'কুসুম আফার টেয়াদি সেমাই, চাইল কিনমু'

কুসুম শিকদার। ছবি সংগৃহীত।
কুসুম শিকদার। ছবি সংগৃহীত।

‘খুবই কষ্টে আছিলাম ভাই। অনেক দিন কাজ নাই, টাকা নাই, ক্যামনে ছলিয়ের কেউ খবর নে ন। ঈদে চলমু ক্যামনে চিন্তায় আছিলাম। আইজ্জা কুসুম শিকদার আফা ফোন দিয়ে খোঁজখবর লই টাকা বিকাশ কইচ্চে। আপার টেয়াদি ঈদের সেমাই আর চাল ডাল কিনমু।’ নোয়াখালীর নিজ গ্রাম থেকে এ কথাগুলো বললেন একরাম হোসেন। তিনি শুটিং ইউনিটের প্রোডাকশন বয় হিসেবে কাজ করেন। কাজ নেই। তাই এখন গ্রামের বাড়িতেই আছেন। 


ঈদের আগে তাঁর মতো আরও ২৯টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিনেত্রী কুসুম শিকদার। ঈদের আগে তাঁরা যেন প্রয়োজনীয় বাজার সদাই কিনতে পারেন, সে জন্য এই অভিনেত্রী গতকাল ২১ মে তাঁদের সবার কাছে ঈদ উপহার হিসেবে নগদ টাকা পৌঁছে দিয়েছেন।

মিডিয়ার স্বল্প আয়ের সহকর্মীদের কাছে ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়া প্রসঙ্গে অভিনেত্রী কুসুম শিকদার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার আব্বা আম্মাকে দেখে দান করা শিখেছি। শিখেছি চারপাশের মানুষকে বিপদে সহায়তা করতে হয়। কিন্তু আমি তো সবার পাশে দাঁড়াতে পারব না। আমি যদি আমার ইন্ডাস্ট্রির, আমার কর্মক্ষেত্রের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই এবং এভাবে যদি সবাই যার যার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, চারপাশের মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে পুরো বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো হবে।’ এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘শুটিং ইউনিট আমার কাছে একটা পরিবারের মতো। এই পরিবারের অনেকেই করোনায় আজ ভালো নেই। বিশেষ করে যাঁরা স্বল্প আয়ের মানুষ। শুটিংয়ে সব সময় তাঁরা আমাদের জন্য অনেক পরিশ্রম করেন। করোনার এই কঠিন সময়ে দুই মাস ধরে শুটিং স্থগিত। তাঁদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, তাঁরা পরিবার নিয়ে ভালো নেই। তা ছাড়া সামনে ঈদ, সে জন্য চেষ্টা করেছি তাঁদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়াতে, ঈদের দিন তাঁরা যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে সেমাই-পায়েস, পোলাও-কোর্মা খেতে পারেন।’

একটি নাটকের দৃশ্যে সহায়তা পাওয়া একরাম হোসেন।
একটি নাটকের দৃশ্যে সহায়তা পাওয়া একরাম হোসেন।

কুসুম শিকদার যাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা সবাই শুটিং ইউনিটে লাইট, ক্যামেরা, মেকআপের সহকারী এবং সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। শুটিং থাকলে তাঁদের দৈনিক আয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। মূলত ঈদের আগে দুই মাস তাঁরা ভরপুর কাজ করেন। অন্য সময় মাসে ১০/১২ দিন কাজ করেই পরিবার নিয়ে চলতে হয়। শুটিং স্থগিত হওয়ায় স্বল্প আয়ের এই মানুষেরা বেকার দিন যাপন করছেন। লাইটের একজন সহকারী বলেন, ‘এই বিপদে কুসুম আপা আমারে ঈদ খরচ দিছে। খুবই খুশি হইছি। পরিবার নিয়ে যে কতটা কষ্টে ছিলাম, এটা ভাই কাউরে বোঝানো যাবে না। আপার টাকা দিয়া কালকে বাজার করব। চাল, সেমাই আর আমার ছোট মেয়ের জন্য একটা জামা কিনব। কদিন ধরে কান্নাকাটি করতে ছিল মেয়েডা।’

কুসুম শিকদার। ছবি সংগৃহীত।
কুসুম শিকদার। ছবি সংগৃহীত।

টেলিভিশন মেকআপম্যান সমিতির সভাপতি এবং ফিল্ম মেকআপম্যান সমিতির সহসভাপতি রূপসজ্জাকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কুসুম আপা এর আগেও আমাদের ছেলেদের সহায়তা করেছেন। এই দুঃসময়ে আমাদের অনেকেই মাছ-মাংস না খেতে পারলেও ভাত-ডাল-ভর্তা খেয়ে চলেছে সে অর্থে। আমরা খুবই খুশি এবার ঈদের আগে আপা খোঁজখবর নিয়ে আমাদের অনেককেই সহায়তা করলেন। আমাকেও আর্থিক সহায়তা করেছেন।’ পরে তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো নেই সত্য, কিন্তু এভাবে কত দিন, কতজনের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে চলব। নিরাপত্তা নিয়ে হলেও স্বল্প পরিসরে আমরা ঈদের পরে শুটিং করতে চাই। তাহলে হয়তো খেয়ে-পরে বাঁচতে পারব।’