাম-মূলত ছবিসর্বস্ব মাধ্যম। এখানেও অমিতাভ বচ্চনকে ২ কোটি ৮ লাখ মানুষ ফলো করে।