শুটিংয়ের 'নিউ নরমাল' জগতে
ইদানীং একটা কথা বেশ শোনা যাচ্ছে। ‘নিউ নরমাল’, মানে নতুন স্বাভাবিক। এতই শুনছি যে ‘নরমাল’ কথাটা শুনলেই বিরক্ত লাগছে। অস্থিরতা থেকেই হয়তো এমন হচ্ছে। বাসায় বসে আছি প্রায় দুই মাস। অফিস-শুটিং কেমন ছিল, আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছি। নরমাল জীবন কী রকম, সেটাই যখন আর মনে থাকছে না তখন আবার ‘নিউ নরমাল’ নিয়ে কতটাই–বা ভাবতে ভালো লাগে? তবে ভাবতে হবে। যতই বিরক্ত লাগুক না কেন। নিজের এবং আপনজনের নিরাপত্তার জন্য আমাদের মেনে নিতেই হবে যে করোনা-পরবর্তী সময় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আসবে।
নতুন পৃথিবীতে রীতি, নীতি, অভ্যাস কী হবে? এটা নিয়ে আমি কিছু বলব না। এসব নিয়ে বলার জন্য আমার চাইতে বেশি বিজ্ঞ অনেকেই আছেন। তবে নিউ নরমালের কারণে আমাদের শুটিংয়ের জগতে যে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা আমি করছি, সে নিয়ে কথা বলতে পারি।
প্রথমটা হলো হাতের গন্ধ। একটু বুঝিয়ে বলি। আমাদের বেশির ভাগ শুটিংয়ের সেটে খাওয়ায় অনেক মসলা থাকে। সেই মসলার গন্ধ সহজে হাত থেকে যায় না। বিশেষ করে মধ্যাহ্নভোজের পরপর পুরো সেট তরকারির গন্ধে ম–ম করে। মেকআপ আর্টিস্ট যখন লাঞ্চের পর মেকআপ ঠিক করতে আসেন, মনে হয় আমার মুখে মুরগির তরকারির ঝোল মাখা হচ্ছে! আমার বিশ্বাস, নিউ নরমালের কারণে এটার একটা ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। সবাই অনেকক্ষণ ধরে হাত ধুতে বাধ্য হবে। মুরগির ঝোলের ‘স্বৈরাচারিতা’ থেকে আমরা রেহাই পাব।
দ্বিতীয়টা হলো অম্বল। শুটিংয়ে থাকলে যখন–তখন খিদা পায়। লোভে পড়ে নানা ধরনের হাবিজাবি ভাজাপোড়া খাওয়া হয়। এর পাশাপাশি অনেক সময়েই যথা পরিমাণে পানি খাওয়া হয় না। এর কারণে অনেক দিনই শুটিংয়ের পর নিজেকে অভিনেতা নয়, গ্যাস বেলুন মনে হয়! করোনার কারণে যখন-তখন হাবিজাবি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। পানি খেতে হবে বেশি বেশি। ‘নিউ নিকুচি’ মানে নিউ নরমালে হয়তো অম্বলের কাল গ্রাস থেকে আমরা রেহাই পাব।
তৃতীয় হলো পরচর্চা। আমি বলছি না যে শুটিং সেটে অন্য জায়গার চেয়ে বেশি কুটনামি হয়। তবে কুটনামি যে হয়, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এতে মেকআপ রুমের পরিবেশ বিরক্তিকর হয়ে যায়। যেহেতু বেশির ভাগ কুটনামি কানে কানে হয়। আশা করা যাচ্ছে, যে কোভিড-১৯ পরবর্তীকালে পরচর্চার ব্যাপ্তিও একটু কমবে।
নিউ নরমালের এ রকম আরও অনেক ইতিবাচক দিক আমি চিন্তা করেছি। শেষ একটা বলি। এটা অবশ্য ব্যক্তিগত। চেহারা আর দেহের কারণেই হয়তো আমি বরাবরই রুপালি পর্দায় প্রেমে ব্যর্থ। হয় ছ্যাঁকা খাই, না হলে পাগল হয়ে যাই, না হলে নায়িকাকে খুন করতে গিয়ে নিজেই খুন হই। করোনা-পরবর্তী কিছু সময়ে এই ব্যর্থতায় আমি আর একা থাকব না। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংয়ের কারণে এখন কোনো প্রেমিক-প্রেমিকারই পর্দায় মিলন হবে না। সব গল্প হবে ছ্যাঁকা খাওয়ার আর আমাদের সব নায়কেরা আমার মতোই প্রেমে ব্যর্থ হতে বাধ্য হবে। হা হা হা।
আসলে নিউ নরমাল কী হবে আমরা কেউ-ই ঠিক করে জানি না। কিছু অনুমান করতে পারি। এই যা। তবে মানবজাতির সহনশীলতার ওপর আমার অগাধ আস্থা। আমরা অতি শিগগিরই ‘নিউ নরমাল’ মেনে নিয়েই আবার আমাদের জীবন সুন্দরভাবে সাজিয়ে নেব, এই বিশ্বাসে আর কামনায় সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই।