কারও অভিমান, কারও স্বামী-সংসার-সন্তান

শবনম, শাবানা ও ববিতা। ছবি: সংগৃহীত
শবনম, শাবানা ও ববিতা। ছবি: সংগৃহীত

কারও ছিল অভিমান, কারও সংসারজীবনের তাড়া, কেউবা নিজের ইচ্ছায় চলচ্চিত্রে তুঙ্গে থাকার সময়ই কমিয়ে দিয়েছিলেন কাজ। কেউবা একেবারে বিদায় নেন। এখন পর্যন্ত আর দাঁড়াননি ক্যামেরার সামনে। শোনেননি ফাইভ, ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান, জিরো, অ্যাকশন-শব্দগুলো। চলচ্চিত্রের জীবন ছাড়তে কষ্ট হলে হলেও এসবে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই তাঁদের। এখন যেমন আছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট তাঁরা।

বরেণ্য অভিনয়শিল্পী শবনমের নায়িকা হিসেবে প্রথম ছবি ‘হারানো দিন’ সুপারহিট। ছবিটি মুক্তির পর অনেকে ওই ছবির গানের কারণেও তাঁকে ‘রূপনগরের রাজকন্যা’ও ডাকা শুরু করেন। ৫০-এর দশকের শেষে অভিনয়ে আসা এই নায়িকা অন্তরালে যাওয়ার আগে যে ছবিতে অভিনয় করেন, সেটিও সুপার-ডুপার হিট। ২১ বছর আগে মুক্তি পাওয়া ‘আম্মাজান’ ছবির পর আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াননি তিনি। এহতেশাম পরিচালিত ‘চান্দা’ ছবিটি ছিল শবনমের অভিনয়জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ১৯৬২ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির পর শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে চলা। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানে চলে যান তিনি। সেখানকার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। অভিনয়জীবনে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৮০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন বলে জানান শবনম। ১৯৯৯ সালে পুনরায় বাংলাদেশে এসে কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’ ছবিতে অভিনয় করেন। এরপর তাঁকে আর বড় পর্দায় দেখা যায়নি। তাঁর কথায়, মনের মতো চরিত্র পাননি বলে চলচ্চিত্রে অভিনয় ছেড়েছেন তিনি।

ক্লাস ফাইভে থাকতে প্রথম সিনেমার অভিনয়ে নাম লেখান শাবানা। বাবার উৎসাহ না থাকলেও এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ ছবিতে তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ‘চকোরী’ ছিল নায়িকা শাবানার শুরু। যে শাবানাকে শুরুতে বাবা চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে দিতে চাননি, সেই বাবাই পরে তাঁর অভিনয়ের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেন। শাবানাও হয়ে ওঠেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের একটা বিরাট অধ্যায়। এ অধ্যায়ে তিনি শেষ করেন ২৯৯টি সিনেমার কাজ। বাংলাদেশের সিনেমায় যখন অভিনয় নিয়ে খুব ব্যস্ত, ঠিক তখনই কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান শাবানা। হঠাৎ তাঁর এই দেশান্তরি হওয়ায় বিস্মিত হন ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট সবাই। শাবানা এখন থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। স্বামী-সন্তানসহ সেখানেই তাঁর স্থায়ী আবাস। স্বামী-সংসার আর সন্তানদের পাশে থাকতে শাবানা চলচ্চিত্র ছাড়েন বলে জানালেন। তিন বলেন, ‘হঠাৎ মনে হলো, সন্তানদের সময় দেওয়া দরকার। আমার বড় মেয়ে সুমী তখন এ লেভেল শেষ করল। উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলো। কিছুদিন পর ছোট মেয়ে ঊর্মি আর ছেলে নাহিনও যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেল। ওদের সবার বয়সই তখন আর কত। বাচ্চারা আমাকে খুব মিস করছিল। দেশে যখন ছিল, তখন আমার চোখের সামনেই ছিল। কাজের ফাঁকে দেখতাম। তখন আমিও ভাবলাম, মা হিসেবে আমার কিছু দায়িত্ব আর কর্তব্য আছে। সন্তানদের যদি ঠিকভাবে গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে আমার এই অভিনয়জীবন দিয়ে কী হবে! তাই কষ্ট হলেও সিনেমা ছেড়ে সন্তানদের ব্যাপারে মনোযোগী হলাম। এ জন্যই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। মানুষের জীবনে একটা সময় আসে, যখন কোনো উপায় থাকে না। জীবনের ধাপে ধাপে কিছু সময় আসে, সে সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব দরকার। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া, আমি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি।’

ষাটের দশকের শেষদিকে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন ববিতা। জহির রায়হানের ‘সংসার’ ছবির মাধ্যমে চিত্রজগতে অভিষেক ববিতার। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই শ ছবিতে অভিনয় করেন। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনিসংকেত’ ছবিতেও তাঁর অভিনয় করা হয়েছে। পাঁচ বছর আগে মুক্তি পায় নার্গিস আক্তারের ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ ছবিটি। এরপর অনেক পরিচালক তাঁদের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত রাজি করাতে পারেননি। ববিতার ভাষায়, ‘গল্প পছন্দ হয় না, তাই অভিনয় করতে আগ্রহ পাই না।’