নায়িকাদের বিব্রত করা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

‘সেন্স অব হিউমার’ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা দিয়ে আলোচনায় আসেন অভিনেতা এবং মডেল শাহরিয়ার নাজিম জয়। এরপর একে একে বেশ কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনা দিয়ে নিজস্ব ভাবমূর্তি তৈরি করেন তিনি। সম্প্রতি এই অভিনেতা এবং উপস্থাপককে চলচ্চিত্র তারকাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ এনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান জানান, ‘কিছুদিন ধরে আমাদের শিল্পীরা জয়ের নামে ফোন দিয়ে অভিযোগ করছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ভালো ভালো কথা বলে অনুষ্ঠানে ডেকে ব্যক্তিগত, অযাচিত ও অবান্তর কিছু প্রশ্ন করেন জয়। মানুষের সামনে শিল্পীদের ছোট করেন। হিট হওয়ার জন্য মিডিয়ার শিল্পীদের হেয় করে প্রশ্ন করেন তিনি। এই সব অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ থেকে জয়ের কাছে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছি।’ শিল্পী সমিতির এই নেতার সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, তাঁদের কার্যনির্বাহী মিটিং থেকে জয়ের কাছে চিঠিতে আরও জানতে চাওয়া হয়েছে, এই উপস্থাপকের কতগুলো ছবি রিলিজ হয়েছে। সেগুলোর নাম এবং মুক্তির সাল। তবে কতজন অভিনেত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন জানতে চাইলে জায়েদ খান বলেন, ‘আমাদের যারাঁই তাঁর অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, তাঁরা প্রায় সবাই অভিযোগ করেছেন। সবার একই কথা, তাঁদের ফোন দিলে যান, কিন্তু যাওয়ার পর কার ছবি চলে না, কার সঙ্গে কার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, কার ডিভোর্স হয়েছে, কার সঙ্গে কার কবে কী ঘটেছিল, নায়িকাদের অনেক ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন করেন। এগুলো তো ঘরোয়া ব্যাপার। মিডিয়ার সামনে কেন জিজ্ঞাসা করবেন। এই বিষয়গুলো ব্যক্তিগত এবং স্পর্শকাতর, যা আগে থেকে জানানো হয় না। এত সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাধ্য হয়েই তাঁকে শোকজ করা হয়েছে। যদি সদুত্তর না মেলে, তাহলে পরবর্তী মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

শাহরিয়ার নাজিম জয়। ছবি সংগৃহীত।
শাহরিয়ার নাজিম জয়। ছবি সংগৃহীত।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় চিঠি পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় তাঁরা কোনো একটা আইন বা ছুঁতো খুঁজে বের করছেন শিল্পী সমিতির সদস্যপদ থেকে আমাকে বাদ দেওয়া যায় কি না, সেটা নিয়ে। সে জন্য হয়তো আমার কাছে জরুরিভিত্তিতে জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার ছবির ডিটেইলস তো সবার জানা।’ উপস্থাপক জয় মনে করেন, এভাবে চিঠি দেওয়ার কোনো মানে হয় না। এটা তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে হতে পারে। নায়িকাদের প্রশ্ন করে বিব্রত করা প্রসঙ্গে এই উপস্থাপক বলেন, ‘আমার অনুষ্ঠানে যাঁরা আসেন, তাঁরা সবাই আমার প্রশংসা করে যান। কারও কাছে যদি আপত্তিকর কিছু মনে হয়, তাহলে এটার অভিযোগ দেওয়ার ক্ষমতা সবার আছে। আমার প্রোগ্রামে একাধিকবার নায়িকারা আসেন। এখানে আমি বিব্রতকর প্রশ্ন করলে দ্বিতীয়বার তাঁরা কেউই আসতেন না। আমার নামে কেউ কমপ্লেন তো করেনইনি, বরং অভিনেত্রীরা আমার প্রোগ্রামে এসে আমাকে প্রিয় উপস্থাপক বলে আখ্যা দেন। নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, ববি, পূজা চেরি, সবাই প্রশংসা করেছেন।’

জয়ের উপস্থাপনায় ‘জীবনের গল্প’ লাইভ অনুষ্ঠানে অতিথি মিশা সওদাগর এবং জায়েদ খান। ছবি: ফেসবুক থেকে
জয়ের উপস্থাপনায় ‘জীবনের গল্প’ লাইভ অনুষ্ঠানে অতিথি মিশা সওদাগর এবং জায়েদ খান। ছবি: ফেসবুক থেকে

এই উপস্থাপক মনে করেন, এই ঘটনার সূত্রপাত ‘জীবনের গল্প’ নামে অনুষ্ঠান থেকে হতে পারে। এখানে একটি পর্বে অতিথি হয়ে আসেন মিশা সওদাগর এবং জায়েদ খান। সেই প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘আমার অনুষ্ঠানের একটি পর্বে তাঁরা অনুরোধ করে আসছেন। সেটা খুবই প্রাণবন্ত একটি অনুষ্ঠান হয়েছে। অনুষ্ঠানের একটি জায়গায় আমি জিজ্ঞাসা করেছি, হিরো আলম সদস্য কি না? এটা জানতে চাওয়া কোনো বিব্রতকর প্রশ্ন হতে পারে না। এটা নিয়ে তাঁরা খুবই নেগলেট করায় তাঁদের উভয় পক্ষের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সেটা আমি জানি না। এখন তাঁরা আমার কাছে অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে উত্তর জানতে চেয়েছেন, কিন্তু উত্তর দেওয়ার তো কিছু নেই। তাঁদের চিঠিটাই আমার কাছে একটি অস্পষ্ট চিঠি মনে হয়। কেন দিয়েছেন আমি বুঝিনি। তবে একটা এসএমএস দিয়ে আমার ছবির নাম জানাতে পারি।’ জায়েদ খান হিরো আলম প্রসঙ্গে বলেন, ‘তাঁর অনুষ্ঠানে আমরা গিয়েছিলাম। শেষে আমাকে আর মিশা ভাইকে হিরো আলমকে নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন করে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন। এটা আগে কিছু বলেননি। একদম শেষ মুহূর্তে। আমরা যে কিছু বলব, সে সময়ও পাইনি। তারকাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা ঠিক না। তাঁদের কী প্রশ্ন করা হবে, আগে ধারণা দিতে হবে। এখন আমরা যে অভিযোগগুলো, পেয়েছি তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি।’