২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সম্মানী দিলেও স্বীকৃতি দিলেন না বাদশা!

গীতিকবি রতন কাহার, বলিউড তারকা জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ ও সংগীত পরিচালক বলিউড তারকা বাদশা। ছবি: সংগৃহীত
গীতিকবি রতন কাহার, বলিউড তারকা জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ ও সংগীত পরিচালক বলিউড তারকা বাদশা। ছবি: সংগৃহীত

সমালোচনা ও চাপের মুখে পড়ে বলিউড র‌্যাপার বাদশা তাঁর সদ্য প্রকাশিত হওয়া ‘গেন্দা ফুল’ গানের গীতিকার রতন কাহারকে সম্মানী হিসেবে পাঁচ লাখ রুপি সম্মানী পাঠিয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বীরভূম শাখায় রতন কাহারের অ্যাকাউন্টে সম্মানীর এই অর্থ জমা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বীরভূমের সিউড়ির বাড়ি থেকে প্রথম আলোকে সম্মানীর অর্থ জমা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন রতন কাহার।

শুরু থেকে গানটিতে গীতিকার হিসেবে নিজের নামটি না দেখায় ভীষণ কষ্ট পান গীতিকবি রতন কাহার। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে এ নিয়ে নিজের কষ্টে অনুভূতির কথাও বলেন তিনি। সনি মিউজিকের ব্যানারে বলিউড র‌্যাপার বাদশার সংগীতায়োজনে রতন কাহারের লেখা ‘বড় লোকের বিটি লো’ গানটি নতুন করে ‘গেন্দা ফুল’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি জানতেনই না এই গানের গীতিকবি। হঠাৎ করে দেখলেন, টেলিভিশনে গেন্দা ফুল গানটি বাজছে। একটু অবাক হন এই ভেবে যে কীভাবে কী হয়ে গেল। এদিকে রতন কাহারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ রুপির চেক জমা হলেও সনি মিউজিক ইন্ডিয়ার ইউটিউবে গানটির ক্রেডিট লাইনে গীতিকারের জায়গায় এখনো লেখা আছে ‘বেঙ্গলি ফোক’!

যোগাযোগ করা হলে সম্মানীর অর্থ পেয়ে খুশি রতন কাহার প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমি সম্মানী পেয়েছি। গতকাল আমার অ্যাকাউন্টে জমাও হয়েছে। আমি অবশ্য ভাবতে পারিনি, এত দ্রুত সম্মানী পাব! খুব খুশি হয়েছি। এর আগে তো এভাবে কেউ হেল্প করে নাই। কেউ এত সম্মান দেয় নাই।’

সম্মানীর অর্থ পেয়ে খুশি হলেও স্বীকৃতি না পাওয়ার বিষয়টি জানতে পেয়ে সেই কষ্টটা আবারও পেয়েছেন বলে জানালেন রতন কাহার। বললেন, ‘নাম না দেওয়ার বিষয়টা তো জানতাম না! এমনটা যদি এখনো হয়ে থাকে, তা মোটেও ঠিক করেনি। আমি তো আসলে স্বীকৃতিটাই বেশি চেয়েছি। এক সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে তো স্বীকৃতিটাই সবার আগে আমার চাই। আমি চাইছি, এই জটিলতার সমাধান দ্রুত হোক।’

কথায় কথায় রতন কাহার জানালেন, তাঁর সঙ্গে এরই মধ্যে ফোনে কথা বলেছেন র‌্যাপার বাদশা। কী কথা হয়েছিল জানতে চাইলে বললেন, ‘দু-চার দিন আগে তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তিনি আমার বাড়িতে আসবেন বলেছেন। সামনাসামনি কথা হবে।’

সনি মিউজিক ইন্ডিয়ার ইউটিউবে ‘গেন্দা ফুল’ গানটির ক্রেডিট লাইনে গীতিকারের জায়গায় এখনো লেখা আছে ‘বেঙ্গলি ফোক’।
সনি মিউজিক ইন্ডিয়ার ইউটিউবে ‘গেন্দা ফুল’ গানটির ক্রেডিট লাইনে গীতিকারের জায়গায় এখনো লেখা আছে ‘বেঙ্গলি ফোক’।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর মতো ভারতও লকডাউন। গানটি প্রকাশের পর সমালোচনার মুখে পড়ে বাদশা কথা দিয়েছিলেন লকডাউন শেষ হলেই বীরভূমের সিউড়ি যাবেন। বলেছিলেন অর্থসাহায্যও করবেন। কিন্তু লকডাউন শেষ হওয়ার আগেই সম্মানীর অর্থ জমা হয়ে গেল রতন কাহারের অ্যাকাউন্টে। মুক্তির পর থেকেই আলোচিত র‌্যাপার বাদশার গেন্দা ফুল। একই সঙ্গে সমালোচনার শিকার হতে হয় বাদশাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানটি বাংলার শিল্পী রতন কাহারের সৃষ্টি। অথচ তাঁর নাম উল্লেখ নেই কোথাও। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে ৩১ মার্চ গেন্দা ফুল গান এবং রতন কাহার প্রসঙ্গে মুখ খুলতে বাধ্য হন বাদশা। তখন বাদশা জানান, এই গান যে রতন কাহারের লেখা, সেটা তিনি জানতেন না। এর আগে বহুবার এই গান তিনি শুনেছেন এবং ইউটিউবে এই গানের বহু রিমেকও রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই শুধু উল্লেখ রয়েছে, এটি ‘বাংলার লোকগীতি’।

রতন কাহার জানান, গানটি তিনি ৪৮ বছর আগে তৈরি করেন। তৈরির পর তিনি নিজেই গানটি আকাশবাণীতে গেয়েছিলেন। সে সময় গানটি অবশ্য জনপ্রিয়তা পায়নি বলেও জানান রতন কাহার। সেই সময়টার কথা মনে করে বললেন, ‘আমার মামার একটি গানের দল ছিল, সেখানে এই গান সবাই মিলে গাইতাম। তখন স্বপ্না চক্রবর্তী নামের একজন গানটি লিখে নেন। আর ১৯৭৬ সালের দিকে প্রথমবারে মতো তিনি বড় লোকের বিটি লো গানটি রেকর্ড করলে ছড়িয়ে যায় সবার মুখে মুখে। সেদিনই আমি এই গান নিয়ে দুঃখ পাই। কারণ, গানে গীতিকার হিসেবে আমার নাম উল্লেখ না করে ‘প্রচলিত গান’ লেখা হয়! আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। তখন প্রতিবাদ করেছিলাম, কারণ দৌড়ানোর মতো সময় ছিল। রেকর্ডিং যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের কাছে গিয়েছিলাম। তখন আমার কথা তাঁরা আমলে নেননি। আমাকে বলেছিল, যেন ‘প্রচলিত গান’ বিষয়টি মেনে নিই। ওটাই ছিল বড় লোকের বিটি লো নিয়ে প্রথম কষ্ট পাওয়া।’

সনি মিউজিক ইন্ডিয়ার ইউটিউবে ২৬ মার্চ গেন্দা ফুল গানটি প্রকাশিত হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত গানটির ইউটিউব ভিউ হয়েছে ১৩ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার ৬৮০। এই সময় পর্যন্ত গানটির ক্রেডিট লাইনে গীতিকারের লেখা আছে বেঙ্গলি ফোক।