আসিফের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মুন্নীর জিডি
গায়ক আসিফ আকবরের বিরুদ্ধে মানহানিকর এবং অসম্মানজনক অসত্য তথ্য প্রদানের অভিযোগ এনে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন গায়িকা দিনাত জাহান মুন্নী। ১ জুলাই থানায় হাজির হয়ে এই অভিযোগ করেন তিনি।
সাধারণ ডায়েরিতে মুন্নী উল্লেখ করেছেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শিল্পীদের সাহায্যার্থে আমরা কিছুসংখ্যক শিল্পী মিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মেসেঞ্জারে ‘সবাই কেমন আছি’ নামেও একটি গ্রুপ তৈরি করি। উক্ত গ্রুপের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রণোদনা হিসেবে সরকারি আর্থিক সহায়তার জন্য ১০০ জন শিল্পীর তালিকা প্রস্তুত করি। আমাদের গ্রুপের সব শিল্পী গত ২৫ জুন রাত নয়টায় সর্বসম্মতক্রমে একমত হয়েছেন, আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনা পারিশ্রমিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো প্রকার গান পরিবেশন করব না। গ্রুপের সব সদস্য একযোগে ব্যক্তিগত আইডি থেকে পোস্টটা শেয়ার করি। উক্ত পোস্টকে কেন্দ্র করে সিনিয়র শিল্পী ও জুনিয়র শিল্পীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন কমেন্টসকে কেন্দ্র করে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। জুনিয়র শিল্পীরা সিনিয়র শিল্পীদের অসম্মানজনক কটূক্তি করেন, যা কার্যত কারও জন্য কাম্য ছিল না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী পত্রিকায় একটি বিবৃতির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু এমতাবস্থায় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর তাঁর নিজস্ব ফেসবুক পেজ আসিফ আকবর থেকে ১ জুলাই সকাল, বিকেল এবং সন্ধ্যায় সংগীতের গিরগিটি পর্ব-১, পর্ব-২ এবং পর্ব-৩ নামে তিনটি পোস্টে সব ঘটনার জন্য আমাকে উসকানিদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে নানা ধরনের মানহানিকর এবং অপমানজনক অসত্য তথ্য প্রদানপূর্বক তিনটি পোস্ট দেন। বিষয়টি সামাজিকভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। প্রসঙ্গত উপরোক্ত তিনটি পোস্টে আমাকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে ‘বেগম সুলতানা’, ‘ঘষেটি বেগম’ প্রতীকী নাম ব্যবহার করেন।
আসিফ আকবর ও দিনাত জাহান মুন্নীর তিনটি দ্বৈত অ্যালবাম আছে, দুজন প্লেব্যাক করেছেন প্রায় ১৫টি চলচ্চিত্রে। এর মধ্যে কয়েকটি গান জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।
সাধারণ ডায়েরি প্রসঙ্গে দিনাত জাহান মুন্নী বলেন, ‘ফেসবুকে আসিফের কথাগুলো অত্যন্ত অসম্মানজনক। সংগীতাঙ্গনের বড়রাও আসিফকে বলার চেষ্টা করেছেন, এসব লিখো না। সে কারও কথা শোনেনি। সংগীতাঙ্গনের বাইরে তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষেরা এসব নিয়ে লিখতে বারণ করেছেন। আমি নিজে আসিফের স্ত্রীকে ফোন করেছি। আমার স্বামী কবির বকুলও আসিফকে ফোন দিয়েছে, কিন্তু ফোন ধরেনি। এত কিছুর পরও যখন শোনেনি, তখন আমি সাইবার ক্রাইমে বিষয়টা জানালাম। বললাম, আমি প্রতিকার চাই। তখন তাঁদেরই একজন কর্মকর্তা আসিফের পোস্ট দেখে বললেন, এখানে সাইবার অপরাধের অনেক তথ্যপ্রমাণ আছে। তাঁদের পক্ষ থেকেও আসিফের সঙ্গে কথা বলা হয়। তারপর সাইবার ক্রাইমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শে আমি হাতিরঝিল থানায় গিয়ে আসিফের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করে এসেছি।’
দিনাত জাহান মুন্নী আরও বলেন, ‘আরেকটা কথা না বলে পারছি না, আসিফ যেহেতু আমাকে ছদ্মনামে বুলিং করে গেছে, সচেতনভাবে আমার নাম এড়িয়ে গেছে, তাই মামলা করতে পারিনি। সাধারণ ডায়েরি করেছি, তা তদন্তে রয়েছে।’
সাধারণ ডায়েরি প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হয় আসিফের সঙ্গে। তিনি শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো পোস্টের কোথাও দিনাত জাহান মুন্নীর নাম বলিনি। আমি পোস্ট লিখেছি কুমার বিশ্বজিৎ ও জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের অপমান করা হয়েছিল বলে, সিনিয়রদের সম্মান রক্ষার্থে আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। এখানে কারও নাম উল্লেখ করিনি; বরং যাঁদেরকে ছোট করা হয়েছে, তাঁদের নাম উল্লেখ করেছি। সে ক্ষেত্রে এটা নিয়ে মুন্নীর সাইবার অপরাধে অভিযোগ করা বা মানহানি হওয়ার অভিযোগ করার কিছু নাই। যাঁর নামই নাই তাঁর মানহানি হয় কীভাবে?’
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রশিদ আজ শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। তদন্ত চলছে। এর বেশি এই মুহূর্তে আর কিছু বলার নেই।’