আমাকে নিয়ে বাসার মানুষ আতঙ্কে থাকত: পরীমনি
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পরীমনির গাড়ি। দ্রুত আরেকটি নতুন গাড়ি কিনে ভক্তদের সে খবর দেন তিনি। কদিন আগেই ছিল ফুটবলার মেসির জন্মদিন। ফুটবল হাতে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে প্রিয় ফুটবলারকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পরীমনি। এসব ঘটনা নিয়ে আবারও আলোচনায় এই ঢালিউড তারকা। দীর্ঘ সময় বাসায় আটকে থাকা ও শুটিং থেকে ফেরা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন তিনি।
সেদিন দেখলাম মেসির জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। ভক্তরা সেটা খুব পছন্দ করেছেন। আপনি আগে থেকেই ফুটবলপ্রেমী?
ফুটবলের প্রতি আমার ভালো লাগা অনেক আগে থেকে। ভক্তদের উৎসাহ দেখে সেই ভালো লাগা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তবে আমি কিন্তু শুধু মেসির ভক্ত নই, নেইমার ও রোনালদোর খেলাও আমার পছন্দ। তাঁদের একেকজনের একেকটি গুণ আমাকে মুগ্ধ করে। একটি দলকে পছন্দ করি বলে অন্য দলের ভালো খেলোয়াড়কে পছন্দ করতে পারব না, তা হয় না। আমি ফুটবল ভালোবাসি। যে বলটা হাতে ছবিটি পোস্ট করেছি, সেটার একটা মজার কাহিনি আছে।
বলেন তো কাহিনিটা!
তখন রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল চলছিল। ওই বলটা বিশ্বকাপের অরিজিনাল বল। ওই কোম্পানির বল দিয়েই শেষ বিশ্বকাপে খেলা হয়েছিল। ওই সময় আমি কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বলটি সঙ্গে এনেছিলাম। আনতে গিয়েই কাহিনি। বিমানবন্দর থেকে কোনোভাবেই বলটি আনতে দেবে না। আমি কেঁদে ফেলি। ফুটবলের জন্য কান্না দেখে বিমানবন্দরের লোকজন তো অবাক! তাঁদের মায়া হলো আমার প্রতি। একপর্যায়ে তাঁদের বুদ্ধিতে ফুটবল থেকে বাতাস বের করে চ্যাপ্টা করে বলটি বাংলাদেশে নিয়ে আসি।
ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা কবে থেকে?
ছোটবেলা থেকেই। ছোটবেলায় আমার জন্য খেলনা হিসেবে ঘোড়া, উড়োজাহাজ, ক্রিকেট ব্যাট, ফুটবল কেনা হতো। আমি ফুটবল নিয়ে বাসায় ভেতর ছোটাছুটি করতাম। খেলতে গিয়ে প্রায়ই বাসার কিছু না কিছু ভেঙে ফেলতাম। আমাকে নিয়ে বাসার মানুষ আতঙ্কে থাকত।
মেসি, নেইমার ও রোনালদোর খেলা দেখেন?
খেলা কম দেখি। কিন্তু ফুটবল নিয়ে আমার উন্মাদনা আছে। খেলাটাকে আমি ভালোবাসি।
আমার বাসায় একটি রুম আছে, সেখানে আমি জিম করি। দেয়ালটাকে আকাশের রঙে সাজিয়েছি। দেয়ালের নিচে ঘাস, জানালার পর্দা সরালেই গুলশান লেক। সারি সারি সুদৃশ্য বাড়িঘর। দেয়ালের এক পাশে সারি করে মেসি, নেইমার ও রোনালদোর ছবি টাঙিয়েছি। আরেক পাশে রবীন্দ্রনাথ, পাশে আগেকার দিনের কাঠের দোলনা। জিম করে দোলনায় বসে বিশ্রাম নিই।
এই তিনজনের কেউ কখনো যদি সামনে পড়েন, কী করবেন?
উল্টো দৌড় দেব (হাসি)। কারণ, তাঁদের আমার কল্পনায় যেভাবে সাজিয়েছি, কারও সঙ্গে যদি দেখা হয়, কথা বলার সময় যদি কল্পনার সঙ্গে না মেলে! তাহলে তাঁদের প্রতি ভালোবাসা, ভালো লাগা, মুগ্ধতার জায়গাটা নষ্ট হবে। সেটা আমি হারাতে চাই না। তাই প্রিয় কোনো তারকার সঙ্গে দেখা হলে কাছে যাওয়া, কথা বলা আমার পছন্দ নয়। শুধু তাঁদের বেলায় নয়, অন্য যে কারও ভক্ত হিসেবে আমি সামনে যেতে, কথা বলতে পছন্দ করি না।
দেখলাম নতুন গাড়ি কিনেছেন। কত পড়ল?
সাড়ে তিন কোটির মতো। শোরুম থেকে নিজেই চালিয়ে বাসায় ফিরেছি। গাড়িটার রং থেকে শুরু করে সবকিছু আমার পছন্দ হয়েছে। দুর্ঘটনায় আগের গাড়িটার সামনের অংশের অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেখলাম নতুন আরেকটি গাড়ি কিনেই ফেলি। এই গাড়ি পছন্দ হয়ে গেল, কিনে ফেললাম। কিন্তু গাড়িটা নিয়ে বাসায় একটু ঝামেলায় আছি।
কী ঝামেলা?
নানাভাইকে কে যেন বুঝিয়েছে, এটা স্পোর্টস কার। এটাতে আরও বেশি বিপদ হতে পারে। তাই নানাভাই বিভিন্নজনের মাধ্যমে আমাকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন গাড়িটি যেন আমি না নিই। ভয়ে আমি তাঁর থেকে দূরে দূরে থাকছি। কোনো কারণে আমাকে ধরে যদি গাড়িটা ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করেন, তখন আমার কোনো উপায় থাকবে না। তাই তাঁর কাছে খুব একটা ভিড়ছি না।
দুর্ঘটনা ঘটল কীভাবে?
ঘটনা ঘটেছে ভোররাতে, ঢাকার মধ্যে। আমার গাড়ি একটা ব্রিজের সঙ্গে মেরে দিয়েছে। গাড়ির সামনে-পেছনে ট্রাক ছিল। আমরা যারা গাড়িতে ছিলাম, সবারই বড় রকমের ক্ষতি হতে পারত। ওপরওয়ালা আমাদের রক্ষা করেছেন।
‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির শুটিং থেকে ফিরেই বাসায়। আড়াই মাস হয়ে গেল। একঘেয়ে লাগে না?
খুব একঘেয়ে লাগে। কোথাও বের হই না। একঘেয়েমি কাটাতে মাঝে রাতের বেলা ফাঁকা শহরে কিছু সময়ের জন্য ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। সপ্তাহখানেক হলো নানাভাইকে বাসায় এনেছি। এখন নানাভাইকেই বেশি সময় দিচ্ছি। তাঁর জন্য প্রতিদিন খাবার তৈরি করি। এর বাইরে জিম করি, সিনেমা দেখি। এই করোনার মধ্যে দিনযাপনের শিডিউল বদলে গেছে। রাত হয়েছে দিন, দিন হয়েছে রাত (হাসি)।
সিনেমার শুটিংয়ে এখন আর মানা নেই। কবে ফিরছেন শুটিংয়ে?
মানা নেই ঠিক আছে, কিন্তু করোনায় মৃত্যু, সংক্রমণ—দুটোই বাড়ছে। মাসখানেকের মধ্যে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির বাকি কাজের শিডিউল চেয়েছেন পরিচালক। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কীভাবে কাজ করি? ছবিটিতে অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আছে। ছবির বাদবাকি শিল্পীরা যদি সমস্যা মনে না করেন, তাহলে নির্দিষ্ট শিডিউলেই আমার শুটিং করার কথা ভাবতে হবে। শুধু আমার জন্য তো শুটিং আটকে রাখা যাবে না। তারপরও লোকেশনে সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবেশ নিশ্চিত করেই কাজটি করতে হবে।
অনেক দিন থেকে শোনা যাচ্ছে আপনি সিনেমা প্রযোজনা করবেন। শুটিংয়ের নির্দিষ্ট কোনো সময় নির্ধারণ করেছেন?
বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও কাজ শুরু করা হয়নি। কোনো না কোনো সমস্যার কারণে পিছিয়ে আসতে হয়েছে। এর মধ্যে আগের কিছু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন করে আবার গোছাচ্ছি। ‘ক্ষয়’ নামে যে কাজটি দিয়ে প্রযোজনা শুরু করার কথা ছিল, ওই কাজ দিয়েই শুরু করব। ছবিটিতে মায়া নামে একটি চরিত্রে আমার কাজের কথা ছিল। এখন আমি না-ও থাকতে পারি। যদিও পরিচালক শুনছেন না। বিষয়টি নিয়ে ভাবনার মধ্যে আছি। কাজটি শুরু করার আগে নতুন সিদ্ধান্তগুলো সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব।
‘পাফ ড্যাডি’ নামে প্রথম একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন। সিরিজটির খবর কী?
সেটার শুটিং শেষ হয়ে গেছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার আগেই। সম্পাদনার কাজও শেষ। আমার কিছু ডাবিং বাকি আছে। করোনার কারণে ডাবিংয়ের কাজ আটকে আছে। পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হলেই ডাবিং করে ফেলব।