মুখোশহীন চিন্টু : দীপ্তি নাভাল
আমাদের বন্ধুত্বের বয়স ৩৫ বছর। তা ছিল অমলিন। ইয়ে ইশক্ নেহি আসান, আওরঙ্গজেব, টেল মি ও খুদা—হাতে গোনা এই কয়েকটি সিনেমা ঋষি কাপুরের সঙ্গে করেছি। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব ছিল গাঢ়। আমিও ওকে চিন্টু বলে ডাকতাম। তবে চিন্টুর আগে ওর বাবা রাজ কাপুরের সঙ্গে আমার ভালো পরিচয় ছিল। আসলে আমার মা-বাবার সঙ্গে রাজ আঙ্কেলের (রাজ কাপুর) ঘনিষ্ঠতা ছিল। চিন্টুর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ইয়ে ইশক্ নেহি আসান সিনেমার সেটে। তখন ও রীতিমতো তারকা। আমি সবে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি। এই সেট থেকেই আমাদের বন্ধুত্বের জন্ম। চিন্টুর মধ্যে তারকাসুলভ কোনো ব্যাপার ছিল না। তবে অভিনেতা হিসেবে অত্যন্ত পেশাদার ছিল ও। চরিত্রের সঙ্গে চিন্টু অনায়াসে এক হয়ে যেতে পারত। অখ্যাত বা নতুন অভিনেতাকে কখনো এতটুকু অসম্মান করত না। সেটে চিন্টু সব সময় এনার্জিটিক থাকত। ওর স্মরণশক্তি ছিল প্রখর। চিন্টু যে অসুস্থ তা জানতাম। কিন্তু ওর চলে যাওয়াটা মানতে পারছি না। মনে হয়েছিল, এটা একটা গুজব হলে ভালো হতো। চিন্টু মারা যাওয়ার আগের দিন আমার এক কাছের মানুষ ইরফান (খান) চলে গেল। মাড আইল্যান্ডে ইরফান আমার প্রতিবেশী ছিল। তাই ইরফানের শোকের মধ্যে চিন্টুর চলে যাওয়া আরেকটা বড় ধাক্কা।
চিন্টু ছিল প্রকৃত বন্ধু। বন্ধুদের জন্য ও অনেক কিছুই করেছে। এই মুহূর্তে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। আমাদের অভিনেতা বন্ধু রাজ কিরণের অনেক দিন কোনো খবর পাচ্ছিলাম না। চিন্টুর সঙ্গে রাজ কিরণ কর্জ সিনেমায় কাজ করেছে। চিন্টুকে রাজ কিরণের বিষয়ে বলামাত্র ও সব শক্তি দিয়ে ওকে খুঁজতে শুরু করে দেয়। খুঁজতে খুঁজতে চিন্টু যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত গিয়েছিল! আসলে ওর মতো বিশাল মনের মানুষ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে বিরল। মুখ ছিল, কিন্তু মুখোশ ছিল না চিন্টুর। সাদাকে সাদা, আর কালোকে কালো বলতেই ও ভালোবাসত। কাউকে অপছন্দ হলে সেটাও মুখের ওপর বলতে এতটুকু গলা কাঁপত না ওর। এ নিয়ে অনেকে ওকে ভুল বুঝত।
অমিতাভ আর জয়ার বাড়ির দেওয়ালির পার্টিতে চিন্টুর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। তখন ও ক্যানসারের চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছে। আমি ওর শরীরের কথা জিজ্ঞেস করি। জবাবে ও সেই চিরাচরিত হাসি হেসে বলে, ‘আমায় কেমন দেখছিস?’ সত্যি বলতে সেদিন ওকে বেশ ঝরঝরে এবং সুস্থ লাগছিল। আমরা সে রাতে পুরোনো গল্পের খাতা খুলে বসেছিলাম। আর কোনো ঝলমলে রাতে বা কোনো অলস আড্ডায় পাব না আমার প্রিয় বন্ধুটিকে। বিদায় বন্ধু।
অনুলিখন: দেবারতি ভট্টাচার্য