সুদিনের অপেক্ষায় ঈদের ছবির তারকারা
>ঈদ মানেই তো চলচ্চিত্রশিল্প আর সিনেমা হলগুলোতে উৎসবের ব্যাপক আমেজ, জমজমাট অবস্থা। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। কারণ নিশ্চয়ই অজানা নয়—ঢালিউডে মুক্তি পাচ্ছে না নতুন কোনো সিনেমা। করোনাভাইরাসের দাপটে ঢালিউডও নিঝুম-নিরালা—সবকিছু থেমে আছে। অন্যান্য পেশাজীবীর মতো সিনেমাসংশ্লিষ্ট মানুষদেরও মন খারাপ। ঈদে যেসব সিনেমা মুক্তির কথা ছিল, সেসবের অভিনয়শিল্পীদের মনের অবস্থা কী? খোঁজ নিয়েছেন শফিক আল মামুন
১৫ বছরে এই প্রথম সিনেমাশূন্য শাকিবের ঈদ
ঈদুল ফিতরে শাকিব খানের দুটি সিনেমা মুক্তির কথা ছিল—বিদ্রোহী ও নবাব এলএলবি: ব্যাক ফর জাস্টিস। দুটিরই মুক্তি বাতিল হয়েছে। ফলে গত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম ঈদে শাকিব খানের কোনো সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না। তবে তাতে কোনো আফসোস নেই তাঁর। বললেন, ‘মানুষের জীবন আগে বাঁচুক। সিনেমা মুক্তি দিয়ে কী হবে! বিশ্ব কোথায় যাচ্ছে, কে জানে। সারা দুনিয়ায় প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না। শুধু আমার বেলায় এমনটা হলে খারাপ লাগত। পরিস্থিতি ভালো হলে উৎফুল্ল মনে সিনেমা মুক্তি দেব।’
ঈদে সিনেমা নেই, প্রচারণার ব্যস্ততা নেই, সিনেমা হলে ঘুরে ঘুরে দর্শকের প্রতিক্রিয়া শোনার অপেক্ষা কিংবা চাপও নেই। বহু বছর পর এমন ঈদ আসতে যাচ্ছে শাকিবের জীবনে। এবারের ঈদ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা কী? শাকিব বলেন, ‘ঈদের দিন ছেলে আব্রামের সঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছা আছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ঘরে বসেই ঈদ কাটাতে হবে। কিছু তো করার নেই।’
হ্যাটট্রিক করার কথা ছিল সিয়ামের
সিনেমায় সিয়াম আহমেদের অভিষেক পোড়ামন ২ দিয়ে। ২০১৮ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় সিনেমাটি। এবারের ঈদে সিয়ামের শান মুক্তির কথা ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে আপাতত মুক্তি পাচ্ছে না। ঢালিউড ক্যারিয়ারের তৃতীয় বছরে এসে এমন পরিস্থিতি নিয়ে সিয়াম বললেন, ‘সবাই চায়, নিজের অভিনীত সিনেমা ঈদের মতো বড় উৎসবে মুক্তি পাক। ভাগ্যে না থাকলে তো আর হবে না। তবে শান যে ঈদে মুক্তি পাচ্ছে না, এ নিয়ে খারাপ লাগা কম। এমনও তো হতে পারে, ঈদের পরে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শান মুক্তি পেলে আরও ভালো কিছু বয়ে আনবে। এই সিনেমার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছি। শুটিংয়ের সময় থেকেই সিনেমাটা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তাতে দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছি। দর্শক যে ছবিটি দেখার অপেক্ষায় আছে, তার প্রমাণ পেয়েছি ফেসবুকে সিনেমাটির একটি পোস্টার প্রকাশের পরই।’
আসছে শুভর ঈদ উপহার
ঈদুল ফিতরে আরিফিন শুভর মিশন এক্সট্রিম সিনেমার প্রথম পর্ব মুক্তির কথা ছিল। মুক্তি বাতিল হওয়ায় খানিকটা কষ্ট পেয়েছেন শুভ। বললেন, ‘আমার কপালটাই মনে হয় একটু খারাপ। ভালো কিছু প্রত্যাশা করে যে কাজ করি, তাতে প্রায়ই কোনো না কোনো ধরনের বাধা আসে।’
তবে পুরো বিশ্বের বিনোদন খাতের অবস্থা তো একই। তাই এই কষ্ট মেনে নিয়ে পৃথিবীর সেরে ওঠার প্রত্যাশা করছেন শুভ, ‘শুধু যদি বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলে কষ্ট রয়েই যেত। সারা দুনিয়াতেই প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না। তবে আফসোস হলো হলিউড, বলিউডে কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিনেমা মুক্তি অব্যাহত আছে। এদিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।’
ঈদে সিনেমা মুক্তির মধ্য দিয়ে উৎসব উদ্যাপন করতে না পারলেও উৎসব ম্লান হতে দিতে চান না শুভ। বলেন, ‘করোনার কারণে ঈদটা মলিন করে রাখতে চাই না। ঈদে সিনেমা মুক্তি পাবে না, কিন্তু দর্শকের জন্য একটা উপহার তৈরি করেছি।’ শুভর সেই উপহারটি হলো তাঁর গাওয়া একটি মৌলিক গান। তিনি বলেন, ‘আমি তো গানের মানুষ নই। আগে এভাবে কোনো দিন দর্শকের সামনে আসিনি। বাসাতেই গানের ভিডিও করেছি। শুটিং করার পর মনে হলো কাজটি ভালোই হয়েছে।’ গানের শিরোনাম ‘মনটা বোঝে না’। লিখেছেন কে জিয়া। সুর করছেন ফুয়াদ আল মুক্তাদির ও কে জিয়া। শুভ জানান, বছর দেড়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রে বসে গানটি তৈরি করা হয়েছে। এখন গানের ভিডিওর সম্পাদনার কাজ চলছে। শিগগিরই শুভ এটি তাঁর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করবেন।
আটকে গেছে পূজার দুটি সিনেমা
শান সিনেমার নায়িকা পূজা চেরির ভাষায়, ‘আগে জীবন, তারপর সিনেমা। পরিস্থিতি ভালো হলে দ্বিগুণ আনন্দ নিয়ে সিনেমার মুক্তি উদ্যাপন করব।’
সিয়ামের মতো পূজারও অনেক প্রত্যাশা ছিল এই সিনেমা ঘিরে। পূজা বলেন, ‘ঈদ উৎসবে মুক্তি পেলে শান দারুণ সাড়া ফেলত। সাফল্যের দিক থেকে আমার সিনেমা পোড়ামন ২-কেও ছাড়িয়ে যেতে পারত বলে বিশ্বাস করি।’
করোনাভাইরাসের কারণে পূজা চেরির আটকে যাওয়া দ্বিতীয় ছবির নাম জ্বিন। এর আগেও বেশ কবার পিছিয়েছিল এই সিনেমার মুক্তির তারিখ। করোনার কারণে আবারও পেছাল। পূজা বলেন, ‘জ্বিন একটি ভৌতিক সিনেমা। এর বেশ কিছু পোস্টার এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম পোস্টার প্রকাশের পর থেকেই সিনেমাটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ দেখেছি। বারবার পিছিয়ে গেলে এই আগ্রহ কত দিন থাকবে জানি না।’
ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন মাহি
মাহিয়া মাহির সর্বশেষ ঈদের সিনেমা ছিল জান্নাত। মুক্তি পায় ২০১৮ সালের ঈদুল আজহায়। ২০১৯ সালের কোনো ঈদেই ছিল না মাহির নতুন কোনো সিনেমা। এক বছরের বিরতি শেষে এবার মন দেব মন নেব সিনেমা দিয়ে উৎসবমুখর প্রেক্ষাগৃহে ফিরতে চেয়েছিলেন তিনি। আপাতত তা আর হচ্ছে না। মাহি বলেন, ‘মহামারির এই সময়ে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখার পরিবেশ ও মানসিকতা কারোরই নেই। তাই সিনেমার মুক্তি আটকে যাওয়ায় দুঃখ নেই; বরং ভালো সময়ের অপেক্ষা করাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’
মাহিয়া মাহির আরও তিনটি সিনেমার কাজ করোনাভাইরাসের কারণে আটকে আছে। ছবিগুলো হলো স্বপ্নবাজি, নবাব এলএলবি: ব্যাক ফর জাস্টিস ও ব্লাড। মাহি বলেন, ‘ভালো কাজের জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম। একসঙ্গে বেশ কয়েকটি কাজ শুরুও করেছিলাম। সবই আটকে গেল। স্বাভাবিক অবস্থায় কবে ফিরব, কবে কাজ শুরু করব—সবই এখন অনিশ্চিত।’